১১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে মাত্র ১০টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে
সাভারে ৯১ শতাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিকের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই
- আপডেট সময় : ০৯:০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪
- / 85
সাভারে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ করে না। ছবিটি একটি বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্য ফেলার স্থান থেকে তোলা। ফাইল ফটো
ঢাকার সাভারে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ৯১ শতাংশেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সাভারে ১১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে মাত্র ১০টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। এছাড়াও উপজেলার আটটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক না হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত শুধুমাত্র ছাড়পত্রের জন্য আবেদনের কপি জমা দিয়েই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে গত বছরের ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া আর কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন করা হবে না।
পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাশুরা শাম্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরিবেশ ছাড়পত্রের সাথে বেশ কিছু বিষয় জড়িত। এখানে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা আমাদের দেশে বরাবরই উপেক্ষিত। আমাদের দেশে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত হাসপাতালগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য জেনারেট হচ্ছে, কিন্তু এগুলোর পরিবেশগত প্রভাব দেখা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন যে বিশাল পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে তার খুব কম অংশই কিন্তু ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি বর্জ্যের অধিকাংশই কিন্তু পরিবেশে ডিস্পোজাল হচ্ছে ট্রিটমেন্ট না করেই। যা নিঃসন্দেহে আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।’
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আগে প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদনের কপি জমা দিলেই আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সুপারিশ করতাম। কিন্তু এখন থেকে হালনাগাদ পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে সেটি আর করা হবে না।
ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পরিবেশে ছাড়পত্র পেতে যে বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ওই বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করলেই আমরা পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। আগে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো আমাদের কাছে আবেদন করলেই ওই আবেদনের কপি জমা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়ে যেত। এখন কিছুটা করাকরি হয়েছে। আমরা যথাযথ যাচাই বাছাই শেষে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে ছাড়পত্র দিচ্ছি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই উদ্যোগের কারণে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের ক্ষেত্রে বেশ জটিলতার মধ্যে পড়বে এবং অনেক হাসপাতালের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
যোগাযোগ করলে সাভারের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট হসপিটাল ওনার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও সাভারের ল্যাব জোন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ওয়াকিলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমাদের অন্যান্য যেসব লাইসেন্স ও অনুমোদন বাধ্যতামূলক তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া। আগে ছাড়পত্রের আবেদনের কপি জমা দিলেই লাইসেন্স পাওয়া যেত, এখন থেকে এটির হালনাগাদ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
‘আমার মনে হয় যেহেতু এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কাজেই পরিবেশ অধিদপ্তর যদি এটি হাসপাতালের জন্য ছাড়পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি সহজ করে তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। অন্যথায় অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, আর এটি হলে স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হাওয়ারও ঝুঁকি তৈরি হবে,’ বলেন তিনি।
নিউজটি শেয়ার করুন