গরমে স্বস্তি মিলবে অন্দরে সবুজের ছোঁয়ায়
- আপডেট সময় : ০৮:২৩:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
- / 86
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঠাসবুনটের শহরে স্বস্তি মিলছে না। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর বাসায় ফিরেও শান্তি নেই। বিশেষ করে যে বাসায় এসি নেই, সারাদিনের কড়া রোদে সে বাসার দেয়াল প্রচণ্ড গরম হয়ে থাকে। রাতে তাপ পুরো বাসায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমানো দায় হয়ে যায়।
তবে ঘরের ভেতরেও আজকাল শোভা পাচ্ছে নানান রকমের বাহারি গাছ। যাদের বাসায় এসি নেই, তারা প্রাকৃতিকভাবে ঘরের বাতাসকে ঠান্ডা রাখতে গাছ লাগাতে পারেন। সাধ্যের মধ্যে মনের সাধ ও আভিজাত্য বাড়ানোর জন্য ঘরের ভেতর গাছ আপনার মনকে প্রফুল্ল করবে বহুগুণে। এক ঝটকায় আপনাকে নিয়ে যাবে প্রকৃতির মাঝে, যেখানে আছে অনাবিল শান্তি।
ছোট্ট একটি গাছ আপনার ঘরকে সাজিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ফিরে পায় প্রাণ। শহরের এ কর্মব্যস্ত জীবনে মনকে একটু প্রশান্তি করে দিতে পারে অন্দরে অল্প কিছু গাছ। এছাড়াও এই গরমে কিছুটা হলেও ঘরের তাপমাত্রা কমাবে এবং ঘরকে করবে সবুজ ও সতেজ। কিছু গাছ কেবল ঘরের বাতাস শীতলই করে না, বাতাসকে বিষমুক্তও করে। অর্থাৎ খোলা বাতাসে যেসব রাসায়নিক ও বিষাক্ত গ্যাস থাকে, সেসবকে শোষণ করে সেসব উপকারী গাছ।
ঘরের বাতাসকে পরিশোধন করতে ইনডোর প্ল্যান্ট খুবই কার্যকরী। আবার অন্যদিকে এসব শোভা বর্ধনকারী গাজগুলো এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে যদি ঠিকঠাক মতো প্ল্যান করতে না পারা গেলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ এলোমেলোভাবে গাছ সাজালে ভালো নাও লাগতে পারে। তবে চলুন দেখে নিই কিভাবে ইনডোর গার্ডেন করা যায়।
ইনডোর প্লান্ট ও শোভা বর্ধনকারী গাছ হিসাবে ব্যবহার করা যায়, এসি প্লান্ট নামক বহুল প্রচলিত কিছু গাছ রয়েছে যা এসি রুমে বেচে থাকতে পার। এগুলোর মধ্যে সিলভার কুইন, চায়নিজ পাম, বাঁশ পাতা বা লাকি ব্যাম্বো, ড্রাসিনা, গোলডেন ড্রাসিনা, ক্যাকটাস, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড এবং ফার্ন এর প্রজাতি, পাতাবাহার এর বিভিন্ন প্রজাতি যেমন মানিপ্ল্যান্ট, ক্যালাডিয়াম, জি জি প্ল্যান্ট, বনসাঁই, ফরচুন ট্রি, এরিকা পাম, তুলসি ইত্যাদি রয়েছে। ঘরের বিভিন্ন স্থানে আকার ও উচ্চতা অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা যায় এই ধরনের গাছগুলো।
যেসব গাছ লাগালে ঘরের বাতাস শীতল থাকবে
স্ন্যাকপ্ল্যান্ট: খুব অল্প যত্নেই এই গাছটি বেড়ে ওঠে। মৃদু আলো আর কিছুটা উষ্ণ তাপমাত্রাই যথেষ্ট। বাতাসে ভেসে বেড়ানো বিষাক্ত বস্তুকণা আর কার্বন-ডাইঅক্সাইড দূর করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে এ ইনডোর প্ল্যান্ট। বাতাসে আর্দ্রতা নিঃসরণ করে অ্যালার্জিবাহী কণাকে হ্রাস করতেও এ গাছ ভূমিকা রাখে। গরমে যারা অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন, তারা ঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্ন্যাক প্ল্যান্ট লাগাতে পারেন।
রাবার প্ল্যান্ট: ঘরের বাতাসকে ঠান্ডা রাখতে শোবার ঘরের একদিকে রাবার প্ল্যান্ট লাগাতে পারেন। এটি ঘরের কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করতে পারে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। এ গাছেরও খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। সপ্তাহে এক-দুই দিন আলোতে রাখলেই হয়। পানিও দিতে হয় অল্প। গোড়া ভেজা থাকলে পানির প্রয়োজন হয় না।
পিস লিলি: নামের সঙ্গে এ গাছের কাজেরও মিল রয়েছে। পিস লিলি ঘর শান্ত ও ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। এর শুভ্র ফুল মন ফুরফুরে রাখে। পিস লিলির বড় সবুজ পাতা বেশি পরিমাণে অক্সিজেন নির্গত করে। এতে ঘর শীতল থাকে। এই গরমে শোবার ঘর, বসার ঘরে পিস লিলি লাগিয়ে নিন। পথোস: পথোস ও মানিপ্ল্যান্ট ঘরের বাতাস ঠান্ডা রাখতে সর্বোচ্চ কাজ করে। এ গাছগুলো ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়। একইসঙ্গে বাতাস বিশুদ্ধ রাখে। বাসার বিভিন্ন জায়গা যেমন শোবার ঘর, বসার ঘর, জানলার গ্রিল, বেসিনের সামনে মানিপ্ল্যান্ট লাগাতে পারেন। জানালার দিকে লাগালে বিশুদ্ধ বাতাস ঘরে ঢুকবে।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে দারুণ। এটি ঘরের তাপ কমাতে সহায়তা করে। সেইসঙ্গে বাতাসে মিশে থাকা বিষ শোষণ করে। অ্যালোভেরা গাছ অল্প আলো বাতাসে বেশ ভালো থাকে। কড়া রোদে নেতিয়ে যায়। যারা অ্যালোভেরা গাছ লাগাবেন, তারা বারান্দার কড়া রোদে না রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে, ঘরের ভেতরে রাখবেন।
এরিকা পাম: বসার ঘর ও শোবার ঘরে রাখার জন্য আদর্শ গাছ এরিকা পাম। এই গাছের বড় পাতা ঘরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। বাতাস বিষমুক্ত রেখে ঘরের তাপমাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে।
গাছ শুধু লাগালেই হবে না, নিতে হবে যত্ন। অল্প আলো ও স্বল্প জায়গায় জন্মানো এসব ইনডোর প্লান্টের পরিচর্যার দিকে নজর দিতে হবে শত ভাগ। ইনডোর গাছগুলো একটু সেনসিটিভ হবার কারণে গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটি উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। এখন অনেক ধরনের রেডিমিক্স সয়েল পাওয়া যায় যাতে মাটি ও পরিমাণ মতো সার থাকে। সেসবও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সপ্তাহে অন্তত একবার গাছগুলো রোদে দিতে হবে। দুই থেকে তিন দিন পরপর রোদে দিলে ভালো হয়। রোদ না থাকলে ভালো পরিমাণ আলো পায় যেখানে, সেখানে রেখে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে গাছের গোড়ার মাটি উল্টেপাল্টে দিলে ভালো হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের শিকড় কাটা না পড়ে। পোকামাকড় আক্রমণ করলে বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এখন অনলাইন এমনকি ফেসবুকেও নানান দরকারি তথ্য পাওয়া যায়।
ইনডোর গার্ডেন করার জন্য পছন্দমত গাছ ও তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নার্সারি এবং হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে। এছাড়াও এসিআই ফার্টিলাইজারের নগর কৃষি উইং ‘এসিআই অরন্য’, গ্রিন সেভার্স ও ব্র্যাক নার্সারিসহ অনেক নার্সারি ফোনকলে ও ফেসবুকে নানাবিধ পরামর্শ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে অনেকেই গাছ ও গাছ লাগানোর উপকরণ যেমন- টব, মাটি ও সার হোম ডেলিভারির মাধ্যমে বাগানিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে ফেসবুকে নানান ধরনের গ্রুপ তৈরি হয়েছে যেখানে অভিজ্ঞ বাগানিরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাপাশি উপদেশও দিয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য, বাড়ির বাহিরে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় আষাঢ় মাস। এখন প্রখর রোদে গাছ লাগালেও সেই গাছ মারা যাবার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেও গাছ বেড়ে উঠার জন্য সেটা পরিমিত হবে না। সেই হিসেবে এখন ঘরের মধ্যে ইনডোরে গাছ লাগানো এবং আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার সময় বাড়ির বাহিরে গাছ লাগানোই উত্তম হবে।
নিউজটি শেয়ার করুন