ঢাকা ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

রাখাইনে বাড়ছে সংঘাত, ফের বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন রোহিঙ্গারা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • / 59
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে জান্তা বাহিনী ও জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে দিন সংঘাত ঘনীভূত হতে থাকায় ফের বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজন। ইতোমধ্যে ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সংঘাতের আঁচ থেকে বাঁচতে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি যারা এখনও রাখাইনে রয়েছেন, মানবিক সহায়তার অভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি পার করছেন তারা।

কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী রাখাইনের বুথিডং শহরের দখল ইতোমধ্যে নিয়ে ফেলেছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের এএ’র যোদ্ধাদলে যোদ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে। তবে আরাকান আর্মি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, জান্তা মুখপাত্ররাও এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

আরাকান আর্মি এখন রাখাইনের অপর সীমান্ত শহর মংডুর দখল নেওয়ার পথে এগোচ্ছে। মংডু এবং তার আশপাশের গ্রামগুলোতেও প্রচুর রোহিঙ্গার বসবাস এবং রাখাইনের এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে জান্তা বাহিনীও ব্যাপক চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে মংডু এবং তার সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সংঘর্ষ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের এক মুখপাত্র এ প্রসঙ্গ রয়টার্সকে বলেন, ‘মংডুতে সেনা বাহিনীর বেশ কয়েকটি ছাউনি রয়েছে এবং এই শহর ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের একটি বড় কমিউনিটি বসবাস করে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা এই শহরটিতে জান্তা-বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরিষ্কার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।’

এর আগে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তাদেরই একজন মোহাম্মদ তাহের রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মংডুতে তার কিছু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তাহেরের এবং তাহেরের বন্ধু-স্বজনরা জানিয়েছেন, বেশ আতঙ্কের সঙ্গে বসবাস করছেন তারা।

‘তারা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চান, কিন্তু এটাও জানেন যে এখানে আর রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খোলা হবে না,’ রয়টার্সকে বলেন তাহের।

রাখাইনে গত নভেম্বর থেকে সংঘাত শুরু হয়েছে আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে। কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা মর্গান মিশেলস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের মধ্যে গত কয়েক মাসের সংঘাতে উভয়পক্ষই ব্যাপক জনবল হারিয়েছে। তাই এই ক্ষতিপূরণে উভয়পক্ষই এখন তৎপর হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে ভেড়াতে ।

এই চাপ থেকে বাঁচতে তাই বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তরের বরাত দিয়ে মর্গান মিশেলস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংঘাতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৩ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। যারা এখনও আছেন, তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সূত্র : রয়টার্স

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

রাখাইনে বাড়ছে সংঘাত, ফের বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন রোহিঙ্গারা

আপডেট সময় : ১২:০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

 

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে জান্তা বাহিনী ও জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে দিন সংঘাত ঘনীভূত হতে থাকায় ফের বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজন। ইতোমধ্যে ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সংঘাতের আঁচ থেকে বাঁচতে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি যারা এখনও রাখাইনে রয়েছেন, মানবিক সহায়তার অভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি পার করছেন তারা।

কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী রাখাইনের বুথিডং শহরের দখল ইতোমধ্যে নিয়ে ফেলেছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের এএ’র যোদ্ধাদলে যোদ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে। তবে আরাকান আর্মি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, জান্তা মুখপাত্ররাও এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

আরাকান আর্মি এখন রাখাইনের অপর সীমান্ত শহর মংডুর দখল নেওয়ার পথে এগোচ্ছে। মংডু এবং তার আশপাশের গ্রামগুলোতেও প্রচুর রোহিঙ্গার বসবাস এবং রাখাইনের এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে জান্তা বাহিনীও ব্যাপক চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে মংডু এবং তার সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সংঘর্ষ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের এক মুখপাত্র এ প্রসঙ্গ রয়টার্সকে বলেন, ‘মংডুতে সেনা বাহিনীর বেশ কয়েকটি ছাউনি রয়েছে এবং এই শহর ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের একটি বড় কমিউনিটি বসবাস করে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা এই শহরটিতে জান্তা-বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরিষ্কার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।’

এর আগে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তাদেরই একজন মোহাম্মদ তাহের রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মংডুতে তার কিছু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তাহেরের এবং তাহেরের বন্ধু-স্বজনরা জানিয়েছেন, বেশ আতঙ্কের সঙ্গে বসবাস করছেন তারা।

‘তারা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চান, কিন্তু এটাও জানেন যে এখানে আর রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খোলা হবে না,’ রয়টার্সকে বলেন তাহের।

রাখাইনে গত নভেম্বর থেকে সংঘাত শুরু হয়েছে আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে। কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা মর্গান মিশেলস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের মধ্যে গত কয়েক মাসের সংঘাতে উভয়পক্ষই ব্যাপক জনবল হারিয়েছে। তাই এই ক্ষতিপূরণে উভয়পক্ষই এখন তৎপর হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে ভেড়াতে ।

এই চাপ থেকে বাঁচতে তাই বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তরের বরাত দিয়ে মর্গান মিশেলস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংঘাতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৩ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। যারা এখনও আছেন, তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সূত্র : রয়টার্স