ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

চট্টগ্রাম বন্দরে পে-অর্ডার জটিলতা, ক্ষতির মুখে আমদানি-রপ্তানি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০১:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • / 48
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

• ৯ ব্যাংকের পে-অর্ডার নিচ্ছে না শিপিং এজেন্টগুলো
• বিলম্বিত হচ্ছে পণ্য খালাস
• লিড টাইম হারানোর শঙ্কা রপ্তানিকারকদের

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নয়টি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক শীর্ষ শিপিং এজেন্টগুলো। এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস বিলম্বিত হচ্ছে, বিপত্তি তৈরি হয়েছে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ নিয়েও। লিড টাইম (পণ্য জাহাজীকরণের সময়) হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। ফলে দেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর একে একে পরিবর্তন আসতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে। দীর্ঘসময় ধরে চলে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের নানান অনিয়ম ধরা পড়ে। সেসব অনিয়ম বন্ধ হওয়ায়, বিশেষ করে ঋণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমস্যাবহুল ব্যাংকগুলোকে নগদ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সমস্যায় ৯ ব্যাংক
এতে বেশি বিপাকে পড়ে ইসলামী ব্যাংকসহ এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন ছয়টি ব্যাংক। বিগত সময়ে এস আলম গ্রুপের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এস আলম গ্রুপের বাইরে থেকেও বিপাকে পড়ে বিগত সময়ে সমস্যাগ্রস্ত ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। তবে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের থাকলেও ওই ব্যাংকে আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী শিল্পগ্রুপের সম্পৃক্ততা থাকায় সেটিকে তেমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি।

কনটেইনার জটের বর্তমান পরিস্থিতি
বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কারফিউ ও সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

৫ আগস্ট সরকার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি হয় কনটেইনার জট।

চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে ৪৪ হাজারের বেশি কনটেইনারের জট লাগে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাসে গতি বাড়ে। ধীরে ধীরে কনটেইনার জট কমতে থাকে।

সবশেষ শনিবার (২৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৫৯৮ টিইইউএস, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখনো প্রায় ৬ হাজার টিইইউএস কনটেইনার বেশি।

বন্দরে যখন কনটেইনার জট কমানোর ব্যস্ততা রয়েছে, তখনই ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয় শিপিং এজেন্টরা। অভিযোগ রয়েছে, এস আলমকেন্দ্রিক ৬টিসহ ৯টি ব্যাংকের চেক বাদেও পে-অর্ডার নগদায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস কিংবা জাহাজীকরণ করার ক্ষেত্রে কনটেইনার ভাড়া, জাহাজ ভাড়া, শিপিং এজেন্ট চার্জসহ নানান ফি ও সেবামূল্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করে আমদানি-রপ্তানিকারকরা।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
বাংলাদেশে শিপিং কার্যক্রম পরিচালনা করে মেইন লাইন অপারেটর হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন কোম্পানি লিমিটেড। হুন্দাইয়ের বাংলাদেশি এজেন্ট ওশান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড চট্টগ্রামের নির্বাহী গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার না নেওয়ার জন্য।

মূলত পে-অর্ডার নগদায়নের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে সম্প্রতি ব্যাংকিং ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আপাতত শুধু ওই ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না।’

শুধু ওশান ইন্টারন্যাশনাল নয়, মার্স্ক লাইন, ফামফা সলিউশনসহ শীর্ষ শতাধিক শিপিং অপারেটররা এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ছয় ব্যাংকসহ ৯ ব্যাংকের পে-অর্ডার গ্রহণ করছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অফিসের বাইরে ব্যাংকগুলোর নামের তালিকাও টাঙিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় আরেক শিপিং এজেন্ট এমজিএইচ লজিস্টিকের সিইও সৈয়দ ইকবাল আলী শিমুলের জানান, ‘সবগুলো শিপিং কিংবা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এজেন্ট বিত্তবান নন।

অনেক মধ্য শ্রেণির এজেন্ট রয়েছে। কিছু এজেন্ট কোনো কনসাইনমেন্টে ২০-৫০ ডলারও কমিশন পান। সেখানে কারও শত কিংবা হাজার ডলার মূল্যের পে-অর্ডার নগদায়ন না হলে এজেন্টগুলোকে দায় নিতে হবে। যে কারণে এজেন্টগুলো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে কয়েকটি ব্যাংকের পে-অর্ডার নিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘যেসব পে-অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না, সিঅ্যান্ডএফ কিংবা আমদানিকারকরা ওইসব ব্যাংকের পে-অর্ডারগুলো ভাঙিয়ে অন্য ব্যাংকের পে-অর্ডার দিলে তো সমস্যা হচ্ছে না। এখন যেহেতু বিষয়টি জানাজানি হয়েছে, সেসব ব্যাংক বাদ দিয়ে অন্য ব্যাংকগুলো থেকে পে-অর্ডার করে শিপিং চার্জ জমা দিলে তো কোনো সমস্যা থাকছে না।’

শিপিং এজেন্টগুলোর এ পদক্ষেপে নাখোশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘যেসব শিপিং এজেন্ট বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, তারা এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। কারণ যে ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার নেওয়া হচ্ছে, সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকগুলো তো বন্ধ করেনি। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের নিয়ন্ত্রণে, সেহেতু ব্যবসায়ীদের পে-অর্ডার কিংবা চেক নগদায়নেও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরপরই এখন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় বন্দরে আমদানি পণ্যের খালাস ব্যাহত হয়ে আসছে। এতে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ব্যবসায়ীরা দ্রুততার সঙ্গে পণ্য খালাস করছিলেন, এর মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি শিপিং এজেন্ট ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদানি পণ্য খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের প্রতিনিধিরা পে-অর্ডার নিয়ে গেলে সেগুলো ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এতে বিলম্বিত হচ্ছে আমদানি পণ্য খালাস।

গার্মেন্টস রপ্তানিকারকদের লিড টাইম হারাতে হচ্ছে। পাশাপাশি খালাস বিলম্বিত হওয়ায় আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে বন্দর ডেমারেজ। যার নেতিবাচক প্রভাবে রপ্তানিসহ দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের চেক, অনেক ক্ষেত্রে পে-অর্ডারও নগদায়ন হচ্ছে না। সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার নিয়ে পণ্য ছাড় দিলে পরে এজেন্টগুলোকেই বিপাকে পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যাগুলো থেকে ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে সাময়িকভাবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য স্টেকহোল্ডারদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জানতে ফোন করলেও কেউই রিসিভ করেননি। দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা সবাই চাকরি করি।

এখানে ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট থেকে যে রকম সিদ্ধান্ত আসে, মাঠ পর্যায়ে তথা শাখাগুলোতে সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়। তবে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে।’

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

চট্টগ্রাম বন্দরে পে-অর্ডার জটিলতা, ক্ষতির মুখে আমদানি-রপ্তানি

আপডেট সময় : ০৯:০১:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

 

• ৯ ব্যাংকের পে-অর্ডার নিচ্ছে না শিপিং এজেন্টগুলো
• বিলম্বিত হচ্ছে পণ্য খালাস
• লিড টাইম হারানোর শঙ্কা রপ্তানিকারকদের

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নয়টি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক শীর্ষ শিপিং এজেন্টগুলো। এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস বিলম্বিত হচ্ছে, বিপত্তি তৈরি হয়েছে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ নিয়েও। লিড টাইম (পণ্য জাহাজীকরণের সময়) হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। ফলে দেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর একে একে পরিবর্তন আসতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে। দীর্ঘসময় ধরে চলে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের নানান অনিয়ম ধরা পড়ে। সেসব অনিয়ম বন্ধ হওয়ায়, বিশেষ করে ঋণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমস্যাবহুল ব্যাংকগুলোকে নগদ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সমস্যায় ৯ ব্যাংক
এতে বেশি বিপাকে পড়ে ইসলামী ব্যাংকসহ এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন ছয়টি ব্যাংক। বিগত সময়ে এস আলম গ্রুপের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এস আলম গ্রুপের বাইরে থেকেও বিপাকে পড়ে বিগত সময়ে সমস্যাগ্রস্ত ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। তবে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের থাকলেও ওই ব্যাংকে আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী শিল্পগ্রুপের সম্পৃক্ততা থাকায় সেটিকে তেমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি।

কনটেইনার জটের বর্তমান পরিস্থিতি
বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কারফিউ ও সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

৫ আগস্ট সরকার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি হয় কনটেইনার জট।

চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে ৪৪ হাজারের বেশি কনটেইনারের জট লাগে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাসে গতি বাড়ে। ধীরে ধীরে কনটেইনার জট কমতে থাকে।

সবশেষ শনিবার (২৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৫৯৮ টিইইউএস, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখনো প্রায় ৬ হাজার টিইইউএস কনটেইনার বেশি।

বন্দরে যখন কনটেইনার জট কমানোর ব্যস্ততা রয়েছে, তখনই ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয় শিপিং এজেন্টরা। অভিযোগ রয়েছে, এস আলমকেন্দ্রিক ৬টিসহ ৯টি ব্যাংকের চেক বাদেও পে-অর্ডার নগদায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস কিংবা জাহাজীকরণ করার ক্ষেত্রে কনটেইনার ভাড়া, জাহাজ ভাড়া, শিপিং এজেন্ট চার্জসহ নানান ফি ও সেবামূল্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করে আমদানি-রপ্তানিকারকরা।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
বাংলাদেশে শিপিং কার্যক্রম পরিচালনা করে মেইন লাইন অপারেটর হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন কোম্পানি লিমিটেড। হুন্দাইয়ের বাংলাদেশি এজেন্ট ওশান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড চট্টগ্রামের নির্বাহী গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার না নেওয়ার জন্য।

মূলত পে-অর্ডার নগদায়নের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে সম্প্রতি ব্যাংকিং ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আপাতত শুধু ওই ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না।’

শুধু ওশান ইন্টারন্যাশনাল নয়, মার্স্ক লাইন, ফামফা সলিউশনসহ শীর্ষ শতাধিক শিপিং অপারেটররা এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ছয় ব্যাংকসহ ৯ ব্যাংকের পে-অর্ডার গ্রহণ করছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অফিসের বাইরে ব্যাংকগুলোর নামের তালিকাও টাঙিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় আরেক শিপিং এজেন্ট এমজিএইচ লজিস্টিকের সিইও সৈয়দ ইকবাল আলী শিমুলের জানান, ‘সবগুলো শিপিং কিংবা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এজেন্ট বিত্তবান নন।

অনেক মধ্য শ্রেণির এজেন্ট রয়েছে। কিছু এজেন্ট কোনো কনসাইনমেন্টে ২০-৫০ ডলারও কমিশন পান। সেখানে কারও শত কিংবা হাজার ডলার মূল্যের পে-অর্ডার নগদায়ন না হলে এজেন্টগুলোকে দায় নিতে হবে। যে কারণে এজেন্টগুলো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে কয়েকটি ব্যাংকের পে-অর্ডার নিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘যেসব পে-অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না, সিঅ্যান্ডএফ কিংবা আমদানিকারকরা ওইসব ব্যাংকের পে-অর্ডারগুলো ভাঙিয়ে অন্য ব্যাংকের পে-অর্ডার দিলে তো সমস্যা হচ্ছে না। এখন যেহেতু বিষয়টি জানাজানি হয়েছে, সেসব ব্যাংক বাদ দিয়ে অন্য ব্যাংকগুলো থেকে পে-অর্ডার করে শিপিং চার্জ জমা দিলে তো কোনো সমস্যা থাকছে না।’

শিপিং এজেন্টগুলোর এ পদক্ষেপে নাখোশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘যেসব শিপিং এজেন্ট বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, তারা এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। কারণ যে ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার নেওয়া হচ্ছে, সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকগুলো তো বন্ধ করেনি। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের নিয়ন্ত্রণে, সেহেতু ব্যবসায়ীদের পে-অর্ডার কিংবা চেক নগদায়নেও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরপরই এখন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় বন্দরে আমদানি পণ্যের খালাস ব্যাহত হয়ে আসছে। এতে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ব্যবসায়ীরা দ্রুততার সঙ্গে পণ্য খালাস করছিলেন, এর মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি শিপিং এজেন্ট ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদানি পণ্য খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের প্রতিনিধিরা পে-অর্ডার নিয়ে গেলে সেগুলো ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এতে বিলম্বিত হচ্ছে আমদানি পণ্য খালাস।

গার্মেন্টস রপ্তানিকারকদের লিড টাইম হারাতে হচ্ছে। পাশাপাশি খালাস বিলম্বিত হওয়ায় আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে বন্দর ডেমারেজ। যার নেতিবাচক প্রভাবে রপ্তানিসহ দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের চেক, অনেক ক্ষেত্রে পে-অর্ডারও নগদায়ন হচ্ছে না। সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার নিয়ে পণ্য ছাড় দিলে পরে এজেন্টগুলোকেই বিপাকে পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যাগুলো থেকে ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে সাময়িকভাবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য স্টেকহোল্ডারদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জানতে ফোন করলেও কেউই রিসিভ করেননি। দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা সবাই চাকরি করি।

এখানে ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট থেকে যে রকম সিদ্ধান্ত আসে, মাঠ পর্যায়ে তথা শাখাগুলোতে সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়। তবে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে।’