গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সময় পুলিশকে পরিচয় দিতে হবে
- আপডেট সময় : ০৯:৪৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
- / 29
কারো বাড়িতে পুলিশ হাজির হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এই অবিশ্বাস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যে প্রকৃত পুলিশ এসেছে কি না। পুলিশের পরিচয় না দিয়েই আসামি ধরা এবং তল্লাশি চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই সমস্যার সমাধানে সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। কমিশন বলেছে, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সময় পুলিশকে পরিচয় দিতে হবে।
পরিচয় দিতে না চাইলে বা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে সেই পুলিশ প্রকৃত পুলিশ কি না তা যাচাইয়ের জন্য জরুরি কল সার্ভিস চালু করতে হবে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের কাজে উৎসাহিত করতে ‘ওভার টাইম’ মজুরির ব্যবস্থা করার কথাও বলেছে কমিশন।
বিসিএস পুলিশ ক্যাডারেও সংশোধনী আনার সুপারিশ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি দেওয়াকে অপচর্চা বলে মনে করে কমিশন।
গত ৩ অক্টোবর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বুধবার পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাঁদের প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে পুলিশ সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে ১০৭টি সুপারিশ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়, অতিরিক্ত কাজের চাপ কমানোর জন্য পুলিশের কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট রাখতে হবে।
আট ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করালে বিশেষ প্রণোদনা চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘পুলিশ অতিরিক্ত কাজ করার পর ওভারটইম মজুরি পেলে তারা কাজের প্রতি উৎসাহিত হবে। দুর্নীতির দিকে এগোবে না। এ জন্যই এ ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
সুপারিশে বলা হয়, অভিযান পরিচালনার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট-পোশাক পরিধান করতে হবে।
রাতের বেলা গৃহে তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি অথবা স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। কেইস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ছাড়া কোনোক্রমেই এফআইআরবহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না।
আরেকটি সুপারিশে বলা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোন পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না।
অপচর্চার বিষয়ে মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই অজ্ঞাতনামা আসামির নামে যাকে তাকে ধরে আনা হয়। পরে সেটা দিয়ে বাণিজ্য চলে। এই বাণিজ্য রোধের জন্যই এমন সুপারিশ করা হয়েছে।’
আরেকটি সুপারিশে বলা হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরাসরি সব পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা বা তাদের প্ররোচনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাপ্রধান নিজেই যাতে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়েও একটি মানবাধিকার সেল কার্যকর করতে হবে।