ঢাকা ১১:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

নিজের চিকিৎসা নিজেই করল ওরাং ওটাং!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪
  • / 53
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ঔষধি গাছ ব্যবহার করে নিজের ক্ষত সাড়িয়েছে এবং প্রথমবারের মতো তা ক্যামেরায় ধারণও করা হয়েছে। তবে কাজটি কোনো মানুষ করেনি করেছে এক বন্য প্রাণী। ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ায়। বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রান এক ওরাং ওটাং মারামারি করতে গিয়ে গালে আঘাত পায় এবং বড় একটি ক্ষত তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই ক্ষত সাড়াতে নিজেই গাছের পাতা ও কাণ্ড থেকে তৈরি পেস্ট ব্যবহার করত ওই ওরাং ওটাং। গবেষকরা তাকে পেস্ট লাগাতেও দেখেছেন। ফলে এক মাসের মধ্যেই সেড়ে ওঠে ক্ষতটি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আচরণটি পূর্বপুরুষ থেকে সাধারণভাবেই মানুষ এবং বানরের (এপস) মধ্যে আসতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার গুনং লিউসার ন্যাশনাল পার্কের একটি গবেষণা দল ২০২২ সালের জুন মাসে ওরাং ওটাংটির গালে একটি বড় ক্ষত দেখতে পায়। পুরুষ ওরাং ওটাংদের সঙ্গে মারামারি করে আহত হয়েছিল সে। গবেষণা দলটি প্রথম ‘আকর কুনিং’ নামক উদ্ভিদের কান্ড ও পাতা চিবিয়ে খেতে দেখেছিল তাকে।

যা প্রদাহ সড়াতে এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। গাছটি ম্যালেরিয়া এবং ডায়াবেটিস চিকিত্সার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
কান্ড ও পাতা প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চিবিয়ে মুখে থেকে তরল পদার্থ বের করে বারবার তার গালে লাগিয়েছিল ওরাং ওটাংটি। ৭ মিনিট ধরে তরলটি লাগাত। এরপর চিবানো পাতাগুলো পুরো ক্ষতস্থানজুড়ে লাগিয়ে রাখত।

ঔষধি গাছটি জাদু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ গবেষকরা সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখেননি এবং পাঁচ দিনের মধ্যে ক্ষতটি সেড়ে উঠতে শুরু করে। এক মাস পর ওরাং ওটাংটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিল।
মানুষের নিকটতম আত্মীয় উল্লেখ করে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী ডঃ ইসাবেলা লাউমার এবং গবেষণার প্রধান লেখক বলেছেন, “তাদের (বানর) সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে, ঘটনাটি সেখান থেকেই ঘটেছে। আমরা (বানর ও মানুষ) যতটা না আলাদা তার চেয়ে বেশি একই রকম।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওরাং ওটাংটি জানত সে তার ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগাচ্ছে। কারণ ওরাং ওটাংরা খুব কমই এই বিশেষ ধরনের উদ্ভিদটি খায়ে থাকে। ডক্টর লাউমার আরো বলেছেন, ‘তিনি বারবার ওরাং ওটাংকে ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগাতে দেখেছে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য পদার্থও লাগাতে দেখেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক সময় ধরে করেছিল। সেজন্যই আমরা মনে করছি, ওরাং ওটাং জেনেই সব করছিল। এ ছাড়াও গবেষকরা ওরাং ওটাংটিকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে বিশ্রাম নিতে দেখেছেন। এতে বোঝা যায়, আঘাত থেকে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছে সে।”

ডাঃ লাউমার বলেছেন, এটা হতে পারে ওরাং ওটাংটি প্রথমবারের মতো এই ধরণের কাজ করেছিল। তিনি আরো বলেন, “এটাও হতে পারে যে, সে প্রথমে গাছের পাতা ও কাণ্ড চিবিয়ে ভুলবশত আঙুল দিয়ে ক্ষতস্থানটি স্পর্শ করেছিল এবং এতে থাকা শক্তিশালী ব্যথা উপশমকারী উপাদান তার ব্যথা কমিয়ে দিয়েছিল। তাই সে বারবার তা ক্ষত স্থানে লাগাতে শুরু করে। অথবা হতে পারে, সে তার দলের অন্যান্য অরঙ্গুটান থেকে পদ্ধতিটি শিখেছে।”

গবেষকরা এখন অন্যান্য অরঙ্গুটানগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করবে। দেখবেন তারাও একই কাজ করছে কি না? ডাঃ লাউমার বলেছেন,“আমি মনে করি আগামী কয়েক বছরে আমরা ওদের আচরণ সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারব।”

সূত্র: বিবিসি

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

নিজের চিকিৎসা নিজেই করল ওরাং ওটাং!

আপডেট সময় : ০৯:৩৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

 

ঔষধি গাছ ব্যবহার করে নিজের ক্ষত সাড়িয়েছে এবং প্রথমবারের মতো তা ক্যামেরায় ধারণও করা হয়েছে। তবে কাজটি কোনো মানুষ করেনি করেছে এক বন্য প্রাণী। ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ায়। বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রান এক ওরাং ওটাং মারামারি করতে গিয়ে গালে আঘাত পায় এবং বড় একটি ক্ষত তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই ক্ষত সাড়াতে নিজেই গাছের পাতা ও কাণ্ড থেকে তৈরি পেস্ট ব্যবহার করত ওই ওরাং ওটাং। গবেষকরা তাকে পেস্ট লাগাতেও দেখেছেন। ফলে এক মাসের মধ্যেই সেড়ে ওঠে ক্ষতটি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আচরণটি পূর্বপুরুষ থেকে সাধারণভাবেই মানুষ এবং বানরের (এপস) মধ্যে আসতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার গুনং লিউসার ন্যাশনাল পার্কের একটি গবেষণা দল ২০২২ সালের জুন মাসে ওরাং ওটাংটির গালে একটি বড় ক্ষত দেখতে পায়। পুরুষ ওরাং ওটাংদের সঙ্গে মারামারি করে আহত হয়েছিল সে। গবেষণা দলটি প্রথম ‘আকর কুনিং’ নামক উদ্ভিদের কান্ড ও পাতা চিবিয়ে খেতে দেখেছিল তাকে।

যা প্রদাহ সড়াতে এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। গাছটি ম্যালেরিয়া এবং ডায়াবেটিস চিকিত্সার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
কান্ড ও পাতা প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চিবিয়ে মুখে থেকে তরল পদার্থ বের করে বারবার তার গালে লাগিয়েছিল ওরাং ওটাংটি। ৭ মিনিট ধরে তরলটি লাগাত। এরপর চিবানো পাতাগুলো পুরো ক্ষতস্থানজুড়ে লাগিয়ে রাখত।

ঔষধি গাছটি জাদু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ গবেষকরা সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখেননি এবং পাঁচ দিনের মধ্যে ক্ষতটি সেড়ে উঠতে শুরু করে। এক মাস পর ওরাং ওটাংটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিল।
মানুষের নিকটতম আত্মীয় উল্লেখ করে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী ডঃ ইসাবেলা লাউমার এবং গবেষণার প্রধান লেখক বলেছেন, “তাদের (বানর) সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে, ঘটনাটি সেখান থেকেই ঘটেছে। আমরা (বানর ও মানুষ) যতটা না আলাদা তার চেয়ে বেশি একই রকম।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওরাং ওটাংটি জানত সে তার ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগাচ্ছে। কারণ ওরাং ওটাংরা খুব কমই এই বিশেষ ধরনের উদ্ভিদটি খায়ে থাকে। ডক্টর লাউমার আরো বলেছেন, ‘তিনি বারবার ওরাং ওটাংকে ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগাতে দেখেছে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য পদার্থও লাগাতে দেখেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক সময় ধরে করেছিল। সেজন্যই আমরা মনে করছি, ওরাং ওটাং জেনেই সব করছিল। এ ছাড়াও গবেষকরা ওরাং ওটাংটিকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে বিশ্রাম নিতে দেখেছেন। এতে বোঝা যায়, আঘাত থেকে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছে সে।”

ডাঃ লাউমার বলেছেন, এটা হতে পারে ওরাং ওটাংটি প্রথমবারের মতো এই ধরণের কাজ করেছিল। তিনি আরো বলেন, “এটাও হতে পারে যে, সে প্রথমে গাছের পাতা ও কাণ্ড চিবিয়ে ভুলবশত আঙুল দিয়ে ক্ষতস্থানটি স্পর্শ করেছিল এবং এতে থাকা শক্তিশালী ব্যথা উপশমকারী উপাদান তার ব্যথা কমিয়ে দিয়েছিল। তাই সে বারবার তা ক্ষত স্থানে লাগাতে শুরু করে। অথবা হতে পারে, সে তার দলের অন্যান্য অরঙ্গুটান থেকে পদ্ধতিটি শিখেছে।”

গবেষকরা এখন অন্যান্য অরঙ্গুটানগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করবে। দেখবেন তারাও একই কাজ করছে কি না? ডাঃ লাউমার বলেছেন,“আমি মনে করি আগামী কয়েক বছরে আমরা ওদের আচরণ সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারব।”

সূত্র: বিবিসি