ঢাকা ০৭:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

দুবাইয়ে গোপনে ধনীদের সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:২১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
  • / 73
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোপনে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা। গতকাল মঙ্গলবার ‘দুবাই আনলকড’ নামের ওই নথি প্রকাশ করা হয়। অনুসন্ধানী এই সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোর।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঝলমলে আকাশচুম্বী সব ভবন আর বিলাসবহুল জীবনযাত্রার শহর দুবাই। এক সময়ের ধু ধু মরুভূমি থেকে ঝা চকচকে শহরে রূপ নেওয়া দুবাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষের বিপুল পরিমাণ গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে। অর্থের উৎস সম্পর্কিত কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই ব্যাংক কিংবা ব্যক্তিগত বিমান ভরে অর্থ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আমিরাতে। আর এই সুযোগে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ব্যক্তি, অর্থপাচারকারী ও অপরাধীরা দুবাইয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

‘দুবাই আনলকড’ নামে বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক প্রকল্পে দুবাইয়ে গড়ে ওঠা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষের এই সম্পদের গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। অনুসন্ধানী এই প্রকল্পে ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ ছয় মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছেন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোরের নেতৃত্বে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলবার ‘দুবাই আনলকড’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ওসিসিআরপি।

বিভিন্ন দেশের সন্দেহভাজন অপরাধী, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দুবাইয়ে কীভাবে নিরাপদে সম্পদ কিনেছেন, সেই চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্স ডিফেন্স স্টাডিজ (সি৪এডিএস) প্রথম এই ফাঁসকৃত তথ্য পায়। দুবাইয়ের সরকারি ভূমি দপ্তরসহ অন্যান্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালানো হয়। ওসিসিআরপি বলছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ দুবাইয়ে বিদেশিদের মালিকানায় থাকা সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে বিদেশিদের সম্পদের মালিকানার তালিকায় শীর্ষে আছেন ভারতীয়রা। দেশটির ২৯ হাজার ৭০০ জন নাগরিকের ৩৫ হাজার সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে। ২০২২ সাল পর্যন্ত দুবাইয়ে ভারতীয়দের এসব সম্পত্তির মোট মূল্য ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বলে ধারণা করা হয়। ভারতের পর এই তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। দুবাইয়ে ১৭ হাজার পাকিস্তানির হাতে ২৩ হাজার সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।

আমিরাতের এই শহরে গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানেরও গোপন সম্পদের খোঁজ মিলেছে দুবাইয়ে। দুবাইয়ের কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাতে মুকেশ আম্বানির প্রায় ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।

আর পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসাইন নওয়াজ শরিফ, সাবেক স্বৈরশাসক প্রয়াত পারভেজ মুশাররফসহ দেশটির বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীরও নাম রয়েছে এই তালিকায়।

দুবাইয়ে গোপন সম্পদের বিষয়ে ফাঁস হওয়া তথ্যে কয়েকশ’ বাংলাদেশিরও পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। ওসিসিআরপির তথ্য বলছে, আকাশচুম্বী অট্টালিকার এই শহরে গোপনে সম্পদ গড়েছেন অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি। শহরটিতে এই বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে ৬৪১টি সম্পত্তি। বাংলাদেশিদের মালিকানায় থাকা এসব সম্পত্তির মূল্য ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারেরও বেশি।

তবে বাংলাদেশিদের সম্পদ ও মালিকানার তথ্য জানানো হলেও তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি ওসিসিআরপি।

• দুবাইয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের ও তাদের সম্পদ
১. ভারতীয় নাগরিক মুকেশ আম্বানির রয়েছে ১১ হাজার ২০ কোটি ডলারের সম্পদ
২. ভারতীয় নাগরিক এম এ ইউসুফ আলী ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৭৮০ কোটি ডলার
৩. ভারতীয় শামশীর ভায়ালিলের রয়েছে ৩৫০ কোটি ডলারের সম্পদ
৪. ওমানের নাগরিক সুহাইল বাহওয়ানের আছে ১৯০ কোটি ডলারের সম্পদ
৫. রাশিয়ার নাগরিক আন্দ্রেই মলচানভ ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার
৬. সাইপ্রাসের নাগরিক বিনোদ আদানির রয়েছে ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের সম্পদ
৭. কানাডার নাগরিক চ্যাংপেং ঝাওয়ের আছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সম্পদ
৮. যুক্তরাজ্যের নাগরিক সকেট বর্মনের সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার
৯. সাইপ্রাসের নাগরিক ইগোর মাকারোভের আছে ২১০ কোটি ডলারের সম্পদ
১০. মিসরের নাগরিক নগিব সাবিরিস ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

দুবাইয়ে গোপনে ধনীদের সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশি

আপডেট সময় : ০৬:২১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোপনে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা। গতকাল মঙ্গলবার ‘দুবাই আনলকড’ নামের ওই নথি প্রকাশ করা হয়। অনুসন্ধানী এই সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোর।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঝলমলে আকাশচুম্বী সব ভবন আর বিলাসবহুল জীবনযাত্রার শহর দুবাই। এক সময়ের ধু ধু মরুভূমি থেকে ঝা চকচকে শহরে রূপ নেওয়া দুবাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষের বিপুল পরিমাণ গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে। অর্থের উৎস সম্পর্কিত কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই ব্যাংক কিংবা ব্যক্তিগত বিমান ভরে অর্থ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আমিরাতে। আর এই সুযোগে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ব্যক্তি, অর্থপাচারকারী ও অপরাধীরা দুবাইয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

‘দুবাই আনলকড’ নামে বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক প্রকল্পে দুবাইয়ে গড়ে ওঠা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষের এই সম্পদের গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। অনুসন্ধানী এই প্রকল্পে ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ ছয় মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছেন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোরের নেতৃত্বে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলবার ‘দুবাই আনলকড’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ওসিসিআরপি।

বিভিন্ন দেশের সন্দেহভাজন অপরাধী, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দুবাইয়ে কীভাবে নিরাপদে সম্পদ কিনেছেন, সেই চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্স ডিফেন্স স্টাডিজ (সি৪এডিএস) প্রথম এই ফাঁসকৃত তথ্য পায়। দুবাইয়ের সরকারি ভূমি দপ্তরসহ অন্যান্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালানো হয়। ওসিসিআরপি বলছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ দুবাইয়ে বিদেশিদের মালিকানায় থাকা সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে বিদেশিদের সম্পদের মালিকানার তালিকায় শীর্ষে আছেন ভারতীয়রা। দেশটির ২৯ হাজার ৭০০ জন নাগরিকের ৩৫ হাজার সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে। ২০২২ সাল পর্যন্ত দুবাইয়ে ভারতীয়দের এসব সম্পত্তির মোট মূল্য ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বলে ধারণা করা হয়। ভারতের পর এই তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। দুবাইয়ে ১৭ হাজার পাকিস্তানির হাতে ২৩ হাজার সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।

আমিরাতের এই শহরে গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানেরও গোপন সম্পদের খোঁজ মিলেছে দুবাইয়ে। দুবাইয়ের কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাতে মুকেশ আম্বানির প্রায় ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।

আর পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসাইন নওয়াজ শরিফ, সাবেক স্বৈরশাসক প্রয়াত পারভেজ মুশাররফসহ দেশটির বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীরও নাম রয়েছে এই তালিকায়।

দুবাইয়ে গোপন সম্পদের বিষয়ে ফাঁস হওয়া তথ্যে কয়েকশ’ বাংলাদেশিরও পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। ওসিসিআরপির তথ্য বলছে, আকাশচুম্বী অট্টালিকার এই শহরে গোপনে সম্পদ গড়েছেন অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি। শহরটিতে এই বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে ৬৪১টি সম্পত্তি। বাংলাদেশিদের মালিকানায় থাকা এসব সম্পত্তির মূল্য ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারেরও বেশি।

তবে বাংলাদেশিদের সম্পদ ও মালিকানার তথ্য জানানো হলেও তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি ওসিসিআরপি।

• দুবাইয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের ও তাদের সম্পদ
১. ভারতীয় নাগরিক মুকেশ আম্বানির রয়েছে ১১ হাজার ২০ কোটি ডলারের সম্পদ
২. ভারতীয় নাগরিক এম এ ইউসুফ আলী ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৭৮০ কোটি ডলার
৩. ভারতীয় শামশীর ভায়ালিলের রয়েছে ৩৫০ কোটি ডলারের সম্পদ
৪. ওমানের নাগরিক সুহাইল বাহওয়ানের আছে ১৯০ কোটি ডলারের সম্পদ
৫. রাশিয়ার নাগরিক আন্দ্রেই মলচানভ ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার
৬. সাইপ্রাসের নাগরিক বিনোদ আদানির রয়েছে ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের সম্পদ
৭. কানাডার নাগরিক চ্যাংপেং ঝাওয়ের আছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সম্পদ
৮. যুক্তরাজ্যের নাগরিক সকেট বর্মনের সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার
৯. সাইপ্রাসের নাগরিক ইগোর মাকারোভের আছে ২১০ কোটি ডলারের সম্পদ
১০. মিসরের নাগরিক নগিব সাবিরিস ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার