বৈরী আবহাওয়ায় বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা সমাগম কম
- আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
- / 8
রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায় অনেক স্টলের কাজ এখনও চলছে। কিছু স্টলে ক্রেতা আসছেন। তবে আজ ছুটির দিনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এখনও আশানুরূপ ক্রেতা সমাগম হয়নি।
ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, চলমান মূল্যস্ফীতি, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর এখনও বাণিজ্যমেলা জমে উঠেনি।
নতুন বছরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করেন। এরপর সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয় মেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলছে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত।
এবার ফার্নিচার পণ্যকে ২০২৫ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। হল ‘এ’ এর ডান দিকে রয়েছে ফার্নিচার এবং বামদিকে রয়েছে ইলেকট্রনিকসের প্যাভিলিয়ন।
মেলায় একটু পর পর পণ্য নিয়ে ট্রাক আসছে। কিছু স্টলে এখনও পণ্য ওঠানো হয়নি। তারা ট্রাকে পণ্য এনে এখনো স্টল সাজাচ্ছেন। কেউ আবার বাহারি স্লোগানে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
হল ‘এ’ এর প্রবেশ মুখেই রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিগ্যাল ফার্নিচারের প্যাভিলিয়ন। প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার ঋদয় জানান, আবহাওয়ার কারণে এখনও ক্রেতা সমাগম কম। গতকাল শুক্রবার কিছুটা বেচাকেনা হয়েছিল। আজ এখনও সেল শুরু হয়নি।
তিনি জানান, আমরা এ বছর বাণিজ্যমেলাকে সামনে রেখে নতুন কিছু বেডরুম সেট, কিচেন সেট, ড্রয়িংরুম সেট নিয়ে এসেছি। আমাদের সব পণ্যে ফ্ল্যাট ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চলছে। এছাড়া আমাদের হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা আছে।
ভিশন এম্পোরিয়ামের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ খোকন আহমেদ জয় বলেন, শীতের কারণে কাস্টমার একটু কম। গতকাল আমাদের ভাল সেল হয়েছিল। আশা করছি বিকেলে জনসমাগম বাড়বে। প্রতি বছরের মত এবছরও মেলাকে সামনে রেখে আমরা নতুন কিছু মডেল নিয়ে এসেছি। মেলা উপলক্ষে আমাদের সব পণ্যে ফ্ল্যাট ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট চলছে। হোম ডেলিভারির সু-ব্যবস্থা আছে।
হল ‘বি’ ঘুরে দেখা যায় সেখানে দেশি বিদেশি বিভিন্ন স্টলে পণ্য সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। বেশিরভাগ স্টলই ছিল ফাঁকা।
বোম্বে ফুটওয়্যারের সেলসম্যান আসাদ বলেন, আজ শনিবার হওয়ায় আশা করছি ক্রেতা সমাগম বাড়বে। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে শীত বেড়ে যাওয়ায় কাস্টমার আসেনি। আজ সূর্য উঠেছে, তাই বিকেলে ভালো বিক্রি হবে বলে মনে হচ্ছে।
আগের বছরের তুলনায় এবার মেলায় স্টল সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ক্রেতা সমাগম কম। বিক্রেতারা বলছেন অনেক পুরোনো বিক্রেতারা এবার আসেননি। কিন্তু বেশকিছু নতুন ব্যবসায়ী এসেছেন। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি ৭ দেশের ১১ প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে।
তাওসিফ আহমেদ লোন একজন ভারতীয় বিক্রেতা। তিনি ভারতের কাশ্মীর থেকে প্রথমবার বাণিজ্যমেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, প্রথম ২-৩ দিন কোনো বেচাকেনা হয়নি। আমার মনে হয় আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণেই মানুষ মেলায় আসছেন না। আমার স্টলে অরজিনাল কাশ্মীরি শাল, চাদর, কুর্তা, ব্যাগ, ইত্যাদি আছে। আজ এখন পর্যন্ত কোনো বিক্রি হয়নি। আশা করছি দুপুরের পর বিক্রি ভাল হবে।
মোহাম্মদ ইনকিলাব পাকিস্তান থেকে এসেছেন এবারের বাণিজ্যমেলায়। তিনি গত ২২ বছর ধরে মেলায় আসছেন। কথা হলে তিনি বলেন, আমার দোকানের নাম দি খলিল সুজ। এখানে ৬০০ টাকা থেকে ২১০০ টাকার মধ্যে লেডিস সুু, জুতা, কোলাপুরিসহ বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাবে।
বেচাকেনা নিয়ে তিনি বলেন, তেমন একটা বেচাকেনা নেই। সবে তো মেলা শুরু। আজ মাত্র চতুর্থ দিন। আশা করছি কিছুদিন পর বিক্রি বাড়বে।
এছাড়া মূল হলের বাইরেও অনেক স্টল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাবার, গৃহস্থালির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, রেডিমেড স্যুট, জ্যাকেট, শাড়ি, থ্রি-পিস, সিরামিকের বিভিন্ন পণ্য, আচার, খেলনা, পাটজাত দ্রব্য, কার্পেট, ইত্যাদি।
মেলায় দর্শনাথীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন ভিড় কম হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন তারা।
তারা মনি নামে একজন নারী দর্শনার্থী বলেন, আগের বারের তুলনায় এইবার মেলায় লোকজন কম। তাই পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরছি। কিছু বাসার জিনিসপত্র কিনেছি। শেষের দিকে আরেকবার আসবো।
নাদিম নামে একজন দর্শনার্থী আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের হাতে টাকা না থাকলে বেচাকেনা কিভাবে হবে। এমনি দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। আবার সরকার সাধারণ জনগণের উপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। তাহলে কিভাবে চলবে।
আরেক দর্শনার্থী জানান, মেলা মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে হওয়ার কারণে লোকজন কম আসছে। ফাহিম নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, আমি গতবার মেলায় আসিনি। কিন্তু এই বছর এসে যা বুঝলাম, বাণিজ্যমেলার আগের জৌলুশ আর নেই।
আগে যেমন স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আগারগাঁও বাণিজ্যমেলায় যেতাম, এখন তা আর হয়ে ওঠেনা। তাছাড়া মেলায় আসার যোগাযোগ সম্পর্কে অনেকে জানেনা। আবার ঢাকার বাইরে থেকে আসতে হলে কয়েকবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে হয়। আবার এখন মেলা কেবল শুরু, সামনে আরও মানুষ আসবে।
নিউজটি শেয়ার করুন