নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ : গর্ভধারণ এখনও ‘অসুস্থতা’
- আপডেট সময় : ১২:৫৪:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
- / 54
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ রোববার (২৮ মে)। প্রতি বছর মতো এবারও ‘গর্ভকালে চারবার সেবা গ্রহণ করি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি’ —এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হলো নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের উদ্দেশ্য। একজন নারী গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা-ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা।
এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা। এক কথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার, সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেওয়া।
ফিট আছেন অথচ ‘অসুস্থ’— এটা কেবল সেই বাবাই নয়, হাজারও বাবা এমনকি মায়েরাও গর্ভধারণের খবর দিতে গিয়ে ‘অসুস্থতা’ শব্দটা বলেন। কিংবা গর্ভধারণের কথা জানাতে গিয়ে নিচু স্বরে খবরটা দিয়ে থাকেন। যেনো এটা সবার সামনে বলাটা লজ্জার। মানসিক চিকিৎসকরা বলছেন, এখান থেকে বের হতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এর সবগুলো স্তরে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হবে পরিবারের। তাহলে মাতৃমৃত্যুও কমবে। কিন্তু ট্যাবু নিয়ে এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব না।
এই বিবেচনায় চিকিৎসকরা বলছেন, যে দেশে এখনও গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসবের কোনও সিদ্ধান্তে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে না, সেখানে মাতৃত্ব নিরাপদ করা বড় চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি আরও দ্রুত পরিবর্তন করতে চাইলে বাড়ির পুরুষদের ট্যাবু ভাঙতে হবে এবং বেশকিছু বিষয়ে নারীকে তার সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভ্যস্ত করে তুলতে মানসিক সহায়তা দেওয়ার দরকার আছে।
মূলত, অন্তঃসত্ত্বাকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই নিরাপদ মাতৃত্ব। গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে বিশ্বে প্রতিদিন ৮৩০ জন নারীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশের মৃত্যু ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। সেই দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে ১৯৮৭ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত নাইরোবি কনফারেন্সে এই নিরাপদ মাতৃত্বের ঘোষণা করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল— ২০০০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমানো। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এ বিষয়ে অনুমোদন দিলে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন শুরু হয়। পরে ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগকে টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে।
কেন এখনও নারীর শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনটাকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপই তোলা সম্ভব হয় না, পিরিয়ডের কথা, মা হওয়ার কথা ফিসফাস করে বলতে হয়— প্রশ্নে প্রশ্নে অধিকারকর্মীও নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, ‘আমাদের এখানে পুরুষরা শরীর ও চিকিৎসা— এসব বিষয়গুলোকে প্রয়োজন হিসেবে ভাবতে শিখে বড় হয় না। একজন রোগীর শরীর যে কেবলই কয়েকটি অঙ্গ, সেভাবে দেখতে পারেন না।’
কুমুদিনী মহিলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, এর সঙ্গে শিক্ষার বিষয়টি যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষার হার বাড়ানো না গেলে এবং প্রতিষ্ঠানে এসব বিষয় নিয়ে উন্মুক্ত আলাপের পরিবেশ তৈরি না করলে বিষয়গুলো যে ‘স্বাভাবিক’ সেটা মগজে ঢুকবে না।’’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের হার ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ১৫ বছরের নিচে এই হার ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে এই যে ফিসফিসিয়ে বলা, বা ঠিক কীভাবে বিষয়টি ঘোষণাদে— তা বুঝতে না পারার বিষয়গুলো পুরুষকে বুঝতে হবে আগে।’
বিলকিস আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘পুরুষের শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে নারীদের মধ্যে কৌতূহল হয়তো আছে, কিন্তু নারীর কারণে তাকে মানসিকভাবে হয়রান হতে হয় না। কিন্তু নারীর শারীরিক স্বাভাবিক যে পরিবর্তন ও প্রক্রিয়া, সেগুলো নিয়ে পুরুষের উদাসিনতা থেকে টিপ্পনী কাটার বিষয়গুলো পরিবর্তন হওয়া জরুরি। আমাদের এখানে পুরুষরা… চিকিৎসাকে চিকিৎসা হিসেবে, রোগীর শরীর হিসেবে দেখতে পারেন না। পুরুষ গাইনি চিকিৎসক প্রশ্নই ওঠে না, কিন্তু নারী চিকিৎসকের কাছেও নিতে চান না। সে জানেই না শরীরের কী পরিবর্তন হয় এবং তার যৌন জীবনের পরিবর্তনগুলো কী হবে। পুরো সময়টা মানসিক টানাপড়েনে কাটে। সেটাও তাকে নিরাপদ মাতৃত্বর জায়গায় নাজুক করে তোলে।
নিউজটি শেয়ার করুন