এমপি আনার হত্যা তদন্তে কলকাতায় ডিবি হারুন
- আপডেট সময় : ০১:৩২:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
- / 60
ভারতের কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের তদন্ত করতে কলকাতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধি (ডিবি) দল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলকাতার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। ওই প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আব্দুল আহাদ ও সাহেদুর রহমান।
বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ডিবি প্রধান জানান, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় সাংসদ এমপি আনার। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিদেশের মাটিতে কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানসহ যারা হত্যাকারী সবাই বাংলাদেশি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৩৬৪ ধারায় অপহরণের মামলা করা হয়েছে। মামলা অনুযায়ী, বাংলাদেশে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে এবং কলকাতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরে গুম করার জন্য এমপি আনারের মরদেহের টুকরো বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে, অপরাধ যেখান থেকে শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে তা খুঁজে বের করা। তিনি বলনে, ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অনুযায়ী, তদন্তকারী দলকে দুটি স্থানে পরিদর্শন করতে হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল বিশ্বাস। তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। আর আমানুল্লাহ নামে এ ব্যক্তি ভারতে এসেছেন। তার কাছে অনেক তথ্য পেয়েছি। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এবং আমাদের মধ্যে অনেক তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। আমরা কলকাতা পুলিশের কাছে থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাইবো। এরপর এই খুনের পেছনের মূল কারণ কি রয়েছে, তা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদারকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে রশিদ বলেন, যদি অপরাধ একই দেশে সংঘটিত হতো; সেক্ষেত্রে আমরা আসামিদের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু দেশ ভিন্ন; তাই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কথা বলেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ঘটনার পর ১০ তারিখ বাংলাদেশে আসে। এরপর নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। আমরা বাংলাদেশের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, ইন্টারপোলের সঙ্গে কথা বলেও তাকে কিভাবে আনা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
লাশ খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আসা প্রকাশ করে গোয়েন্দা প্রদান জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সিআইডি অনেক কাজ করছে, অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা আশা করি, খুব দ্রুত তারা এ হত্যার সব তথ্য পেয়ে যাবে।’
বিমানবন্দর থেকে তারা নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেলে যান। সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। তবে জানা গেছে, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন, ভাঙ্গরে কৃষ্ণ মাটি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে যেতে পারেন বাংলাদেশি গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
গত ১৩ মে এই অভিজাত আবাসনেই এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। তদন্তে নেমে গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এমপি আনারের লাশের টুকরে ফেলা হয়েছিল ভাঙ্গড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায়। ফলে লাশের টুকরোর সন্ধান পেতে গত তিন ধরে দফায় দফায় কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা বাগজোলা খাল ও সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি আভিযান চালায় সিআইডি। এমনকি অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকেও সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। পানিতে নামানো হয় কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের। জাল ও যন্ত্রচালিত নৌকা ব্যবহার করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি সেই লাশের টুকরো। কিন্তু লাশ বা লাশের টুকরো না পেলে খুনের মামলাও দায়ের করতে পারছে না পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার করা কসাই জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে নিউ টাউনের সেই অভিজাত সঞ্জীবা আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে গিয়ে খুনের ঘটনার পুনঃনির্মাণ করতে পারে সিআইডি।
নিউজটি শেয়ার করুন