লম্বা ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ, ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা
- আপডেট সময় : ০৪:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪ ৫৭ বার পড়া হয়েছে
ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। সারাদেশে বইছে উৎসবের আনন্দ। এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলা নববর্ষের ছুটি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ১১ এপ্রিলকে ঈদুল ফিতরের দিন ঠিক করে ছুটির তালিকা করেছে সরকার। ৮ ও ৯ তারিখে অফিস খোলা থাকবে। ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ঈদের ছুটি। তবে রোজা ২৯টি হলে ঈদের ছুটি শুরু হবে ৯ এপ্রিল থেকে। সে হিসেবে অফিস ছুটি হয়নি এখনো।
তবে এরই মধ্যে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে লাখো মানুষ। প্রতিদিন ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ-সবখানেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। তবে এবারের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে যানজট থাকলেও দূরযাত্রায় দুর্ভোগ নেই।
অফিস ছুটি হয়নি এখনো। পরিবার নিয়ে যেতে হবে গ্রামে। ঈদের ছুটি শুরু হলে একসঙ্গে সবাই বাড়ির পথ ধরবে। এতে বাড়বে চাপ। এজন্য পরিবার-পরিজনকে আগেভাগেই বাড়িতে পাঠাতে শুরু করেছেন অনেকে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছেন। আজ শনিবারও রাজধানী ছাড়ছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। ঈদের লম্বা ছুটি ঘিরে মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করায় সড়ক, নৌ ও ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। যাত্রী বেড়েছে আকাশপথেও। তবে এখনো ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়নি।মানুষ বাড়ি ফেরায় ঢাকা ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করেছে।
আজ (শনিবার) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। নির্ধারিত সময়ে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। মহাসড়কে গাড়ির চাপ হওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। তবে দিনের শুরুতে রেলের সিডিউলে ছন্দপতন ঘটলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সিডিউল ঠিক হয়ে গেছে। জানা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৬ টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে ৭টা ৫০ মিনিটে। ট্রেনটি প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। তবে সোনারবাংলা এক্সপ্রেস, এগারসিন্দুর প্রভাতি, তিস্তা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস সময়মতই স্টেশন ছেড়েছে।
এদিকে ঈদযাত্রায় পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়েই বাসগুলো একের পর এক স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা যাত্রাবাড়ী মোড়, শনির আখড়া, রায়েরবাগ ও সাইনবোর্ড বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় করছেন। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী যানবাহনের চাপ বেশি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি।
এখন পর্যন্ত নৌপথের ঈদযাত্রাও স্বস্তির বলে জানা গেছে। বিশেষ করে লঞ্চের কেবিনের চাহিদা বেশি। ডেকে তুলনামূলক যাত্রী কম। যাত্রী বাড়তে থাকায় লঞ্চের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কে যানজটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সদরঘাট টার্মিনালে শুক্রবার লঞ্চযাত্রী ছিল অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তবে খুব বেশি চাপ ছিল না। ফলে নৌপথের যাত্রায় এখনো অনেকটা স্বস্তি রয়েছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিআইডব্লিউটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। সদরঘাট নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী ও টার্মিনালে নৌপুলিশের একাধিক টিম টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।
সদরঘাট টার্মিনালের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, রমজানের শেষ শুক্রবার হওয়ায় যাত্রী কিছুটা বেড়েছে তবে চাপ নেই। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৮টি লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। ভিড়েছে ৩৭টি। সবমিলিয়ে শুক্রবার ৭০টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৬৬টি।
পুলিশের ১৩ নির্দেশনা: ঈদ উপলক্ষ্যে ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেগুলো হলো-গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বের হতে হবে। বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা যাবে না। বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। আগে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখতে হবে। রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে হবে।
নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে-মোটরসাইকেল চুরি রোধে এলার্ম লাগাতে হবে। এতে কেউ মোটরসাইকেল স্পর্শ করলেই এলার্ম বেজে উঠবে। লক করার কাজে স্টিলের তৈরি মেরিন অ্যাংকর চেইন ব্যবহার করতে হবে। মোটরসাইকেলে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে এবং চাকাতে উন্নত মানের ডিস্ক লক ব্যবহার করতে হবে। দেশের কিংবা বিদেশের কোনো আইপিএস কিংবা বিসিএস কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা ইত্যাদি পরিচয়ে ফেসবুকে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলে প্রতারিত কিংবা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হতে পারেন। সেজন্য এ ধরনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা উচিত হবে না। যার নাম-ঠিকানা আপনার জানা নেই এমন অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া ভিডিও কল গ্রহণ করবেন না। এরূপ ভিডিও কলে পাঠানো অশ্লীল ছবি কিংবা ভিডিও রেকর্ড করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতে পারে।
ডিএমপির নির্দেশনায় আরও রয়েছে-আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্ট কোনো ব্যক্তি বন্ধ করতে পারে না। এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ভয় দেখিয়ে আপনার কাছ থেকে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কিংবা পিন নম্বর বিভিন্ন কৌশলে বারবার চাইতে পারে। এ ধরনের ফোনকল পেয়ে কোনো অবস্থাতেই পাসওয়ার্ড কিংবা পিন কোড দেওয়া যাবে না। ভুল করে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে-এমন ফোনকল পেলে যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। লটারি জিতেছেন কিংবা বিদেশ থেকে দামি উপহার কিংবা ডলার পাঠানো হবে এরূপ মোবাইল কল পেয়ে বিশ্বাস করবেন না। এয়ারপোর্ট কাস্টমসে কিংবা এনবিআর অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে প্রতারকরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের লোভে পড়বেন না।
জনসাধারণের প্রতি ডিএমপির আরও অনুরোধ-অত্যন্ত দামি ধাতুর তৈরি সীমান্ত পিলারে বিনিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা লাভ করা যাবে এরূপ প্রলোভনে বিশ্বাস করবেন না। প্রতারকরা নকল পিলার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বাস্তবে এ ধরনের কোনো পিলার নেই। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদি আইডিতে আত্মীয়, বন্ধু কিংবা পরিচিত ব্যক্তির বিপদে পড়ে জরুরি টাকা পাঠানোর অনুরোধ পেলে ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর কিংবা তার পরিবারের লোকজনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ না করে কোনো টাকা পাঠাবেন না। মোবাইল চুরি করে কিংবা বিভিন্ন আইডি হ্যাক করে এ ধরনের অনুরোধ পাঠানো হয়। সস্তায় হোটেল ভাড়া করা, বিমানের টিকিট কাটা কিংবা কম খরচে ইউরোপ, কানাডা কিংবা আমেরিকায় পাঠানোর প্রস্তাব কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিংবা অ্যাপসে পাঠালে বিশ্বাস করবেন না।