তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, হাসপাতালে রোগীর চাপ
- আপডেট সময় : ১২:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
- / 79
বসন্তের দিন ফুরিয়ে রুক্ষ প্রকৃতিতে এখন কেবলই সূর্যের সীমাহীন উত্তাপ। বৈশাখের পূর্ব থেকেই খরতাপে পুড়ছে দেশ। তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র অসহনীয় গরমে সবচেয়ে কষ্টে আছেন দিনমজুর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
রৌদ্র ও গরমের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, বাইরে কাজে বের হয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জীবিকার তাগিদে উপায়ান্ত না পেয়ে তীব্র রোদেই কাজে বের হতে হয় খেটে খাওয়া মানুষদের। দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি।
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ঢাকাসহ কয়েকটি বিভাগে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এতে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়। এদের মধ্যে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এই গরমে তাদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি জ্বর-ঠান্ডার তীব্রতা বেশি হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে বলেছেন তাঁরা।
এপ্রিলের মাঝামাঝিতেই শিশু হাসপাতালে একটি বেডও ফাঁকা নেই। জ্বর-সর্দি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ব্যাপক চাপ।
চিকিৎসকেরা বলছেন, তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, জ্বর-ঠান্ডা।
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগী জানালেন, ঠান্ডা-কাশি আর জ্বর নিয়ে ১১ দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, প্রচন্ড গরমে হাসপাতালে জ্বর-সর্দি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। এ ছাড়া ঈদ ও নববর্ষে গুরুপাক খাবার খাওয়ার কারণেও অনেকে পেটের নানা সমস্যা নিয়ে আসছে। তীব্র গরমে এ খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাথী সুলতানা বলেন, ‘হাসপাতালের সব বেডে রোগী। নতুন কোনো রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ রোগীই জ্বর-সর্দি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এই গরমে অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।’
ডায়রিয়া হলে কী করবেন?
এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খাবেন। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সী) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানা শেষে এক গ্লাস (২৫০ মি.লি.) খাবার স্যালাইন খাবেন। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন, তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে, আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন।
শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে খাওয়ান, যেমন- ৩ বা ৪ মিনিট পর পর এক চা-চামচ করে স্যালাইন খেতে দিন। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি ২ বছরের নিচের শিশু অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবে এবং কোনও অবস্থাতেই এটা বন্ধ করা যাবে না।
৬ মাসের বেশি বয়সী রোগী ওরস্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবে।
রোগীকে ওরস্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার, যেমন- ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ, ইত্যাদি খাওয়াবেন।
রোগীকে কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়াবেন না।
৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুকে প্রতিদিন একটি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াবেন। তারপরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে বা বেশি খারাপ হলে দ্রুত কাছের হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়
পানি ফুটানোর সময় বলক ওঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন এবং ঠান্ডা করে পান করুন। ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি ৩ লিটার পানিতে একটি পানি-বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে।
রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার খাবেন না। খাবার খাওয়ার আগে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোবেন।
পায়খানা করার পর অথবা শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন।
ফিডারে শিশুকে কিছুই খাওয়াবেন না। যদি খাওয়াতেই হয় তবে ফুটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ফিডারটি ধুয়ে নেবেন। ফিডারের নিপলের ছিদ্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
নিউজটি শেয়ার করুন