ঢাকা ০৬:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ইসলামের জন্য ছেড়েছিলেন অভিনয় ॥ দেড় বছরের মাথায় ফের অন্তঃসত্ত্বা সানা খান Logo কলার খোসা রোজ লাগান, যৌবন উপচে পড়বে Logo শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরীমনি এবং দ্রুত প্রস্থান Logo যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক দল জানালেন, কেমন পুরুষকে বিয়ে করলে আপনি সুখী হতে পারবেন Logo বিবাহিত অথচ স্বামী-স্ত্রী আলাদা ঘুমান যে দেশে Logo সাভারে কাপড়ের গোডাউনে আগুন, দেড় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে Logo শাকিবের সাক্ষাতে মুগ্ধতা যেন কাটতে চাইছে না সৌমিতৃষার Logo ৫৩ ঘণ্টা পর শ্রমিক অবরোধ প্রত্যাহার, যান চলাচল স্বাভাবিক Logo পাচার অর্থ উদ্ধারে নিয়োগ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ল ফার্ম Logo তিন দিনের সফরে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

 

ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কিডনি বিক্রি করত তারা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪
  • / 78
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

দরিদ্র মানুষকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে যেত একটি চক্র। সেখানে নেওয়ার পর চাকরি তো দূরের কথা উল্টো জিম্মি করে কৌশলে কিডনি নেওয়া হতো পাচার হওয়া ব্যক্তিদের। চক্রটি এ পর্যন্ত ১০ জনের কিডনি নিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহিদ উদ্দিন এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। মামলায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫), সাগর ওরফে মোস্তফাসহ (৩৭) ১০–১২ জন। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় এ চক্রের বিরুদ্ধে রবিন নামের একজন ভুক্তভোগী মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধানমণ্ডি থানা–পুলিশ চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার ও রোববার ধানমণ্ডি এবং বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নেওয়া হয়। পরে নানা কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য তাঁকে রাজি করান চক্রের সদস্যরা। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাঁকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে কিডনি নেওয়ার পর ৩ লাখ টাকা দেয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের কোনো এক দিন মিরপুর-১০ নম্বরে শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন এক বন্ধুর সঙ্গে চা পান করছিলেন। কথাবার্তা বলছিলেন সংসারের অভাব–অনটন নিয়ে। এ সময় পাশেই চা পান করছিলেন মাছুমও (পলাতক আসামি)। কথাবার্তা শুনে মাছুম রবিনকে বলেন, ভারতে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং সেখানে তাঁকে চাকরি দিতে পারবেন। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মুঠোফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো তাঁর। পরে ভারতে চাকরি করার বিষয়ে রাজি হন।

পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, রবিনকে মাছুম বলেন, ভারতে যেতে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। পরে গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে রাজু হাওলাদারের (গ্রেপ্তার করা আসামি) সঙ্গে রবিনের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভিসার জন্য তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে নেন তাঁরা। ভিসা নিশ্চিত করার পর ভুক্তভোগীকে ওই দুজন গ্রেপ্তার দুই আসামি শাহেদ ও আতাহারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁরা একে অপরের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যবসা করেন বলে জানানো হয়। অবশেষে রবিনকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে।

রবিনকে নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন। বলেন, কিছুদিন পর তাঁকে গুজরাটে নিয়ে রাখা হয় মুক্তিনগর এলাকার একটি বাসায়। এরপর আসামিরা ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ গুজরাটের এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর একটি কিডনি নিয়ে নেন।

হাসপাতাল থেকে চার দিন পর ছাড়া পান রবিন। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ১০–১১ দিন তাঁকে আটক রাখেন আসামিরা। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রবিন জানতে পারেন, তাঁর কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে বড় অঙ্কের অর্থে বিক্রি করে দিয়েছে। পরে বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের কয়েকজন সদস্য রবিনের স্ত্রীকে তিন লাখ টাকা দেন। এরপর রবিন দেশে ফেরেন।

গ্রেপ্তার করা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, এ পর্যন্ত চক্রটি ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি নিয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কিডনি বিক্রি করত তারা

আপডেট সময় : ১১:৫২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

 

দরিদ্র মানুষকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে যেত একটি চক্র। সেখানে নেওয়ার পর চাকরি তো দূরের কথা উল্টো জিম্মি করে কৌশলে কিডনি নেওয়া হতো পাচার হওয়া ব্যক্তিদের। চক্রটি এ পর্যন্ত ১০ জনের কিডনি নিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহিদ উদ্দিন এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। মামলায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫), সাগর ওরফে মোস্তফাসহ (৩৭) ১০–১২ জন। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় এ চক্রের বিরুদ্ধে রবিন নামের একজন ভুক্তভোগী মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধানমণ্ডি থানা–পুলিশ চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার ও রোববার ধানমণ্ডি এবং বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নেওয়া হয়। পরে নানা কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য তাঁকে রাজি করান চক্রের সদস্যরা। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাঁকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে কিডনি নেওয়ার পর ৩ লাখ টাকা দেয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের কোনো এক দিন মিরপুর-১০ নম্বরে শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন এক বন্ধুর সঙ্গে চা পান করছিলেন। কথাবার্তা বলছিলেন সংসারের অভাব–অনটন নিয়ে। এ সময় পাশেই চা পান করছিলেন মাছুমও (পলাতক আসামি)। কথাবার্তা শুনে মাছুম রবিনকে বলেন, ভারতে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং সেখানে তাঁকে চাকরি দিতে পারবেন। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মুঠোফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো তাঁর। পরে ভারতে চাকরি করার বিষয়ে রাজি হন।

পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, রবিনকে মাছুম বলেন, ভারতে যেতে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। পরে গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে রাজু হাওলাদারের (গ্রেপ্তার করা আসামি) সঙ্গে রবিনের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভিসার জন্য তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে নেন তাঁরা। ভিসা নিশ্চিত করার পর ভুক্তভোগীকে ওই দুজন গ্রেপ্তার দুই আসামি শাহেদ ও আতাহারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁরা একে অপরের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যবসা করেন বলে জানানো হয়। অবশেষে রবিনকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে।

রবিনকে নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন। বলেন, কিছুদিন পর তাঁকে গুজরাটে নিয়ে রাখা হয় মুক্তিনগর এলাকার একটি বাসায়। এরপর আসামিরা ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ গুজরাটের এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর একটি কিডনি নিয়ে নেন।

হাসপাতাল থেকে চার দিন পর ছাড়া পান রবিন। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ১০–১১ দিন তাঁকে আটক রাখেন আসামিরা। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রবিন জানতে পারেন, তাঁর কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে বড় অঙ্কের অর্থে বিক্রি করে দিয়েছে। পরে বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের কয়েকজন সদস্য রবিনের স্ত্রীকে তিন লাখ টাকা দেন। এরপর রবিন দেশে ফেরেন।

গ্রেপ্তার করা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, এ পর্যন্ত চক্রটি ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি নিয়েছে।