ব্যথা কমাতে ঠান্ডা না-কি গরম সেঁক কোনটি বেশি কার্যকর?
- আপডেট সময় : ১২:৫৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪
- / 98
নিত্যনৈমিত্তিক কাজে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত একটু আধটু ব্যথা পেয়ে থাকে সবাই। কেউ কেউ তাৎক্ষণিক আরাম পেতে ব্যথার স্থানে বরফ ঘষেন আবার কেউ কেউ গরম সেক দেন। ব্যথার ক্ষেত্রে দ্রুত আরাম পেতে গরম নাকি ঠান্ডা সেঁক কোনটি উপকারী তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে।
আমাদের দেশে ব্যথা উপশমে সেঁক দেওয়ার প্রচলন অনেক আগের। বাড়িতে বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে হট ওয়াটার ব্যাগ, আইসব্যাগ ইত্যাদির সমাহারও দেখা যায়। তবে কোন পরিস্থিতিতে কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা উচিত, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। চলুন জেনে নেওয়া কখন কোন ব্যথায় কী ধরনের সেঁক দেবেন।
থার্মোথেরাপি বা গরম সেঁক
গরম সেঁক বা তাপ দেওয়া হলে শরীরের ওই নির্দিষ্ট অংশে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধির স্টিফনেস বা জড়তা কাটাতে সাহায্য করে এই ধরনের সেঁক। কিন্তু কোনো ধরনের আঘাত পাওয়ার প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গরম সেঁক না দেওয়াই উচিত। এতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে প্রদাহ বা ফোলা আরও বাড়তে পারে। ফ্রোজেন শোল্ডার, মাংসপেশিতে টান, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, পেটের ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম সেঁক দেওয়ার জন্য একটি শুকনো তোয়ালে আয়রনের সাহায্যে গরম করে ব্যবহার করতে পারেন। তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়েও সেঁক দেওয়া যায়। অনেকে আবার হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে দীর্ঘসময় সেঁক দিতে পছন্দ করেন। মনে রাখবেন, গরম সেঁকে আঘাত পাওয়া অংশে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এর ফলে অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ে। এতে ব্যথা দ্রুত কমে। স্নায়বিক দুর্বলতায় অতিরিক্ত গরমের অনুভূতি অনেকে টের পান না। ফলে সেঁক দেওয়ার সময় বেশি গরমে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। মূলত হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা বা পেশিতে টান ধরার ব্যথায় এই সেঁক খুব কার্যকরী। পায়ের ব্যথার জন্য গরম পানিতে পা ডোবালে সাবধান থাকবেন। হাত দিয়ে গরম পানির তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে কীনা তা পরীক্ষা করে তবেই পা ডোবান।
যেসব ক্ষেত্রে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে-
– মচকানো
– টান লাগা
-অস্টিওআর্থারাইটিস
– পেশি টিস্যুর ব্যথা
– পিঠ বা কোমর ব্যথা
এই গরম সেঁক আবার দুই ধরনের হতে পারে-
১. ড্রাই হিট বা শুষ্ক তাপ: সাধারণত ইলেক্ট্রিক হিটিং প্যাড, হট ওয়াটার বোতল, স্টীম বাথ ইত্যাদির মাধ্যমে যে সেঁক দেয়া হয়, সেগুলো ড্রাই হিটের অন্তর্ভুক্ত। এটি ব্যবহার খুব সহজ।
২. ময়েস্ট হিট বা আর্দ্র তাপ: মূলত স্টীমড তোয়ালে বা আর্দ্র গরম পানির ব্যাগ দিয়ে যে সেঁক দেয়া হয় সেটি ময়েস্ট হিট। বাড়িতে হাতের কাছের উপকরণ দিয়ে সহজেই এই সেঁক দেওয়া যায়। ছোটো খাটো আঘাতের ক্ষেত্রে এ সেঁকটি ১৫-২০ মিনিট দিতে হয়। আর মাঝারি আঘাতের ক্ষেত্রে হট শাওয়ার নেওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা: কখনো এই হিট থেরাপি কাঁটাস্থান বা জালাপোড়ায় দেওয়া যাবে না। গর্ভবতী নারী কিংবা ডায়াবেটিস রোগীরা এই পদ্ধতি অনুসরণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত গরম সেঁক দিলে চামড়া পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।
কোল্ড থেরাপি বা ক্রায়োথেরাপি
মূলত প্রদাহ, আঘাতজনিত ব্যথা ও রক্তপাত তাৎক্ষণিকভাবে কমাতে সাহায্য করে ঠান্ডা সেঁক। এটি স্নায়বিক অনুভূতি সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখে, ফলে ব্যথা কমে। হঠাৎ কোথাও আঘাত পেলে, রক্তপাত হলে, জ্বর হলে, প্রদাহজনিত ব্যথায় (টেনডিনাইটিস, বারসাইটিস, একিউট আর্থ্রাইটিস) ঠান্ডা সেঁক দিলে উপিকার পাবেন। ঠান্ডা সেঁক দেওয়ার জন্য আইস প্যাক সবচেয়ে ভালো। বরফ জলে তোয়ালে ভিজিয়ে সেটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। চাইলে একটি প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতলা কাপড়ে বরফের টুকরো মুড়ে আইস প্যাক লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন, ফোলা বা প্রদাহ কমাতেই ঠান্ডা সেঁক দেওয়া হয়। আঘাত প্রাপ্ত অংশটি অসাড় করে দেয় ঠান্ডা সেঁক। এতেই ব্যথা কমে। শুধু ব্যাথাই নয়, ঠান্ডা সেঁক রক্তপাতও বন্ধ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরম সেঁকের তুলনায় ঠান্ডা সেঁক নিরাপদ। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
যেসব স্থানে ক্রায়োথেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে –
-সাময়িক আঘাত
– মাইগ্রেন
– অস্টিওআর্থ্রাইটিস
– আকস্মিক টান
ক্রায়োথেরাপি বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা যেতে, যেমন-
১. ক্রায়োথেরাপি উপকরণ: আইস ব্যাগ, আইস মেসাজ, কুলেন্ট স্প্রে ব্যবহার করে ক্রায়োথেরাপি করা যায়।
২. ক্রায়োস্ট্রেচিং: এর মাধ্যমে মূলত তাপমাত্রা কমিয়ে পেশি শিথিল করা হয়।
৩. ক্রায়োকাইনেটিক্স: এটি মূলত ঠান্ডা চিকিৎসা ও ব্যয়ামের একটি সমন্বিত পদ্ধতি। পেশির লিগামেন্টে আঘাত লাগলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৪. আইস বাথ: এর মাধ্যমে সাধারণত বরফ কাপড় বা ব্যাগে নিয়ে ক্ষতস্থানে ১৫-২০ মিনিট প্রয়োগ করা হয়। এর বেশি সময় রাখলে চামড়া, স্নায়ু ও টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে।
হার্টের রোগীরা এই থেরাপি নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটি কার্যকরী না হলেও ডাক্তার দেখাতে হবে।
নিউজটি শেয়ার করুন