ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

পুলিশের নিষেধাজ্ঞায় থোড়াই কেয়ার

বারুদের গন্ধ পটকা-আতশবাজির বিকট শব্দে কাঁপছে ঢাকা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৫:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 8
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রক্ষার স্বার্থে ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফানুস ওড়ানো ও পটকা-আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ।

তবে রাত ১২টা বাজার আগেই সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার উদযাপনে নেমেছে যেন পুরো ঢাকা নগরী। ঠিকই আকাশে ফানুস ওড়লো ও পটকা-আতশবাজি ফুটিয়ে বিদায় জানানো হলো ২০২৪ সালকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে মিরপুর, শ্যামলী, রামপুরা, মহাখালী, শান্তিনগর, গুলশান বনানী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পটকা ও আতশবাজি ফোটাতে। আবার রাত ১২টা বাজার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ির ছাদ থেকে যেন আগুনের ফুলকি ওড়া শুরু হয়। ওড়ানো হয় ফানুস।

এ ছাড়া অনেক আবাসিক এলাকার ফাঁকা বাসা-বাড়ি ও ফাঁকা জায়গা থেকেও ওড়ানো হয় ফানুস। এর ফলে নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে আগুন লাগার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই ফানুস উড়ানো এবং পটকা আর আতশবাজি ফোটানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন এলাকায় ফানুস উড়ানো হচ্ছে এবং আতশবাজি ফোটানো হচ্ছে। এতে করে অগ্নিসংযোগের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও কীভাবে ফানুস উড়ানো হয় কিংবা আতশবাজি ফোটানো হয়, সেটা নিয়ে তারা প্রশ্ন রাখছেন।

মিরপুর ৬০ ফিট এলাকার নারী বাসিন্দা উম্মে সুরাইয়া বলেন, তিন মাসের বাচ্চা নিয়ে বিপাকে আছি। আমি যে বাসায় আছি এ বাসার ছাদেও উড়েছে ফানুস, ফুটেছে পটকা আর আতশবাজি। থোড়াই কেয়ার। কে শোনে কার কথা। বাসার মালিককে আগেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। শুধু এই বাসায় নয়, আশপাশের অনেক বাসায় একই অবস্থা। বিকট শব্দ থেকে বাচ্চাকে রক্ষার জন্য বাসার সব দরজা-জানালা লাগিয়েও কাজ হয়নি।

শ্যামলীর বাসিন্দা ইকবাল হাসান বলেন, রাত ১২টার আগেই শুরু হয়ে গেছে পটকাবাজি। ফানুসও উড়ছে। আতঙ্কে এলাকাবাসী। অনেকে আবার আনন্দে উদ্বেলিত। একটু সামনেই থানা ভবন। আদাবর থানার কাছের ভবন থেকেই ফানুস উড়ছে, আতশবাজি চলেছে। পুলিশ নিষেধাজ্ঞার পরও এসব কার্যকলাপ চলার কারণ পুলিশ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়েই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বনানী-১১ এং সড়কের বাসিন্দা মিনহাজ আবেদীন বলেন, রাতের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পুলিশের দায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েই শেষ। শোডাউন চলছে, হইহুল্লোড় চলছে। অনেক বাসায় ঘটা করে পটকা আতশবাজি চলেছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে পুলিশের উচিত ছিল এসব বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া। কারণ বাসায় বাসায় তো আর আতশবাজি পটকা তৈরি হয় না। তৈরি ও বিক্রির জায়গাতেই জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে পারলে এটা অনেকাংশেই বন্ধ করা সম্ভব ছিল।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ডিএমপি কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থার্টি ফার্স্ট উদযাপিত হয়। বেশিরভাগ দেশে এটি নববর্ষ, আমাদের দেশে নয়।

দ্বিতীয়ত, অন্যান্য দেশে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করা হয়, পুরো শহরজুড়ে আতশবাজি ফোটানো হয় না। আমরাও এ বছর ঢাকা মহানগরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে থার্টি ফার্স্ট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু এই বছর আমরা সেটি পারিনি। আশা করি আগামী বছর আমরা সেটি আয়োজন করবো।

তিনি বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে যাতে আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমা না ফোটানো হয় সেজন্য গত এক সপ্তাহ ডিএমপি রাজধানীতে অভিযান পরিচালনা করে ১২৭ কেজি আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমা জব্দ করেছি। এ বিষয়ে ৫টি মামলা হয়েছে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ সময় তিনি নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, শুধু পুলিশ বা পরিবেশ অধিদপ্তর দিয়ে শব্দ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রক্ষার স্বার্থে ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

নির্দেশনার অন্যতম হচ্ছে, অনুমতি ব্যতীত উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যালি ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় যে কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো।

৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা হতে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব বার বন্ধ থাকবে। আবাসিক হোটেলগুলো সীমিত আকারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে। ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা হতে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব ধরনের লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাত ৮টার পরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যবৃন্দকে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। উচ্চ শব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো বা গণ-উপদ্রব সৃষ্টি করে এমন কোনো গান-বাজনা চালানো যাবে না।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমরা যে নগরবাসীর জন্য ম্যাসেজ দিই তা টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া দেখেন তারা পান। কিন্তু যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, ছিন্নমূলের মানুষ তাদের কাছে পৌঁছে না। আমি মিরপুরে এখনো রাস্তায় ঘুরছি। এই শ্রেণির মানুষ বেশি পটকা-আতশবাজির নামে উদযাপনে মেতেছে।

কিন্তু আবাসিক এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি বাসার ছাদে পটকা আতশবাজি চলছে। এই শ্রেণি তো বেশির ভাগ শিক্ষিত। তারা তো ডিএমপির ম্যাসেজও পেয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। সবকিছু জেনে-বুঝেও অভিভাবকরাই সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই অননুমোদিত উদযাপনে।

তিনি বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক পটকা-আতশবাজির পণ্য জব্দ করেছি। তবে আমাদের নগরবাসীর সহযোগিতা দরকার। তাদের আরও বেশি সচেতনতা দরকার। পাশাপাশি পুলিশকেও মনে হয় আরও বেশি অ্যাকটিভ হওয়া দরকার। আর সীমান্ত থেকেই এসব পণ্য বেশি আসে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে। সেখানে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত আমাদের। আমরা হয়তো এটা বন্ধ করতে পারবো না, নগরবাসীর সহযোগিতা পেলে এটা একটা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব, যেটা সবারই কাম্য।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

পুলিশের নিষেধাজ্ঞায় থোড়াই কেয়ার

বারুদের গন্ধ পটকা-আতশবাজির বিকট শব্দে কাঁপছে ঢাকা

আপডেট সময় : ০৮:৩৫:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

 

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রক্ষার স্বার্থে ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফানুস ওড়ানো ও পটকা-আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ।

তবে রাত ১২টা বাজার আগেই সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার উদযাপনে নেমেছে যেন পুরো ঢাকা নগরী। ঠিকই আকাশে ফানুস ওড়লো ও পটকা-আতশবাজি ফুটিয়ে বিদায় জানানো হলো ২০২৪ সালকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে মিরপুর, শ্যামলী, রামপুরা, মহাখালী, শান্তিনগর, গুলশান বনানী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পটকা ও আতশবাজি ফোটাতে। আবার রাত ১২টা বাজার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ির ছাদ থেকে যেন আগুনের ফুলকি ওড়া শুরু হয়। ওড়ানো হয় ফানুস।

এ ছাড়া অনেক আবাসিক এলাকার ফাঁকা বাসা-বাড়ি ও ফাঁকা জায়গা থেকেও ওড়ানো হয় ফানুস। এর ফলে নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে আগুন লাগার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই ফানুস উড়ানো এবং পটকা আর আতশবাজি ফোটানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন এলাকায় ফানুস উড়ানো হচ্ছে এবং আতশবাজি ফোটানো হচ্ছে। এতে করে অগ্নিসংযোগের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও কীভাবে ফানুস উড়ানো হয় কিংবা আতশবাজি ফোটানো হয়, সেটা নিয়ে তারা প্রশ্ন রাখছেন।

মিরপুর ৬০ ফিট এলাকার নারী বাসিন্দা উম্মে সুরাইয়া বলেন, তিন মাসের বাচ্চা নিয়ে বিপাকে আছি। আমি যে বাসায় আছি এ বাসার ছাদেও উড়েছে ফানুস, ফুটেছে পটকা আর আতশবাজি। থোড়াই কেয়ার। কে শোনে কার কথা। বাসার মালিককে আগেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। শুধু এই বাসায় নয়, আশপাশের অনেক বাসায় একই অবস্থা। বিকট শব্দ থেকে বাচ্চাকে রক্ষার জন্য বাসার সব দরজা-জানালা লাগিয়েও কাজ হয়নি।

শ্যামলীর বাসিন্দা ইকবাল হাসান বলেন, রাত ১২টার আগেই শুরু হয়ে গেছে পটকাবাজি। ফানুসও উড়ছে। আতঙ্কে এলাকাবাসী। অনেকে আবার আনন্দে উদ্বেলিত। একটু সামনেই থানা ভবন। আদাবর থানার কাছের ভবন থেকেই ফানুস উড়ছে, আতশবাজি চলেছে। পুলিশ নিষেধাজ্ঞার পরও এসব কার্যকলাপ চলার কারণ পুলিশ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়েই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বনানী-১১ এং সড়কের বাসিন্দা মিনহাজ আবেদীন বলেন, রাতের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পুলিশের দায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েই শেষ। শোডাউন চলছে, হইহুল্লোড় চলছে। অনেক বাসায় ঘটা করে পটকা আতশবাজি চলেছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে পুলিশের উচিত ছিল এসব বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া। কারণ বাসায় বাসায় তো আর আতশবাজি পটকা তৈরি হয় না। তৈরি ও বিক্রির জায়গাতেই জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে পারলে এটা অনেকাংশেই বন্ধ করা সম্ভব ছিল।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ডিএমপি কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থার্টি ফার্স্ট উদযাপিত হয়। বেশিরভাগ দেশে এটি নববর্ষ, আমাদের দেশে নয়।

দ্বিতীয়ত, অন্যান্য দেশে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করা হয়, পুরো শহরজুড়ে আতশবাজি ফোটানো হয় না। আমরাও এ বছর ঢাকা মহানগরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে থার্টি ফার্স্ট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু এই বছর আমরা সেটি পারিনি। আশা করি আগামী বছর আমরা সেটি আয়োজন করবো।

তিনি বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে যাতে আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমা না ফোটানো হয় সেজন্য গত এক সপ্তাহ ডিএমপি রাজধানীতে অভিযান পরিচালনা করে ১২৭ কেজি আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমা জব্দ করেছি। এ বিষয়ে ৫টি মামলা হয়েছে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ সময় তিনি নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, শুধু পুলিশ বা পরিবেশ অধিদপ্তর দিয়ে শব্দ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রক্ষার স্বার্থে ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

নির্দেশনার অন্যতম হচ্ছে, অনুমতি ব্যতীত উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যালি ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় যে কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো।

৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা হতে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব বার বন্ধ থাকবে। আবাসিক হোটেলগুলো সীমিত আকারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে। ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা হতে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব ধরনের লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাত ৮টার পরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যবৃন্দকে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। উচ্চ শব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো বা গণ-উপদ্রব সৃষ্টি করে এমন কোনো গান-বাজনা চালানো যাবে না।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমরা যে নগরবাসীর জন্য ম্যাসেজ দিই তা টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া দেখেন তারা পান। কিন্তু যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, ছিন্নমূলের মানুষ তাদের কাছে পৌঁছে না। আমি মিরপুরে এখনো রাস্তায় ঘুরছি। এই শ্রেণির মানুষ বেশি পটকা-আতশবাজির নামে উদযাপনে মেতেছে।

কিন্তু আবাসিক এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি বাসার ছাদে পটকা আতশবাজি চলছে। এই শ্রেণি তো বেশির ভাগ শিক্ষিত। তারা তো ডিএমপির ম্যাসেজও পেয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। সবকিছু জেনে-বুঝেও অভিভাবকরাই সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই অননুমোদিত উদযাপনে।

তিনি বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক পটকা-আতশবাজির পণ্য জব্দ করেছি। তবে আমাদের নগরবাসীর সহযোগিতা দরকার। তাদের আরও বেশি সচেতনতা দরকার। পাশাপাশি পুলিশকেও মনে হয় আরও বেশি অ্যাকটিভ হওয়া দরকার। আর সীমান্ত থেকেই এসব পণ্য বেশি আসে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে। সেখানে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত আমাদের। আমরা হয়তো এটা বন্ধ করতে পারবো না, নগরবাসীর সহযোগিতা পেলে এটা একটা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব, যেটা সবারই কাম্য।