রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ
- আপডেট সময় : ১১:২৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪
- / 77
আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিদ্যমান আর্থিক প্রণোদনা ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ১২ দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকতে পারে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, এ ধরনের কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করার এখতিয়ার স্থায়ী কমিটির নেই। তাই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৪ এপ্রিল কমিটির এ বিষয়ে মিটিং হয়েছে বলে জানা গেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, একেএম সেলিম ওসমান ও রুনু রেজা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, সভায় বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কি কি করণীয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এখন বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলমান আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
২। রেমিট্যান্স প্রেরণকারি ও তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ স্মার্ট কার্ড প্রদান করা যেতে পারে। যা বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রধিকার প্রদান করা যেতে পারে।
৩। স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারীদের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে বিশেষ প্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে।
৪। স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারী অভিবাসী শ্রমিক স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসলে তাকে স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট সব সেবা প্রদানকারী সরকারি অফিসে প্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে।
৫। স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারীদের জন্য বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে এক্সপ্রেসওয়ে/সার্ভিস পদ্ধতিতে হয়রানি ব্যতীত ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কিলায়ারেন্স এর সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।
৬। ইউসিভার্সাল পেনশন স্কিম-এ আগ্রহী করার জন্য প্রবাসীদের মাঝে প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করতে প্রাইভেট সেক্টরকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
৭। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করে তাদেরকে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা এবং ২ দশমিক ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে।
৮। রেমিটরদের ফ্ল্যাট আকারে প্রণোদনা না দিয় প্রেরিত রেমিট্যান্সের তথ্য প্রস্তাবিত কার্ডে সংরক্ষণ করে রেমিট্যান্সের পরিমাণের ওপর পয়েন্ট প্রদান করা যেতে পারে।
৯। এক কোটি টাকার বেশি বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা পরিহার করা, প্রবাসে ১০ হাজার বা এর অধিক পরিমাণ ডলার বিনিয়োগকারী প্রবাসী বাঙালির তথ্য বাংলাদেশকে অবহিত করার বিধান করা যেতে পারে।
১০। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
১১। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ঘোষিত সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রবাসীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যেতে পারে।
১২। অধিক মার্কেটিং এবং প্রচারের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য রেমিটারদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো অবহিত করে তাদের উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শ এবং দেশের রিজার্ভ বাড়াতে সরকার প্রবাসীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আনার জন্য এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সাধারণত একটি দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে নানা ধরনের সংকট বিরাজ করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে এরপরই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ব্যাংকিং চ্যানেলে নানা জটিলতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরত্বে রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ তাদের কব্জায়। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কি কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রবাস আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের অ-আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত প্রায় তিন দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকার ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাস আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।
প্রবাস আয় বৃদ্ধিতে গতি বাড়াতে ইতোপূর্বে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
নিউজটি শেয়ার করুন