বছর ঘুরতেই ইলিশের দাম বেড়ে দ্বিগুণ
- আপডেট সময় : ১০:০১:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
- / 83
বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক জয়ন্ত কুমার। সকালে বাজারে যাওয়ার সময় ছেলে-মেয়ে বায়না ধরেছে ইলিশ মাছ নিয়ে আসার। তবে বাজার ঘুরে সাধ্যের মধ্যে একটি ইলিশ মাছ কিনতে পারেননি তিনি। পরে নিরুপায় হয়ে একটি পাঙাশ কিনে বাড়ি ফেরেন।
শুধু জয়ন্ত কুমারই না, এমন চিত্র এখন প্রতিটি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে। ইলিশের উচ্চ দামে হতাশা প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। অবস্থা এমন যে ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে এক শ্রেণির মানুষ।
শুক্রবার (১৭ মে) সকালে বরিশালের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ গ্ৰাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ টাকা কেজি, যা গতবছর ছিল ৯৫০ টাকা। ৮০০ গ্ৰাম ওজনের ইলিশ গতবছর ১২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকায়। এককেজি ওজনের ইলিশ গতবছর ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকা কেজি।
আড়তগুলো ঘুরে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই আশানুরূপ ইলিশ আসছে না। বিগত দিনে এসময়ে ১০০০-১২০০ মণ ইলিশ আসতো। কিন্তু বেশকিছু দিন ধরেই ১৫০-২০০ মণ ইলিশ আসছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাই সরবরাহ কম থাকায় দ্বিগুণ হয়েছে ইলিশের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তগুলো এসময় ইলিশে ভরপুর থাকার কথা। অথচ চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ আসছে না। তার মধ্যে ভরা মৌসুমেও স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশের দেখা নেই। যা আসছে তার মধ্যে সাগরের ইলিশ বেশি। সরবরাহ কম থাকায় দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
পোর্টরোড পাইকারি বাজারে মাছ কিনতে আসা আশরাফ মাহমুদ জানান, ‘আগে যে ইলিশ কেজি ১৪০০-১৬০০ টাকায় কিনেছি, এখন তা কিনতে হচ্ছে ২৫০০ টাকার ওপরে। মাছের সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দামি বাড়িয়েছেন। তা নাহলে ইলিশ তো আর বিদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে না। নিজেদের নদ-নদী বা সাগরের মাছ। এত দাম বাড়ার কারণ দেখছি না।’
আরেক ক্রেতা আলম মৃধা বলেন, ‘এলাকার বাজার থেকে মাছ না কিনে পোর্টরোড পাইকারি বাজারে এসেছিলাম একটু কম দামে কেনার আশায়। কিন্তু এখানেও দেখি খুচরা বাজারের মতো চড়া মূল্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ছোট ছোট ৭০০ গ্রাম ওজনের চারটি ইলিশ কিনেছি ৩২০০ টাকায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ কিছু দিনের মধ্যে ইলিশের স্বাদ ভুলে যাবে।’
ইলিশ কিনতে এসে দরদামে পোষাতে না পেরে পাঙাশ কিনতে হয়েছে বলে জানান ক্রেতা সিরাজ হাওলদার। তিনি বলেন, ‘৫০০ গ্ৰাম সাইজের ইলিশ কেজি ১০০০-১৫০০ টাকা হয়েছে। যা আগে ছিল ৫০০-৯৫০ টাকা। পাঙাশ মাছেরও দাম বেড়েছে। ২৮০ টাকা কেজি দরে পাঙাশ মাছ কিনলাম। যা আগে ছিল ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে।’
পোর্টরোডের ইলিশ আড়তদার মেসার্স দুলাল ফিশের ম্যানেজার মো. রবিন বলেন, ‘গত একমাস ধরেই গড়ে দেড় থেকে দুই আড়াইশ মণ ইলিশ নিয়ে ট্রলারগুলো পোর্টরোডের মোকামে আসছে। কিন্তু এমন সময় হাজার হাজার মণ ইলিশ আসার কথা। কয়েক বছর আগেও ভরা মৌসুমে পোর্টরোডের মোকামের আড়তগুলোয় দিনশেষে দুই হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো।’
কথা হয় পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির অর্থ সম্পাদক ইয়ার হোসেন শিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট ১৭০টি আড়ত রয়েছে। ভরা মৌসুমের আগে প্রতিদিন ১০০০-১২০০ মণ ইলিশ আসতো। সেখানে বর্তমানে ১৫০-২০০ মণ পর্যন্ত মাছ আসছে। বেচাবিক্রি আগে কোটি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতো। এখন হচ্ছে মাত্র ৪০-৫০ লাখ টাকার মতো।’
তিনি বলেন, নদী থেকে প্রায় শূন্য হাতে ফেরত আসছেন জেলেরা। তাই আড়তে নদীর ইলিশের দেখা মিলছে না। সাগর থেকে কিছু মাছ আসছে।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নদীতে পানি কম থাকা ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মাছে বৃদ্ধি কমেছে। পাশাপাশি মাছ অস্বস্তিতেও রয়েছে। যে কারণে মাছের আনাগোনা কম। জেলের জালে ধরা পড়ছেও কম।
তবে তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে এবং তাপপ্রবাহ কমলে মাছের আনাগোনা বাড়বে, উৎপাদনও বাড়বে। পাশাপাশি জেলেদের জালেও ধরা পড়বে। তখন মাছের মূল্যও কিছুটা কমবে।
নিউজটি শেয়ার করুন