ঢাকা ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিস রোগীরা যে কারণে পায়ের খেয়াল রাখবেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৩০:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২৪ বার পড়া হয়েছে
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত জটিলতা। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত চিকিৎসকের কাছে নিয়ম করে চেক আপ করানো। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরীক্ষার পাশাপাশি পায়ের চেকআপ করানোও জরুরি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।

পৃথিবীতে যত মানুষের পা কেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ে, তার প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই ডায়াবেটিক ফুট আলসারের কারণে। এতেই বোঝা যায় যে ডায়াবেটিক ফুট আলসার কতটা ভয়াবহ। সে জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের পা বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং এটি প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস থাকলে পায়ের একাধিক সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো স্নায়ু নষ্ট হয়ে যাওয়া। ডায়াবেটিস থাকলে শরীরের বেশ কিছু অঙ্গেরই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পায়ের স্নায়ুর সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে পায়ের স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়।

পায়ের স্নায়ু নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে কেন?
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের সঙ্গে আরও কয়েকটি রোগ থাকলে পায়ের নার্ভ ড্যামেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হলে পায়ের ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আবার শরীরের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে পায়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিংবা বয়স ৪০ এর বেশি হলেও এই সমস্যা হতে পারে। বেশিরভাগ সময় রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

পায়ের নার্ভ ড্যামেজ বুঝবেন কীভাবে?
পায়ের নার্ভ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য কয়েকটি অভ্যাস করে ফেলা জরুরি। এতে পা ভালো থাকে। পাশাপাশি নার্ভ ড্যামেজের ভয় কমে।

>> নিয়মিত চলাফেরা করলে পা সক্রিয় থাকে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

>> পায়ের পাতার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা নিয়মিত দেখলে আগে থেকে রোগ ধরা পড়ে।

>> স্নায়ু নষ্ট হলে আঘাত লাগলে ব্যথা হয় না। তাই আঘাত লাগলে বা কেটে গেলে ব্যথা হচ্ছে কি না দেখতে হবে।

>> নিয়মিত পা পরিষ্কার রাখতে হবে। সঠিক মাপের জুতো পরা ও নখ কাটার দিকেও নজর রাখা জরুরি।

ডায়াবেটিক ফুট আলসার প্রতিরোধে করণীয়
>> রক্তে শর্করার মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডায়াবেটিক ফুট আলসারের ঝুঁকি কমানো যায়। এ জন্য নিয়মিত বাড়িতে সুগার পরীক্ষা করতে হবে। আর তিন মাস অন্তর গড় সুগার পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

>> সুবিধামতো সময়ে আপনার পা পরীক্ষা করুন। পায়ের তলা দেখতে প্রয়োজনে আয়না বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন। নখের গোড়ায়, কোনায়, আঙুলের ফাঁকে, পায়ের পাতায়/ তলায় ফেটে যাওয়া, লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, ফোসকা পড়া, চামড়া শক্ত হওয়া বা যেকোনো পরিবর্তন লক্ষ করলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কখনোই কোনো ফোসকা বা কর্ন নিজে নিজে গলানো বা কাটার চেষ্টা করবেন না।

>> প্রতিদিন কুসুম গরম পানি বা সাবান দিয়ে পা ধুয়ে নিন। পানির উষ্ণতা সহনশীল কি না, বুঝতে অন্যের সহায়তা নিন। কারণ, ডায়াবেটিসের রোগীর পায়ের অনুভূতি হ্রাস পায়। অতিরিক্ত তাপে পা পুড়ে যেতে পারে।

>> পায়ের ত্বক নরম ও মসৃণ রাখুন। পায়ে নিয়মিত লোশন, ক্রিম বা তেল ব্যবহার করুন। আঙুলের ফাঁকে ছত্রাকের ইনফেকশন হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে।

>> সঠিক নিয়মে নখ না কাটার কারণে আঙুলে বিভিন্ন ইনফেকশন শুরু হতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

>> খালি পায়ে হাঁটবেন না। সব সময় জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন, এমনকি ঘরের মধ্যেও। সঠিক মাপের জুতা এবং পরিষ্কার সুতির মোজা ব্যবহার করুন। জুতা পরার আগে দেখে নিন ভেতরে কিছু আছে কি না। অধিক গরম ও ঠান্ডা থেকে আপনার পা রক্ষা করুন।

>> পায়ের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলের জন্য, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সময় চেয়ার বা মোড়ার ওপর পা রাখুন। পায়ের আঙুল ও গোড়ালি দিনে দুই/ তিনবার ৫ মিনিট ধরে নাড়ুন।

>> ধূমপান পরিহার করুন।

পায়ের আলসারে প্রথম দিকে ব্যথা না থাকায় অনেকেই একে পাত্তা দেন না। পরে এ থেকে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। তাই আলসার প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পায়ের দিকে খেয়াল রাখুন। সামান্য লক্ষণ দেখতে পেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ডায়াবেটিস রোগীরা যে কারণে পায়ের খেয়াল রাখবেন?

আপডেট সময় : ১০:৩০:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত জটিলতা। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত চিকিৎসকের কাছে নিয়ম করে চেক আপ করানো। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরীক্ষার পাশাপাশি পায়ের চেকআপ করানোও জরুরি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।

পৃথিবীতে যত মানুষের পা কেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ে, তার প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই ডায়াবেটিক ফুট আলসারের কারণে। এতেই বোঝা যায় যে ডায়াবেটিক ফুট আলসার কতটা ভয়াবহ। সে জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের পা বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং এটি প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস থাকলে পায়ের একাধিক সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো স্নায়ু নষ্ট হয়ে যাওয়া। ডায়াবেটিস থাকলে শরীরের বেশ কিছু অঙ্গেরই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পায়ের স্নায়ুর সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে পায়ের স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়।

পায়ের স্নায়ু নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে কেন?
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের সঙ্গে আরও কয়েকটি রোগ থাকলে পায়ের নার্ভ ড্যামেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হলে পায়ের ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আবার শরীরের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে পায়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিংবা বয়স ৪০ এর বেশি হলেও এই সমস্যা হতে পারে। বেশিরভাগ সময় রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

পায়ের নার্ভ ড্যামেজ বুঝবেন কীভাবে?
পায়ের নার্ভ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য কয়েকটি অভ্যাস করে ফেলা জরুরি। এতে পা ভালো থাকে। পাশাপাশি নার্ভ ড্যামেজের ভয় কমে।

>> নিয়মিত চলাফেরা করলে পা সক্রিয় থাকে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

>> পায়ের পাতার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা নিয়মিত দেখলে আগে থেকে রোগ ধরা পড়ে।

>> স্নায়ু নষ্ট হলে আঘাত লাগলে ব্যথা হয় না। তাই আঘাত লাগলে বা কেটে গেলে ব্যথা হচ্ছে কি না দেখতে হবে।

>> নিয়মিত পা পরিষ্কার রাখতে হবে। সঠিক মাপের জুতো পরা ও নখ কাটার দিকেও নজর রাখা জরুরি।

ডায়াবেটিক ফুট আলসার প্রতিরোধে করণীয়
>> রক্তে শর্করার মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডায়াবেটিক ফুট আলসারের ঝুঁকি কমানো যায়। এ জন্য নিয়মিত বাড়িতে সুগার পরীক্ষা করতে হবে। আর তিন মাস অন্তর গড় সুগার পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

>> সুবিধামতো সময়ে আপনার পা পরীক্ষা করুন। পায়ের তলা দেখতে প্রয়োজনে আয়না বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন। নখের গোড়ায়, কোনায়, আঙুলের ফাঁকে, পায়ের পাতায়/ তলায় ফেটে যাওয়া, লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, ফোসকা পড়া, চামড়া শক্ত হওয়া বা যেকোনো পরিবর্তন লক্ষ করলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কখনোই কোনো ফোসকা বা কর্ন নিজে নিজে গলানো বা কাটার চেষ্টা করবেন না।

>> প্রতিদিন কুসুম গরম পানি বা সাবান দিয়ে পা ধুয়ে নিন। পানির উষ্ণতা সহনশীল কি না, বুঝতে অন্যের সহায়তা নিন। কারণ, ডায়াবেটিসের রোগীর পায়ের অনুভূতি হ্রাস পায়। অতিরিক্ত তাপে পা পুড়ে যেতে পারে।

>> পায়ের ত্বক নরম ও মসৃণ রাখুন। পায়ে নিয়মিত লোশন, ক্রিম বা তেল ব্যবহার করুন। আঙুলের ফাঁকে ছত্রাকের ইনফেকশন হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে।

>> সঠিক নিয়মে নখ না কাটার কারণে আঙুলে বিভিন্ন ইনফেকশন শুরু হতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

>> খালি পায়ে হাঁটবেন না। সব সময় জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন, এমনকি ঘরের মধ্যেও। সঠিক মাপের জুতা এবং পরিষ্কার সুতির মোজা ব্যবহার করুন। জুতা পরার আগে দেখে নিন ভেতরে কিছু আছে কি না। অধিক গরম ও ঠান্ডা থেকে আপনার পা রক্ষা করুন।

>> পায়ের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলের জন্য, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সময় চেয়ার বা মোড়ার ওপর পা রাখুন। পায়ের আঙুল ও গোড়ালি দিনে দুই/ তিনবার ৫ মিনিট ধরে নাড়ুন।

>> ধূমপান পরিহার করুন।

পায়ের আলসারে প্রথম দিকে ব্যথা না থাকায় অনেকেই একে পাত্তা দেন না। পরে এ থেকে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। তাই আলসার প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পায়ের দিকে খেয়াল রাখুন। সামান্য লক্ষণ দেখতে পেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।