বজ্রপাতে নিরাপদ থাকতে মানতে হবে যেসব নিয়ম
- আপডেট সময় : ১১:০০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪
- / 81
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, নদীভাঙন, টর্নেডো, অগ্নিকাণ্ড, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সম্প্রতিককালে নতুন করে যোগ হয়েছে বজ্রপাত। বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে আপাতত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনাও দিচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
দেশে প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪০টি বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।
ঝড়বৃষ্টির সময় বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আবহাওয়াবিদরা মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেন। বিশেষ করে ছাদযুক্ত ঘরে আশ্রয় নিতে বলা হয়। কিন্তু বজ্রপাতের সময় যারা বাইরে থাকেন, অনেক সময় তাদের নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তারা কী করবেন? এই বিষয়ে আবহাওয়াবিদদের পরামর্শ জেনে নিন—
১. বিদ্যুৎ চমকানো দেখার ৩০ সেকেন্ডের আগেই যদি সেই শব্দ শুনতে পান, তাহলে বুঝবেন সেটা আপনার দিকে আসছে এবং আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। ওই পরিস্থিতিতে আপনার উচিত দ্রুত ওই স্থান থেকে সরে যাওয়া।
২. বিদ্যুৎ চমকানো দেখার ৩০ সেকেন্ড পর যদি সেই শব্দ শুনতে পান, তাহলে বুঝবেন সেটা আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং ওই বজ্রপাত দ্বারা আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। যদি নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে এক আঙুলে ভর করে বসে পড়তে হবে।
উইকিহাউ-এর তথ্য অনুযায়ী বজ্রপাত থেকে বাঁচার আরও কিছু উপায় জেনে নিন:
বজ্রঝড় সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন।
গভীর ও উলম্ব মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে বের না হওয়াই উত্তম, অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে যান।
উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দুরে থাকুন। এ সময় নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা বা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
ধানক্ষেতে বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
বজ্রপাতের আশঙ্কা হলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। বজ্রপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখবেন না। সম্ভব না হলে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
বজ্রপাত চলাকালে বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন।
বজ্রপাতের সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় টিউব ওয়েল, রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে একত্রে না থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করুন।
কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত বজ্রপাত নিরোধক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন।
বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুইচ বন্ধ রাখুন এবং বজ্রপাতের আভাস পেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখুন।
বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্তদের মতো দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে, প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকুন বা হাসপাতালে নিয়ে যান।
বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যান, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
নিউজটি শেয়ার করুন