ইরানের হামলা ঠেকাতে ৩৮ গুণের বেশি ব্যয় ইসরায়েলের
- আপডেট সময় : ০৪:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
- / 87
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইরানের ছোড়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশই ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। আর এ হামলা চালাতে ইরানের যে ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে ঠেকাতে ইসরায়েলের খরচ হয়েছে ৩৮ গুণের বেশি।
ইরানি ড্রোন এবং মিসাইল হামলা ঠেকাতে ৫ বিলিয়ন শেকেলস (ইসরায়েলি মুদ্রা) খরচ করেছে ইসরায়েল। ডলারের মূল্যমানে যা ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়াদিওজ অরওনাজের বরাতে এই খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম টিআরটি।
দ্য ক্রাডলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইসরায়েলি জোটের হিসাব ছাড়াই ইসরায়েলের খরচ হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। অপরদিকে ইরানের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলে হামলায় ব্যবহৃত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা তেল আবিবের ব্যয়ের মাত্র দুই দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ৩৮ দশমিক ৫৭ গুণেরও বেশি খরচ হয়েছে ইসরায়েলের।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ওপর হামলায় ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ক্রুস মিসাইল এবং ১১০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।
তবে ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ইরানি একটি শাহেদ ড্রোনের মূল্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, একটি ক্রুস মিসাইলের দাম ৬৫ লাখ ডলার এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের দাম ৩০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে হামলা চালাতে ইরান ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের ড্রোন, ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্রুস মিসাইল এবং ৩৩ কোটি ডলারের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যয় করেছে। অর্থাৎ, পুরো হামলা চালাতে ইরানের খরচ হয়েছে ৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যদিও ইসরায়েলে হামলায় ইরান কোন ড্রোন ব্যবহার করেছে এবং কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তা স্পষ্ট নয়। ফলে ইসরায়েলে হামলায় ইরানের ব্যয়ের হিসাবে তারতম্য হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল রাম আমিনাকের বরাত দিয়ে দেশটির দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনথ জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকাতে এক রাতেই ইসরায়েলের খরচ হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা)।
তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা আমিনাকের মতে, ইরানের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) বা ১ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় নেতানিয়াহু সরকারের।
আমিনাক বলেন, ‘আমি কেবল ইরানের হামলা মোকাবিলার হিসাব বলছি। হামলায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বলছি না।’
ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সাবেক এই আর্থিক উপদেষ্টা জানান, ইরানের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিটির দাম ৩৫ লাখ ডলার। ‘ম্যাজিক ওয়ান্ড’ নামে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রও সে রাতে ব্যবহার করা হয়। যার প্রতিটির দাম ১০ লাখ ডলার।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হাগারি বলেন, ‘ইরানের ছোড়া ৩০টির মধ্যে ২৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়। ১২০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র একইভাবে আটকানো হয়।’
কেবল দুই দেশের সামরিক বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বলা যায়, ইরানের ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েল ব্যয় করেছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ইরানের হামলা ঠেকাতে ৩৮ দশমিক ৫ গুণ বেশি খরচ করেছে ইসরায়েল।
নিউজটি শেয়ার করুন