ঢাকা ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বিশ্বকাপ নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানালেন লিওনেল মেসি Logo তিন মাসে মানসিক চাপ কমানোর কার্যকর গাইডলাইন: বিশেষজ্ঞের পরামর্শ Logo বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব Logo পরকীয়ার জেরে স্বামীকে তালাক, প্রেমিকের বাড়িতে অনশন Logo ঈশ্বরগঞ্জে এসএসসি কেন্দ্রে অনিয়ম: কেন্দ্র সচিবসহ ৪ জনকে অব্যাহতি Logo চীনা পণ্যে ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের Logo জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থায়ন বন্ধের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের Logo ২০২৮ অলিম্পিকে ক্রিকেট ভেন্যু চূড়ান্ত Logo জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবে ইসি Logo ইতিহাস গড়ল কেটি পেরি ও পাঁচ নারী, সফল ‘অল-ফিমেল’ মহাকাশযাত্রা

বিদ্যুতের দাম বাড়ল আরও ৫ শতাংশ, সমন্বয়ের অভাবে ডিমান্ড চার্জের খড়্গ সব গ্রাহকের কাঁধে!

এসি চালাবে বড় লোক, চার্জ দেবে গরিব!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫৬:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪
  • / 178
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শিগগিরই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে চলেছে সরকার। ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ, যার ঘোষণা আসতে পারে যেকোনো সময়। গত বছর তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিদ্যুতের ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রির মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। এবছরও বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতে পারে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির গ্রাহক মো. শাহজাহান বসবাস করেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায়। প্রি-পেইড মিটারের সেবা নেওয়া এ গ্রাহক গতমাসে বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জ দিয়েছেন ২০০ টাকা। তিনি বলেন, এমনিতে প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে আবার এসব অতিরিক্ত খরচ আমাদের জন্য বাড়তি বোঝা।

মগবাজারে বসবাস করেন ব্যবসায়ী স্বপন আহমেদ। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক তিনি। বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জের খড়্গ এসে পড়ায় ক্ষুব্ধ তিনি। বলেন, বিলের পাশাপাশি সরকারি ভ্যাট বা ট্যাক্সের বিষয়টি মানা যায়। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ নামক খরচটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একরকম জুলুম।

ডিমান্ড চার্জ মূলত বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা বা চুক্তিবদ্ধ লোডের নির্ধারিত চার্জ। ডিমান্ড চার্জের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মালামাল, অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আদায় করে।

ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের মিটারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে। এই চুক্তিবদ্ধ লোড নির্ধারণের সময় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী সব ধরনের গ্রাহকের (প্রিপেইড-পোস্টপেইড) ক্ষেত্রেই ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য। ২০১৭ সাল থেকে এটি কার্যকর হয়।

• ইউনিট চার্জ ও ভ্যাট
ডিমান্ড চার্জ ছাড়া সাধারণত বিদ্যুৎ বিলে দুটো চার্জ থাকে। একটি হলো ইউনিট চার্জ, অন্যটি ভ্যাট। ইউনিট চার্জ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণের ওপর নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর ভ্যাট সরকারের নির্ধারিত হারে প্রযোজ্য হয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী সব ধরনের গ্রাহকের (প্রিপেইড-পোস্টপেইড) ক্ষেত্রেই ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য, যা ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর করা হয়।

• ডিমান্ড চার্জে স্বচ্ছতা নেই
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা যেন সাশ্রয়ী হয় সেজন্য ডিমান্ড চার্জের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাদের বিল বেশি আসবে। যেমন কেউ কেউ একাধিক এসি ব্যবহার করেন, অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করেন তারা বিল বেশি দেবেন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের স্বচ্ছতা নিয়ে এবং সব ধরনের গ্রাহকের জন্য, বিশেষ করে যারা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রেও ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা নিয়ে। এটা অনেকটা ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেছেন।

এছাড়া ডিমান্ড চার্জের পরিমাণও বেড়ে গেছে। সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য গড়ে সাড়ে আট শতাংশ বাড়লেও ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিতরণ সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা, যা মূল্য সমন্বয়ের পূর্বে ছিল ৩৫ টাকা। প্রায় ২০ শতাংশ ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধির ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমান্ড চার্জের যৌক্তিকতা নেই। গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে লোড নির্ধারণ করলে বাকি সব গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জের বোঝা বইতে হবে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন জানান, যেসব গ্রাহক চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাদের বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য ডিমান্ড চার্জ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, নির্দিষ্ট গ্রাহকের কারণে অন্য গ্রাহকদেরও, যারা অতিরিক্ত কিলোওয়াট চাননি বা যারা এসির মতো যন্ত্র ব্যবহার করেন না, তাদেরও ডিমান্ড চার্জটা দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর সমাধান হতে পারে, যারা অতিরিক্ত ডিমান্ড দেননি বা চাহিদা নেই তাদের ক্ষেত্রে এই চার্জ প্রত্যাহার করে নেওয়া। এক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানিকে একটা সমন্বয়ের আওতায় আসতে হবে। যদি কেউ চাহিদার অতিরিক্ত কিলোওয়াট ব্যবহার করেন তার ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জটা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুতের ট্যারিফ বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে খরচ বেড়েছে। ফলে বিলের সঙ্গে ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গেই ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে। গ্রাহক যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন সে অনুযায়ী ডিমান্ড চার্জ আসবে। গ্রাহক যদি সাশ্রয়ী হন তাহলে চার্জের পরিমাণও কমে আসবে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের (বিতরণ কোম্পানির) অবকাঠামোগত ব্যয় বেড়েছে। তাই ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

বিদ্যুতের দাম বাড়ল আরও ৫ শতাংশ, সমন্বয়ের অভাবে ডিমান্ড চার্জের খড়্গ সব গ্রাহকের কাঁধে!

এসি চালাবে বড় লোক, চার্জ দেবে গরিব!

আপডেট সময় : ১১:৫৬:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

শিগগিরই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে চলেছে সরকার। ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ, যার ঘোষণা আসতে পারে যেকোনো সময়। গত বছর তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিদ্যুতের ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রির মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। এবছরও বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতে পারে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির গ্রাহক মো. শাহজাহান বসবাস করেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায়। প্রি-পেইড মিটারের সেবা নেওয়া এ গ্রাহক গতমাসে বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জ দিয়েছেন ২০০ টাকা। তিনি বলেন, এমনিতে প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে আবার এসব অতিরিক্ত খরচ আমাদের জন্য বাড়তি বোঝা।

মগবাজারে বসবাস করেন ব্যবসায়ী স্বপন আহমেদ। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক তিনি। বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জের খড়্গ এসে পড়ায় ক্ষুব্ধ তিনি। বলেন, বিলের পাশাপাশি সরকারি ভ্যাট বা ট্যাক্সের বিষয়টি মানা যায়। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ নামক খরচটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একরকম জুলুম।

ডিমান্ড চার্জ মূলত বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা বা চুক্তিবদ্ধ লোডের নির্ধারিত চার্জ। ডিমান্ড চার্জের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মালামাল, অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আদায় করে।

ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের মিটারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে। এই চুক্তিবদ্ধ লোড নির্ধারণের সময় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী সব ধরনের গ্রাহকের (প্রিপেইড-পোস্টপেইড) ক্ষেত্রেই ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য। ২০১৭ সাল থেকে এটি কার্যকর হয়।

• ইউনিট চার্জ ও ভ্যাট
ডিমান্ড চার্জ ছাড়া সাধারণত বিদ্যুৎ বিলে দুটো চার্জ থাকে। একটি হলো ইউনিট চার্জ, অন্যটি ভ্যাট। ইউনিট চার্জ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণের ওপর নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর ভ্যাট সরকারের নির্ধারিত হারে প্রযোজ্য হয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী সব ধরনের গ্রাহকের (প্রিপেইড-পোস্টপেইড) ক্ষেত্রেই ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য, যা ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর করা হয়।

• ডিমান্ড চার্জে স্বচ্ছতা নেই
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা যেন সাশ্রয়ী হয় সেজন্য ডিমান্ড চার্জের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাদের বিল বেশি আসবে। যেমন কেউ কেউ একাধিক এসি ব্যবহার করেন, অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করেন তারা বিল বেশি দেবেন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের স্বচ্ছতা নিয়ে এবং সব ধরনের গ্রাহকের জন্য, বিশেষ করে যারা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রেও ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা নিয়ে। এটা অনেকটা ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেছেন।

এছাড়া ডিমান্ড চার্জের পরিমাণও বেড়ে গেছে। সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য গড়ে সাড়ে আট শতাংশ বাড়লেও ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিতরণ সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা, যা মূল্য সমন্বয়ের পূর্বে ছিল ৩৫ টাকা। প্রায় ২০ শতাংশ ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধির ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমান্ড চার্জের যৌক্তিকতা নেই। গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে লোড নির্ধারণ করলে বাকি সব গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জের বোঝা বইতে হবে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন জানান, যেসব গ্রাহক চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাদের বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য ডিমান্ড চার্জ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, নির্দিষ্ট গ্রাহকের কারণে অন্য গ্রাহকদেরও, যারা অতিরিক্ত কিলোওয়াট চাননি বা যারা এসির মতো যন্ত্র ব্যবহার করেন না, তাদেরও ডিমান্ড চার্জটা দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর সমাধান হতে পারে, যারা অতিরিক্ত ডিমান্ড দেননি বা চাহিদা নেই তাদের ক্ষেত্রে এই চার্জ প্রত্যাহার করে নেওয়া। এক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানিকে একটা সমন্বয়ের আওতায় আসতে হবে। যদি কেউ চাহিদার অতিরিক্ত কিলোওয়াট ব্যবহার করেন তার ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জটা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুতের ট্যারিফ বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে খরচ বেড়েছে। ফলে বিলের সঙ্গে ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গেই ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে। গ্রাহক যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন সে অনুযায়ী ডিমান্ড চার্জ আসবে। গ্রাহক যদি সাশ্রয়ী হন তাহলে চার্জের পরিমাণও কমে আসবে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের (বিতরণ কোম্পানির) অবকাঠামোগত ব্যয় বেড়েছে। তাই ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।