ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
- আপডেট সময় : ০২:১১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
- / 78
গাজায় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ১০ মে এটি হওয়ার কথা ছিল।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে ইউএসসি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন বিক্ষোভে উত্তাল। এসব বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনেক শিক্ষকও। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অদূরে।
এদিকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ অমান্য করায় বৃহস্পতিবার ২৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নিউইয়র্ক সিটিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের এদিন রাতের মধ্যে শিবির তুলে নিতে যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করেছে।
ইউএসসি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের উপস্থিতিতে ১০ মে নির্ধারিত স্নাতক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘গণহত্যা থেকে বিচ্ছিন্ন’ থাকার (গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’) আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ইসরায়েলে সরবরাহের জন্য অস্ত্র তৈরিতে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ না করার জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলা বিক্ষোভ নিয়ে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন, তারা কলাম্বিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিরাপদ বোধ করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্য ইহুদি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় গত সপ্তাহে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা নিরসনে তাদের সঙ্গে একটা মতৈক্যে আসতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের গতকাল রাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেছেন, ঐকমত্যে পৌঁছানো না গেলে ক্যাম্পাসে শান্ত অবস্থা ফেরাতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় বিবেচনা করবেন তারা।
গতকালই এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, আলোচনায় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে ও এটি চলবে। এমন অবস্থায় পূর্বঘোষিত সময়সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে জর্জটাউন ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিডব্লিউ) শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিডব্লিউ) ক্যাম্পাসে গতকাল একটি শিবির প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অবস্থান এখন হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তরের অদূরে।
ওয়েসেলস বলেন, আমরা যদি ওয়াশিংটনে কিছু না করি, তবে আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে থাকতে পারব না।
গত রোববার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ধরনের ‘স্পষ্ট ইহুদিবিরোধিতার’ নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে এর কোনো স্থান নেই।’ তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন প্রেসিডেন্ট।
আন্দোলন থেকে ৫৫০ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ৫৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে তাবু টানিয়ে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনতার পক্ষে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিক্ষোভে বাধা দিচ্ছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যেসব প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলে বিনিয়োগ করছে এবং গাজা যুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের কার্যক্রম যেন বন্ধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিতে রাজি। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামাবে না।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হার্ভার্ড, কলাম্বিয়া, ইয়েল, ইউসি বার্কলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিক্ষোভগুলো প্রায়ই অনুমোদন ছাড়াই এবং তা প্রতিরোধ করতে পুলিশ ডাকা হয়। গত দুই দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকদের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারীরা আটলান্টার এমরি ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টেজার এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে।
কর্মীরা বলছেন, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা সজ্জা পরিহিত এবং ঘোড়ার পিঠে চড়ে থাকা অফিসাররা টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ভণ্ডুল করেছে।
এমরি ইউনিভার্সিটিতে একজন অধ্যাপককে মাটিতে ফেলার এবং হাতকড়া পরানোর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ একজন শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে ধস্তাধস্তি করছে। প্রফেসর ক্যারোলিন ফোহলিন তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিক্ষোভকারীদের একটাই কথা, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা জানায়। তারা চায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েলের সঙ্গে জড়িত সেগুলোতে এবং গাজা যুদ্ধে ইন্ধন জোগায় এমন অস্ত্রে তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে আনুক।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, স্পষ্ট ইহুদি বিরোধীতার কোনো ঠাঁই কলেজ ক্যাম্পাসে নেই। তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, রাষ্ট্রপতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন।
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের বাকস্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে।
নিউজটি শেয়ার করুন