ঢাকা ১১:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোন পথে ইউআইইউ’র সংকট সমাধান?

ডেইলি আর্থ অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / 5

কোন পথে ইউআইইউ’র সংকট সমাধান?

ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্যসহ ১১ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।

 

ঘটনার শুরু
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক শিক্ষার্থী তার বাবার মৃত্যুর কারণে মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরে পরীক্ষায় বসার অনুরোধ জানালে, বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল হুদা তাকে বাবার মৃত্যুসনদ আনতে বলেন, এমনকি সেই সনদ সত্যায়িত করে আনারও নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন, যা দ্রুত আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেন এবং সময়সীমা বেঁধে দেন। প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া না পেয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাসেম মিয়া ও অন্যান্য শিক্ষকদেরও পদত্যাগের দাবি তোলেন।

 

একযোগে পদত্যাগ
২৬ এপ্রিল রাতে উপাচার্যসহ ১১ শিক্ষক প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগকারী শিক্ষকদের মধ্যে ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক এম রিজওয়ান খান, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন অধ্যাপক হাসান সারওয়ার, এবং বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা রয়েছেন।

ফেসবুকে এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘অযৌক্তিক’ দাবির প্রতিবাদে তারা পদত্যাগ করেছেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
২৭ এপ্রিল রাতে ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। রেজিস্ট্রার ড. মো. জুলফিকার রহমান এক নোটিশে বলেন, “কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।”

 

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশনায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ট্রাস্টি বোর্ড জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং শিক্ষার মান বজায় রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

শিক্ষার্থীদের দাবি
শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানিয়েছে:

১. অধ্যাপক নুরুল হুদার পদত্যাগ নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
২. মিডটার্ম পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের নিয়মে ফিরিয়ে আনা।
৩. পূর্বে স্বীকৃত ইউআইইউ রিফর্ম ১.০-এর সব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন, বিশেষ করে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার ফি নির্ধারণে সমন্বয় আনা।

তাদের বক্তব্য, এই আন্দোলন শুধু একক ঘটনার প্রতিবাদ নয়, বরং দীর্ঘদিনের একাডেমিক অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই উত্তেজনা বাড়ে। তবে শিক্ষার্থীদের কিছু ‘অপমানজনক আচরণ’ এবং ‘অশোভন স্লোগান’ের প্রতিবাদেই শিক্ষকরা পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বলেন, “ছাত্ররা যৌক্তিক দাবি তুলতে পারে, কিন্তু শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান অগ্রহণযোগ্য।”

পদত্যাগী উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাসেম মিয়া বলেন, “শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবি তুলতে পারে, তবে আচরণের যে অবনতি দেখেছি, তা কল্পনার বাইরে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক এফ এ সোবহানী মনে করেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দ্রুত সমাধান প্রয়োজন, তবে আন্দোলনে শৃঙ্খলা রক্ষা করা জরুরি।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কোন পথে ইউআইইউ’র সংকট সমাধান?

আপডেট সময় : ১১:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্যসহ ১১ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।

 

ঘটনার শুরু
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক শিক্ষার্থী তার বাবার মৃত্যুর কারণে মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরে পরীক্ষায় বসার অনুরোধ জানালে, বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল হুদা তাকে বাবার মৃত্যুসনদ আনতে বলেন, এমনকি সেই সনদ সত্যায়িত করে আনারও নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন, যা দ্রুত আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেন এবং সময়সীমা বেঁধে দেন। প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া না পেয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাসেম মিয়া ও অন্যান্য শিক্ষকদেরও পদত্যাগের দাবি তোলেন।

 

একযোগে পদত্যাগ
২৬ এপ্রিল রাতে উপাচার্যসহ ১১ শিক্ষক প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগকারী শিক্ষকদের মধ্যে ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক এম রিজওয়ান খান, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন অধ্যাপক হাসান সারওয়ার, এবং বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা রয়েছেন।

ফেসবুকে এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘অযৌক্তিক’ দাবির প্রতিবাদে তারা পদত্যাগ করেছেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
২৭ এপ্রিল রাতে ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। রেজিস্ট্রার ড. মো. জুলফিকার রহমান এক নোটিশে বলেন, “কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।”

 

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশনায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ট্রাস্টি বোর্ড জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং শিক্ষার মান বজায় রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

শিক্ষার্থীদের দাবি
শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানিয়েছে:

১. অধ্যাপক নুরুল হুদার পদত্যাগ নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
২. মিডটার্ম পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের নিয়মে ফিরিয়ে আনা।
৩. পূর্বে স্বীকৃত ইউআইইউ রিফর্ম ১.০-এর সব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন, বিশেষ করে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার ফি নির্ধারণে সমন্বয় আনা।

তাদের বক্তব্য, এই আন্দোলন শুধু একক ঘটনার প্রতিবাদ নয়, বরং দীর্ঘদিনের একাডেমিক অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই উত্তেজনা বাড়ে। তবে শিক্ষার্থীদের কিছু ‘অপমানজনক আচরণ’ এবং ‘অশোভন স্লোগান’ের প্রতিবাদেই শিক্ষকরা পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বলেন, “ছাত্ররা যৌক্তিক দাবি তুলতে পারে, কিন্তু শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান অগ্রহণযোগ্য।”

পদত্যাগী উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাসেম মিয়া বলেন, “শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবি তুলতে পারে, তবে আচরণের যে অবনতি দেখেছি, তা কল্পনার বাইরে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক এফ এ সোবহানী মনে করেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দ্রুত সমাধান প্রয়োজন, তবে আন্দোলনে শৃঙ্খলা রক্ষা করা জরুরি।”