ভূরুঙ্গামারী-ধলডাঙ্গা সড়কের কাজ সফলতার সাথে সমাপ্ত প্রায়

- আপডেট সময় : ০২:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
- / 4
ফজলে রাব্বি এন্টনী,কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে ধলডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত পৌনে ৯ কিলোমিটার সড়ক মেরামত কাজ সফলভাবে সু সম্পূর্ণ হচ্ছে। সম্প্রতি সড়কের ক্ষুদ্র এক টুকরো স্থানে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার নিয়ে যে গুজব ছড়িয়েছিল তার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
মূলত:চলমান কাজটির সাব ঠিকাদারের সাথে এক ব্যক্তির দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বাড়ির সামনের অংশের কার্পেটিং করা সড়কে শাবল দিয়ে আঘাত করে। পরে এলাকার ছেলেরা হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেবার পর বিষয়টি নিয়ে তুমুল হইচইয়ের সৃষ্টি হয়। এই প্রেক্ষিতে সরকারি নবনির্মিত রাস্তা ভাঙ্গার অভিযোগ এনে ভরুঙ্গামারী থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়- এশিয়ান ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (এডিপি)’র অর্থায়নে গত ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে ধলডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ৮শ ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্তে ১৮ ফিট সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়। সড়ক মেরামতের এই কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে চলতি ২০২৫ সালের ৩০শে জুন।
সুত্র জানায়- রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইপি) প্রকল্পের আওতায় চলমান সড়ক মেরামত কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এল জিইডি)। এই কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২০ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮শ’ ৮ টাকা। যার চুক্তি মূল্য ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ২শ’ ২৮ টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত চুক্তি মূল্য নির্ধারণ হয় ১৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৩ টাকা।
সূত্র আরো জানায়- মোট ৮ কিলোমিটার ৮শ ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ২৩শ’ ৮৫ মিটার আরসিসি ঢালাই সড়ক এবং অবশিষ্ট সড়ক কার্পেটিং করার কথা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে সড়ক মেরামত কাজের গতি বাড়ানো হয়। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই সড়ক মেরামতের কাজ সম্পন্ন হবে বলে সূত্রটি জানায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে জামতলা হয়ে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত এবং পাগলাহাট বাজার নামক এলাকায় আরসিসি ঢালাই রাস্তার কাজ অনেক আগেই সমাপ্ত হয়েছে। কার্পেটিং এর কাজ দ্রুত গতিতে সফলভাবে এগিয়ে চলছে। আর মাত্র ৩০ মিটার অবশিষ্ট সড়ক কার্পেটিং-এর কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা যায়, পৌনে ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ধলডাঙ্গা এলাকায় মাত্র দৈর্ঘ্যে ৩০ ফিট এবং প্রস্তে ১৮ ফিট সড়কের কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হবার মূল কারণ জানতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ৪ মে ২০২৫ রাস্তাটি কার্পেটিং হবার একদিন পর ৫ মে ২০২৫ পূর্ব বিরোধের জের ধরে রাস্তা তৈরির মিস্ত্রি বেলাল হোসেন শাবল দিয়ে ওই রাস্তা টুকুতে আঘাত করে ক্ষতিগ্রস্ত করেন।
এরপর সে পরিকল্পিত ভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় যে নিম্নমানের কার্পেটিং হওয়ায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এমন খবর জানতে পেরে গত ৬ মে’২৫ কুড়িগ্রামস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট এক্সপার্টগন পরিদর্শনে যান। তারা বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন সড়কটিতে ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। তারা কোথাও কোন অনিয়ম খুঁজে পাননি।
এদিকে সড়ক মেরামত কাজের ম্যানেজার মোঃ ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারী থানায় সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সাব ঠিকাদার বেলাল হোসেন- সাংবাদিকদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন- দেশের যেকোন ইঞ্জিনিয়ার এসে রাস্তার কাজ দেখতে পারেন। রাস্তার কাজে এতটুকু ত্রুটি বা অনিয়ম হয়নি। পূর্ব শত্রুতা জেরে পৌনে ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৩০ ফিট সড়কের কার্পেটিং শাবল দিয়ে তোলা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
এ সম্পর্কে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইনছাফুল হক সরকার জানান- এসফল প্লান্টের মাধ্যমে যে কার্পেটিং তৈরি হয়, সেখানে নিম্ন মানের কার্পেটিং তৈরি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যেটুকু কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম ফেরদৌস এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- সাব ঠিকাদার যে অভিযোগ করেছে, সেই অভিযোগের সত্যতা পেলে ফৌজদারি আইনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদুজ্জামান জানিয়েছেন- আমি সরেজমিনে রাস্তাটির কাজ দেখেছি। কোথাও কোন অনিয়ম বা ত্রুটি খুঁজে পাইনি। যেখানে কার্পেটিং উঠে গেছে।
সেখানে গিয়ে দেখেছি, যে কার্পেটিং গুলো তোলা হয়েছে, সেই কার্পেটিংগুলো জমাট বেঁধেছে। যদি নিম্নমানের কাজ হতো, তাহলে কার্পেটিংগুলো জামাট বাধতে পারতো না। আমার কাছে মনে হয়েছে পরিকল্পিতভাবে রাস্তার কার্পেটিং উঠানো হয়েছে। যা রীতিমতো ফৌজদারী অপরাধ।