বাণিজ্য মেলায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / 6
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা থেকে অনেক ক্রেতাই বিশেষ মূল্যছাড়ে পণ্য কিনতে মুখিয়ে থাকেন। আর ক্রেতাদের টানতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাধ্যমতো ছাড় দেয়। অনেক ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ের পাশাপাশি একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি কিংবা প্যাকেজ আকারে মূল্যহ্রাসের ঘোষণা থাকে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) ছিল মেলার সপ্তম দিন। এবার শুরু থেকেই বেশিরভাগ স্টলে পণ্যের ওপর দেওয়া হয়েছে বিশেষ মূল্যছাড়। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন স্টলের মালিকরা।
৩৬২ প্যাভিলিয়ন ও স্টল
এবার মেলায় ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। বাকি ১১টি স্টল ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়ার।
দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শত ভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেশীয় বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, ফার্নিচার, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলার সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামিন, পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ফাস্ট ফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, গৃহসজ্জার উপকরণ ইত্যাদি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।
টিকিটের দাম
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
মেলায় কোথায় কত ছাড়
মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, যন্ত্রপাতি, ফার্নিচার, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, ফার্নিচার, ক্রোকারিজ ও বিভিন্ন ধরনের পণ্যে নির্ধারিত মূল্যের ওপর শতকরা ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, যমুনা গ্রুপের যমুনা ইলেকট্রনিকসের বিভিন্ন পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সব পণ্যে ১২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাভানা ফার্নিচার, ব্রাদার্স ফার্নিচার ও নাদিয়া ফার্নিচারে ছাড় আছে।
মেলার মূল অংশের ডান পাশে কয়েকটি পোশাক ব্র্যান্ডের স্টল রয়েছে। এসব স্টলে বিভিন্ন রকমের ছাড়ে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
মেলার সামনের অংশে বাসনকোসনসহ ক্রোকারিজ, বস্ত্রসামগ্রী ও খাবারের কিছু স্টল রয়েছে। এর মধ্যে রাইস কুকার, গ্যাসের চুলাসহ নানা গৃহস্থালিসামগ্রী পণ্য ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। মেলায় বস্ত্রখাতের স্টলগুলোতে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়ে বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
মেলার মূল ভবনে ইলেকট্রনিকস ও আসবাবের বড় ব্র্যান্ডগুলো স্টল নিয়েছে। এখানে আছে যমুনা, ওয়ালটন, মিনিস্টার ও ভিসতার মতো ব্র্যান্ডগুলো।
আসবাবের উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে হাতিল, রিগ্যাল, নাভানা, আখতার, নাদিয়া, হাতিম, ব্রাদার্স, ডেল্টা, জেএমজি ফার্নিচার প্রভৃতি। এসব ব্র্যান্ড বিভিন্ন রকম ছাড় দিচ্ছে। ক্রেতারা দেখে দেখে নিজেদের পছন্দের জিনিসগুলো কিনছেন।
যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেডের স্টলের ব্যবস্থাপক রাজিব সাহা বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে আমরা মূল্যছাড়ে পণ্য বিক্রি করছি। তাতে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নতমানের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি। ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্মার্ট টিভি ও গুগল টিভিসহ সব পণ্য যমুনার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরির কারণে সহজে ও কম দামে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মেলায় আমরা উন্নত পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাইসকুকার, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, গ্যাস বার্নার, কারি কুকার, ইনফ্রারেড কুকার, রুম হিটার, ব্লেন্ডার মেশিন, মিক্সার গ্রাইন্ডার ও জুস ব্লেন্ডারসহ গৃহস্থালি পণ্যে আমরা বিশেষ ছাড় দিয়েছি।
এ ছাড়া যমুনা ইলেকট্রনিকসের রেফ্রিজারেটরে (ডাবল ডোর ও সিঙ্গেল ডোর) বিশেষ মূল্য ছাড় দেওয়া হয়েছে।’
মেলায় যমুনার স্টলে গৃহস্থালিসামগ্রী দেখছিলেন রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকার গৃহবধূ মাসুদা বেগম। তিনি জানান, ‘যমুনা ইলেকট্রনিকসের গৃহস্থালি পণ্য সব সময়ই কেনা হয়। এগুলো খুবই টেকসই ও মজবুত। মেলায় ছাড় পেয়ে আজ কয়েকটি পণ্য কিনেছি।’
শীর্ষ ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের স্টলের সেলসম্যান তরিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘ওয়ালটনের সব পণ্যে ১২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি আমরা।’
নাভানা ফার্নিচারের স্টলের ব্যবস্থাপক সজীব আহমেদ বলেন, ‘নাভানার প্রতিটি পণ্যে ৫ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বেচাকেনা হচ্ছে না।
অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের মেলায় ক্রেতা কম। তবে দর্শনার্থী বেশি। দেখা যাক, মেলার শেষ পর্যন্ত কী হয়। হয়তো সামনে বিক্রি বাড়বে।’
ব্রাদার্স ফার্নিচারের স্টলের ব্যবস্থাপক মেহেদী মিয়া বলেন, ‘মেলার শুরু থেকে আমাদের প্রায় প্রতিটি পণ্যের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা হচ্ছে না।’
নাদিয়া ফার্নিচারের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সব পণ্যে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।’
শুরুতেই মেলা জমে উঠেছে
তবে এবার শুরুতেই মেলা জমে উঠেছে বলে জানালেন বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার। তিনি বলেন, ‘স্টল মালিকদের নিরাপত্তার দিক ভেবে আমাদের প্রশাসনিক টিম কাজ করছে। এবার শুরু থেকে ক্রেতা ও দর্শনার্থী বেশি। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।’
থাকছে যেসব কর্নার
মেলায় এ বছরই প্রথম সম্ভাবনাময় খাত/পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেকট্রনিকস ও ফার্নিচার জোন।
বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধায় তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশুপার্ক।
মা ও শিশুদের জন্য মেলায় থাকবে মা ও শিশুকেন্দ্র। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক এবং শোভন চেয়ার ও বেঞ্চ রয়েছে।
এক্সিবিশন সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে জুলাই চত্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কালচারাল সেন্টার, প্রযুক্তি কর্নার ও বিনোদন কর্নার রয়েছে। সেন্টারের উত্তর-পূর্ব পাশে শিশুপার্ক এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে ছত্রিশ চত্বর ও নামাজঘর স্থাপন করা হয়েছে।
বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা
মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক উপস্থিত থেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। মেলায় পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধাসংবলিত দ্বিতল কার পার্কিং ভবন রয়েছে। এ ছাড়া মেলা কেন্দ্রের বাইরে আছে ছয় একর জমিতে পার্কিংয়ের আলাদা ব্যবস্থা।
তথ্যকেন্দ্র ও ব্যাংক বুথ
মেলার সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও দর্শনার্থীদের সব ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য রয়েছে তথ্যকেন্দ্র। ব্যাংকিং সেবার জন্য মেলায় অনেক ব্যাংক বুথ স্থাপন করেছে। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিউজটি শেয়ার করুন