ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

বন্যার ক্ষতচিহ্ন ফেনীর ৩৪২ সড়কে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / 48
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ফেনীতে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি। টানা এক সপ্তাহের বন্যায় জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৩৪২টি সড়ক ও ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্যান্য উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যা পরবর্তী বেশিরভাগ উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যায় ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাঁশপদুয়া এলাকার সড়ক সাহেব নগর জঙ্গলকোনা রাস্তা, কাওতলি সড়ক, কালী কৃষ্ণনগর সড়ক, সুবার বাজার সড়ক, সোনাগাজীর কসকা পূর্ব সুলতানপুর ইউনিয়ন সড়কসহ ফেনী সদর, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঞা উপজেলার গ্রামীণ পর্যায়ের অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলে ভোগান্তি বেড়ে গেছে।

পরশুরামের বাঁশপদুয়া এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, বন্যায় আমাদের রাস্তাটি একেবারে ভেঙে বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে রাস্তার ইট-বালু সব ভেসে এখন মাটি দেখা যাচ্ছে। রাস্তাটি চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় কোনো সংস্থা ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এদিকে আসতেও পারছেন না।

সোনাগাজীর নবাবপুর এলাকার বাসিন্দা আল ইমরান বলেন, বন্যায় আমাদের ইউনিয়নে প্রায় সবকটি গ্রামীণ সড়ক এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যে বাড়িতে বাড়িতে যাবে সে অবস্থাও নেই।

সাহেদ সাব্বির নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, এখনও সোনাগাজীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামেনি। এ জন্য এখনো সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে এবারের বন্যায় অধিকাংশ রাস্তারই বেহাল অবস্থা দৃশ্যমান হবে।

ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুলু রানী বনিক বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট সব ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় জেলার প্রায় ৩ হাজার রাস্তা পানির নিচে ডুবে ছিলো। পানির স্রোতের কারণে অধিকাংশ সড়কে ভাঙন ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, বন্যার ভয়াবহতা সবস্থানে আঘাত করলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচু এলাকাগুলো। আমাদের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রায় ৩ হাজার সড়ক বন্যায় পানিতে ডুবে ছিলো।

এর মধ্যে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এছাড়াও রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই এগুলো সংস্কার শুরু হবে।

ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, বন্যার কারণে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হলেও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমরা খুব শীঘ্রই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করব।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

বন্যার ক্ষতচিহ্ন ফেনীর ৩৪২ সড়কে

আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

 

ফেনীতে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি। টানা এক সপ্তাহের বন্যায় জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৩৪২টি সড়ক ও ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্যান্য উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যা পরবর্তী বেশিরভাগ উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যায় ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাঁশপদুয়া এলাকার সড়ক সাহেব নগর জঙ্গলকোনা রাস্তা, কাওতলি সড়ক, কালী কৃষ্ণনগর সড়ক, সুবার বাজার সড়ক, সোনাগাজীর কসকা পূর্ব সুলতানপুর ইউনিয়ন সড়কসহ ফেনী সদর, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঞা উপজেলার গ্রামীণ পর্যায়ের অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলে ভোগান্তি বেড়ে গেছে।

পরশুরামের বাঁশপদুয়া এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, বন্যায় আমাদের রাস্তাটি একেবারে ভেঙে বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে রাস্তার ইট-বালু সব ভেসে এখন মাটি দেখা যাচ্ছে। রাস্তাটি চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় কোনো সংস্থা ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এদিকে আসতেও পারছেন না।

সোনাগাজীর নবাবপুর এলাকার বাসিন্দা আল ইমরান বলেন, বন্যায় আমাদের ইউনিয়নে প্রায় সবকটি গ্রামীণ সড়ক এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যে বাড়িতে বাড়িতে যাবে সে অবস্থাও নেই।

সাহেদ সাব্বির নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, এখনও সোনাগাজীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামেনি। এ জন্য এখনো সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে এবারের বন্যায় অধিকাংশ রাস্তারই বেহাল অবস্থা দৃশ্যমান হবে।

ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুলু রানী বনিক বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট সব ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় জেলার প্রায় ৩ হাজার রাস্তা পানির নিচে ডুবে ছিলো। পানির স্রোতের কারণে অধিকাংশ সড়কে ভাঙন ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, বন্যার ভয়াবহতা সবস্থানে আঘাত করলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচু এলাকাগুলো। আমাদের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রায় ৩ হাজার সড়ক বন্যায় পানিতে ডুবে ছিলো।

এর মধ্যে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এছাড়াও রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই এগুলো সংস্কার শুরু হবে।

ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, বন্যার কারণে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হলেও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমরা খুব শীঘ্রই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করব।