ঢাকা ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতাদের তোপের মুখে টিউলিপ, বরখাস্তের দাবি

ডেইলি আর্থ অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 29

Tulip Siddiq

ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশে আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তের বিষয়ে বড় ধরনের চাপে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সমর্থন পেলেও তিনি বিরোধী দলগুলোর বেশ কয়েকজন এমপির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

দুর্নীতির অভিযোগের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই টিউলিপের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এবার সেই দাবির সঙ্গে একমত হয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। তিনি টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে কেমি ব্যাডেনোচ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘কেয়ার স্টারমার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে। ’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন এবং তিনি নিজেকেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন’।

ব্যাডেনোচ বলেন, সরকার যে আর্থিক সমস্যাগুলো তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা উচিত হলেও টিউলিপ সিদ্দিক সেই কাজে মনোনিবেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছেন। এখন বাংলাদেশ সরকারও শেখ হাসিনার (সাবেক) সরকারের সাথে তার (টিউলিপের) যোগসূত্র নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে’।

সম্প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরাও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ব্রিটেনের বিরোধী দলটি বলেছেন, ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি (টিউলিপ) যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না। ’

সম্প্রতি লন্ডনে সাত লাখ ইউরোর এক ফ্ল্যাট উপহার পাওয়া নিয়ে মিথ্যাচার সামনে আসায় টিউলিপের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়।

দ্য মেইল অন সানডে এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ দুই বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট তার খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছ থেকে পান। লেবার পার্টির একাধিক সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি নিশ্চিত হয়েছে যে, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার ফ্ল্যাটটি একজন ডেভেলপার টিউলিপ সিদ্দিককে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দিয়েছিলেন।

তবে ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা এর আগে অস্বীকার করেন টিউলিপ।

এরপর পর থেকে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা দাবি করছেন, টিউলিপ যদি তার কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা না দেন, তবে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

গণমাধ্যমে হান্টিংডনের টরি এমপি নেন ওবেজ-জেকটি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে এই নতুন তথ্য উদ্বেগজনক। এখন এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ফ্ল্যাটটি তিনি নিজে কেনেননি, বরং তাকে উপহার দেওয়া হয়েছে, তার আরও প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন।

এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার পরিবারের আরও চার সদস্য বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরো আত্মসাৎ করেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী ম্যাট ভাইকার্স বলেন, সরকারের যেকোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। তবে এটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয় যখন তিনি স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী।

এমন আবহে জানা যায়, টিউলিপ সিদ্দিকের বিকল্প খুঁজছে লেবার পার্টি। দ্য টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন যেখানে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হতে পারেন।

টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য কোনও ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার লাউরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।  স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে লেখা একটি চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ‘আমি কোনও ভুল করিনি। ’

ম্যাগনাসের কাছে তার রেফারেলে সিদ্দিক বলেছেন, আমি জানি আমি কোনো ভুল করিনি। যাইহোক, সন্দেহ দূর করার স্বার্থে, আমি চাই আপনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বাধীনভাবে তদন্ত সাপেক্ষ সত্য প্রতিষ্ঠা করুন। এটি করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য যাতে আপনার কাছে থাকে তা আমি অবশ্যই নিশ্চিত করব।  সূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতাদের তোপের মুখে টিউলিপ, বরখাস্তের দাবি

আপডেট সময় : ০১:২০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশে আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তের বিষয়ে বড় ধরনের চাপে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সমর্থন পেলেও তিনি বিরোধী দলগুলোর বেশ কয়েকজন এমপির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

দুর্নীতির অভিযোগের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই টিউলিপের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এবার সেই দাবির সঙ্গে একমত হয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। তিনি টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে কেমি ব্যাডেনোচ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘কেয়ার স্টারমার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে। ’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন এবং তিনি নিজেকেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন’।

ব্যাডেনোচ বলেন, সরকার যে আর্থিক সমস্যাগুলো তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা উচিত হলেও টিউলিপ সিদ্দিক সেই কাজে মনোনিবেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছেন। এখন বাংলাদেশ সরকারও শেখ হাসিনার (সাবেক) সরকারের সাথে তার (টিউলিপের) যোগসূত্র নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে’।

সম্প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরাও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ব্রিটেনের বিরোধী দলটি বলেছেন, ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি (টিউলিপ) যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না। ’

সম্প্রতি লন্ডনে সাত লাখ ইউরোর এক ফ্ল্যাট উপহার পাওয়া নিয়ে মিথ্যাচার সামনে আসায় টিউলিপের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়।

দ্য মেইল অন সানডে এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ দুই বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট তার খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছ থেকে পান। লেবার পার্টির একাধিক সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি নিশ্চিত হয়েছে যে, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার ফ্ল্যাটটি একজন ডেভেলপার টিউলিপ সিদ্দিককে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দিয়েছিলেন।

তবে ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা এর আগে অস্বীকার করেন টিউলিপ।

এরপর পর থেকে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা দাবি করছেন, টিউলিপ যদি তার কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা না দেন, তবে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

গণমাধ্যমে হান্টিংডনের টরি এমপি নেন ওবেজ-জেকটি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে এই নতুন তথ্য উদ্বেগজনক। এখন এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ফ্ল্যাটটি তিনি নিজে কেনেননি, বরং তাকে উপহার দেওয়া হয়েছে, তার আরও প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন।

এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার পরিবারের আরও চার সদস্য বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরো আত্মসাৎ করেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী ম্যাট ভাইকার্স বলেন, সরকারের যেকোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। তবে এটি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয় যখন তিনি স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী।

এমন আবহে জানা যায়, টিউলিপ সিদ্দিকের বিকল্প খুঁজছে লেবার পার্টি। দ্য টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন যেখানে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হতে পারেন।

টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য কোনও ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার লাউরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।  স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে লেখা একটি চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ‘আমি কোনও ভুল করিনি। ’

ম্যাগনাসের কাছে তার রেফারেলে সিদ্দিক বলেছেন, আমি জানি আমি কোনো ভুল করিনি। যাইহোক, সন্দেহ দূর করার স্বার্থে, আমি চাই আপনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বাধীনভাবে তদন্ত সাপেক্ষ সত্য প্রতিষ্ঠা করুন। এটি করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য যাতে আপনার কাছে থাকে তা আমি অবশ্যই নিশ্চিত করব।  সূত্র: বিবিসি