নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত
- আপডেট সময় : ১১:০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 1
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন এবং তার ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের।
বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাস পার হয়েছে। সরকারের প্রধান কাজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা —এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে জোরালো বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে জোর দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি ও জামায়াত।
২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তার ওই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা। রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, নির্দিষ্ট করে নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণা দিলে জনগণ আরও বেশি আশান্বিত হতো।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুরুতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানাচ্ছে।
অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামী সংস্কারে গুরুত্ব দিলেও বিলম্বিত নির্বাচন চায় না। তারা বলছে, যৌক্তিক সময়ের পরে এক মিনিটও সময় দেওয়া হবে না অন্তর্বর্তী সরকারকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জানান, সর্বপ্রথম প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ যে, তিনি নির্বাচনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
এই ধরনের সম্ভাব্য তারিখের কথা এর আগেও বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা বিভিন্ন পর্যায়ে বলেছেন। তবে নির্দিষ্ট করে যেদিন নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণা দেওয়া হবে, সেদিন জাতি আরও বেশি আশান্বিত হতে পারবে।
নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হলে যারা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের জন্য ভালো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য যে তারিখ ঘোষণা করেছেন, তা একেবারে খারাপ না।
তবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে একটি নির্দিষ্ট তারিখ হওয়া জরুরি। নির্বাচনী রোডম্যাপও ঘোষণা হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে যত দ্রুত নির্বাচন হবে ততই জাতির জন্য মঙ্গলজনক। অবশিষ্ট সংস্কার নির্বাচিত সরকার করলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে।
অপরদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আইমর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সরকার নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেনি। সংস্কারকে দ্রুত এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণাটাও দিয়ে দিন। ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, যৌক্তিক সময়ের চেয়ে একটি মিনিটও বেশি নেবেন না। আমরা বলব, সংস্কারকে দ্রুত এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণাটাও দিয়ে দিন। আজকেই দাবি করছি না, তবে ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরি হবে।
এই সরকার আবার মইন ইউ সরকারের মতো নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় বসার অভিলাষ প্রকাশ করবে না। এ সরকারের কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত্ হতে চান, তাহলে তাদের দায়িত্ব হবে এ সরকার থেকে চলে যাওয়া। তারা সরকার থেকে চলে গিয়ে দল গঠন করলে সেটি স্বচ্ছ হবে।
প্রসঙ্গত, বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, সব প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি।
তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।
নিউজটি শেয়ার করুন