উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে হয়রান জাপা
- আপডেট সময় : ০৯:২১:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
- / 71
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। একইভাবে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিয়েছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও জি এম কাদের কিংবা রওশন অনুসারীরা ভোটের মাঠে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না।
সংসদ নির্বাচনের বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে জামানত হারানোর ভয়ে এবার কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। অপরদিকে দলের তৃণমূলের নেতারা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে কেন্দ্রের ওপর বিরক্তির কারণে সাংগঠনিক কাঠামোও নেতিয়ে পড়েছে, যার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রথম ৩ ধাপের নির্বাচনে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রংপুরে ৫টি, দিনাজপুর, নরসিংদী, খাগড়াছড়ি সদর, বরিশালের সদর ও মূলাদীতে ১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে।
এবার শাসকদল আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার। জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিয়েছে তাদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙল কিংবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় উপজেলা নির্বাচন ও বর্জন করছে। এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে।
জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয় লাভের নিশ্চয়তা না থাকায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নয় নেতাকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে তারা মনে করছেন, সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নিয়েও মাত্র ১১টি আসন পেয়েছিল দলটি। ২৬৪টি আসনের মধ্যে ২৪৪টিতেই জামানত হারাতে হয়েছিল দলীয় প্রার্থীদের।
দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন বর্তমান সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বাইরে কারও জয়লাভের সম্ভাবনা নেই, ফলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারানো কিংবা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া তাদের হাতে অন্য কোনো অপশন না থাকায় তারা নির্বাচন থেকে বিরত থাকছেন। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলেও দল থেকে সহযোগিতা করা হয় না, দলীয় সংসদ সদস্যরা নিজেদের প্রার্থী রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন।
তারা মনে করেন, জামানত ফি বাড়ানোর কারণে স্থানীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার বলেন, সংসদ নির্বাচনে দলের খারাপ ফলাফলের কারণে জাপাপ্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যই প্রার্থী ঠিক করে দিচ্ছেন প্রশাসন ও তাদের পক্ষে কাজ করবে ফলে স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করানো যায়নি। আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলেও জয়ের নিশ্চয়তা দেখছেন না, ফলে শুধু শুধু টাকা খরচ করতে কেউ আগ্রহী নন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এই নির্বাচন দলীয় প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ চালু করেছিলেন বলে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে জাপা নির্বাচনে থাকছে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই। নির্বাচন ব্যবস্থায় কারও ভরসা নেই। আমাদের ভালো প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা নির্বাচন করতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল উওরাঞ্চলের জেলাগুলো। তবে গত ১৫ বছরে এসব জেলায় শক্তি হারিয়ে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে দলটি। দলের অনেক নেতাকর্মীই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, আবার অনেকেই রাজনীতি থেকে বিরতি নিয়েছেন। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে রংপুর জেলার ৬টি আসনের মধ্যে কেবল দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের ছাড়া আর কেউ জিততে পারেননি।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম জানান, এখনো রংপুরে জাপা একক শক্তি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের সঙ্গে কেউ লড়তে পারবে না। এবারের উপজেলা নির্বাচনে ৮টি জেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও আমরা এখন সন্দিহান সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে। যে কারণে ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ নেই। এই সরকারের অধীনে ভালো ভোট হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।
নির্বাচনে অনীহার বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভ কী সাধারণ মানুষ তো ভোটে যাবে না। নির্বাচনের জামানত ১ লাখ টাকা এটা জলে ফেলা হবে। কেননা জাপার তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মী নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নয়। নির্বাচন করতে খরচ অনেক হয়। এখন নিজের দলের নেতারাই যখন আগ্রহ দেখান না, তখন নির্বাচনে অংশ নিয়ে টাকা পানিতে ফেলা ছাড়া আর তো কোনো ফায়দা দেখছি না। আর সাধারণ মানুষ তো এখন জাপাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। দলের কোনো বড় নেতা কখনো তৃণমূলে আসেন না, মানুষ তো জাপার নামই ভুলে যাচ্ছে। এভাবে একটা দল চলতে পারে না।
নিউজটি শেয়ার করুন