বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীর তাণ্ডব
- আপডেট সময় : ০৪:২৮:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪
- / 87
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়ের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রোবার (৫ মে) রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটে।
ঢাকায় শিলাবৃষ্টি
রাজধানী ঢাকায় কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রোববার রাত ৯টার পর থেকে এই বৃষ্টি শুরু হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঢাকায় কালবৈশাখীসহ শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। এটিই এই মৌসুমে রাজধানীতে প্রথম শিলাবৃষ্টি।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টা থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।
রোববার ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আগেই পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
দীর্ঘ প্রায় এক মাসের তীব্র তাপদাহের পর গত ২ মে রাতে ঢাকায় নামে স্বস্তির বৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, এ বছর এপ্রিলে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৭৬ বছরে এপ্রিলে রেকর্ড করা গড় তাপমাত্রার চেয়ে তিন ডিগ্রি বেশি। এ ছাড়া, এবারই এপ্রিলে দীর্ঘতম তাপদাহ বয়ে গেছে দেশজুড়ে।
কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড নাসিরনগর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ৪০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্তসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। রোববার (৫ মে) রাত থেকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন, নাসিরপুর, দাতমণ্ডল, ধনকুড়া, কুলিকুণ্ডা ও মন্নরপুর এলাকার ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়।
এতে ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ১০টির মত খুঁটি ও বেশ কিছু ট্রান্সমিটার। গাছ ভেঙে সঞ্চালন লাইনের ওপর পড়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৬৫ হাজর গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ে বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে আঁচড়ে পড়েছে। এছাড়া বেশকিছু দোকানপাট ও হাঁস, মুরগির খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর ঝুলে আছে। কিছু কিছু এলাকায় কয়েকটি শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছের গোড়া উপড়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরে কালবৈশাখী ঝড়ে সদরে নয়টি, কুলিকুণ্ডা তিনটি, দাতমণ্ডল ১০টি, নাসিরপুর পাঁচটি, ধনকুড়া চারটি মন্নরপুর গ্রামে আট থেকে ১০টি ও বুড়িশ্বর গ্রামে তিনটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে বড়ঘাট এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ কেবি লাইনের ১০টির মত খুঁটি ভেঙে বিদ্যুতের তারসহ মাটিতে পড়ে রয়েছে। অনেক গাছ বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সকাল থেকে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সড়ক থেকে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার অপসারণের কাজ শুরু করেছে।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল ম্যানেজার প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে খুঁটি ও মিটারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুঁটি মেরামতের কাজ চলছে। ঝড়ে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিকল্প পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হলেও সে লাইনটি কাজ করছে না। ফলে রাত থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
চট্টগ্রামে কালবৈশাখী, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হেনেছে। সোমবার (৬ মে) বিকেল ৩টার দিকে ঝড়ে শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় ঝড় অব্যাহত ছিল। দুপুরেই কালো মেঘে অন্ধকার নেমে আসে নগরীতে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সমগ্র চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে সমগ্র চট্টগ্রাম জেলায় সূর্যের আলো ঘন মেঘে ঢাকা পড়ে রাতের আঁধার নেমে আসে। এর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়।
চট্টগ্রাামের ফটিকছড়ি থেকে সুলতানা বেগম নামের এক গৃহীনি বলেন, ঝড়ের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের গাছপালা উপড়ে পড়ছে। টিনের চালা উড়ে গেছে অনেক বাড়ি ঘরের।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, ভয়াবহ কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হেনেছে বলে খবর আসছে। বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপাড়া উপড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর আসেনি। ঝড় এখনো অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটে কালবৈশাখীর তাণ্ডব
সোমবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ৭টায় রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসে সিলেট নগরীতে। শুরু হয় কালবৈশাখীর তাণ্ডব। ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টিও। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কালবৈশাখীর তাণ্ডব চলে। কালবৈশাখী ঝড়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
এ দিকে আগামী ৭ দিন সিলেটের ওপর দিয়ে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন।
তিনি জানান, মার্চ থেকে এপ্রিল ও মে এ তিনমাস ঝড়ো হাওয়া ও কালবৈশাখী থাকে। তবে তা একাধারে না হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে বয়ে যায়। আগামী এক সপ্তাহ সিলেটের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।
তিনি আরও জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
এ বিষয়ে কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিলাবৃষ্টিতে গাছপালা ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকের ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। শক্তিশালী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার রাতেও সিলেট ও সুনমাগঞ্জে আঘাত হানে কালবৈশাখী। সিলেটের কানাইঘাটে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে ও শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
নিউজটি শেয়ার করুন