ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

মাদ্রাসার পরিচালক সেজে জিআর বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 62
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাদ্রাসার পরিচালক-সভাপতি সেজে ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিশেষ বরাদ্দের (জিআর) চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পেয়ে ওই চাল আত্মসাৎ করেছে একটি সিন্ডিকেট।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মু’মিন (রা.) মহিলা এতিমখানার পরিচালক দাবি করা মো. ইলিয়াছ শরীফ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। আটক ইলিয়াছ শরীফ উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামের মৃত ইউছুফ শরীফের ছেলে।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ইলিয়াছ শরীফের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী মো. সোহাগ। পরে ইলিয়াছকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে উপজেলার ১৫টি মাদ্রাসা ও এতিমখানাকে ১ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করে অর্থ নিয়ে যায়।

আবেদনকারীদের মধ্যে বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মু’মিন (রা.) মহিলা এতিমখানা জন্য মো. ইলিয়াছ শরীফ, গোপীনাথপুর জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদ্রাসা জন্য মো. সালাউদ্দিন, গোপীনাথপুর মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য হাফেজ মো. আবদুল হামিদ, করেরহাট আমিন হেফজখানা ও এতিমখানার জন্য মাওলানা খায়রুল আমিন জেলা প্রশাসকের কাছে বিশেষ বরাদ্দের আবেদন করেন।

কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া আনজ্জুমান নাহার মহিলা এতিমখানার জন্য আবেদন করেন আঞ্জুমান নাহার নামে এক নারী। কিন্তু ওই নারী বরাদ্দের ১ টন চাল বিক্রি করে অর্থ নিয়ে গেলেও উপজেলায় ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই নেই। আঞ্জুমান নাহার ও আটক ইলিয়াছ শরীফ সম্পর্কে ভাইবোন।

গোপীনাথপুর জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদ্রাসা ও গোপীনাথপুর মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক মাওলানা জমির উদ্দিন বলেন, সালাউদ্দিন ও হাফেজ আবদুল হামিদ তাদের মাদ্রাসার কেউ নন।

কিন্তু তারা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে তাদের মাদ্রাসার নামে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে সেই চাল বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর তদন্ত করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। জালিয়াত চক্রের একজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

আনজ্জুমান নাহার মহিলা এতিমখানার নামে বরাদ্দের চাল বিক্রির টাকা সরকারি আইন অনুযায়ী অফিসে ফেরত দিয়ে গেছে। অপর তিনজনকে অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্রটি সরকারি বিশেষ বরাদ্দ তুলে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। চক্রের অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে প্রকল্প কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপ্তেশ রায় জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারীর একটি মামলায় মো. ইলিয়াছ শরীফ নামে আটক একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

মাদ্রাসার পরিচালক সেজে জিআর বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ

আপডেট সময় : ১১:৩৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাদ্রাসার পরিচালক-সভাপতি সেজে ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিশেষ বরাদ্দের (জিআর) চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পেয়ে ওই চাল আত্মসাৎ করেছে একটি সিন্ডিকেট।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মু’মিন (রা.) মহিলা এতিমখানার পরিচালক দাবি করা মো. ইলিয়াছ শরীফ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। আটক ইলিয়াছ শরীফ উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামের মৃত ইউছুফ শরীফের ছেলে।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ইলিয়াছ শরীফের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী মো. সোহাগ। পরে ইলিয়াছকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে উপজেলার ১৫টি মাদ্রাসা ও এতিমখানাকে ১ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করে অর্থ নিয়ে যায়।

আবেদনকারীদের মধ্যে বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মু’মিন (রা.) মহিলা এতিমখানা জন্য মো. ইলিয়াছ শরীফ, গোপীনাথপুর জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদ্রাসা জন্য মো. সালাউদ্দিন, গোপীনাথপুর মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য হাফেজ মো. আবদুল হামিদ, করেরহাট আমিন হেফজখানা ও এতিমখানার জন্য মাওলানা খায়রুল আমিন জেলা প্রশাসকের কাছে বিশেষ বরাদ্দের আবেদন করেন।

কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া আনজ্জুমান নাহার মহিলা এতিমখানার জন্য আবেদন করেন আঞ্জুমান নাহার নামে এক নারী। কিন্তু ওই নারী বরাদ্দের ১ টন চাল বিক্রি করে অর্থ নিয়ে গেলেও উপজেলায় ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই নেই। আঞ্জুমান নাহার ও আটক ইলিয়াছ শরীফ সম্পর্কে ভাইবোন।

গোপীনাথপুর জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদ্রাসা ও গোপীনাথপুর মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক মাওলানা জমির উদ্দিন বলেন, সালাউদ্দিন ও হাফেজ আবদুল হামিদ তাদের মাদ্রাসার কেউ নন।

কিন্তু তারা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে তাদের মাদ্রাসার নামে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে সেই চাল বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর তদন্ত করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। জালিয়াত চক্রের একজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

আনজ্জুমান নাহার মহিলা এতিমখানার নামে বরাদ্দের চাল বিক্রির টাকা সরকারি আইন অনুযায়ী অফিসে ফেরত দিয়ে গেছে। অপর তিনজনকে অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্রটি সরকারি বিশেষ বরাদ্দ তুলে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। চক্রের অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে প্রকল্প কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপ্তেশ রায় জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারীর একটি মামলায় মো. ইলিয়াছ শরীফ নামে আটক একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।