ডলার সংকট : দেশে কমল বিদেশি বিনিয়োগ
- আপডেট সময় : ১১:৩০:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
- / 75
ডলারের সংকটকালে বিদেশি বিনিয়োগে দুঃখের খবর। কারণ ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৭.৮০ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশের সুদ, একটি প্রতিষ্ঠান ও কয়েকজন ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে ২০২৩ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা তৈরি হয়েছে। এই সময় দেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাজ্য।
দেশটি ২০২৩ সালে একাই বিনিয়োগ করেছে মোট বিনিয়োগের ২০.৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দেশে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৯৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
যদিও আগের বছর ২০২২ সালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৮২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ১৭.৮০ শতাংশ। তবে এই সময় নিট বিনিয়োগ কমেছে ১৩.৭০ শতাংশ। ২০২২ সালে দেশে বিদেশি নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৪৮ কোটি ডলার।
কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ডলারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ সংকট ও এর কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রেটিং কমে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো এখানে কাজ করেছে। এ ছাড়া দেশে গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন কারণে গ্রিনফিল্ড বা নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। হলেও যৎসামান্য। আবার এফডিআই স্টকের মধ্যে পুনর্বিনিয়োগও আছে অনেক।
এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী অর্থ প্রত্যাবাসন করতে না পেরে পুনরায় বিনিয়োগ করছেন। কভিড-পরবর্তী আমাদের অভ্যন্তরীণ সংকট বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট না করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২৩ সালে দেশে পুঞ্জীভূত বিদেশি বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৫ কোটি ডলার। ২০২২ সালে যার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের পুঞ্জীভূত বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১ শতাংশ। গত বছর দেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে পুনর্বিনিয়োগ থেকে, পরিমাণটা প্রায় ২২১ কোটি ডলার। তবে একদম নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম, প্রায় সাড়ে ৭০ কোটি ডলার। মোট বিদেশি বিনিয়োগের ২৩.৫ শতাংশ এসেছে ইকুইটি বা মূলধনী বিনিয়োগ হিসেবে। ২০২২ সালের তুলনায় মূলধনী বিনিয়োগ কমেছে ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তকম্পানি ঋণ হিসেবে সাড়ে আট কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে যেসব দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটি একাই বিনিয়োগ করেছে ৬১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ২০.৪০ শতাংশ। এর পরের অবস্থান নেদারল্যান্ডসের। দেশটি বিনিয়োগ করেছে ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ১২.২০ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বা ১০.৫০ শতাংশ। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীন ও কোরিয়া। দেশ দুটির বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ কোটি ও ১৮ কোটি ডলার।
২০২৩ সালে বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে উৎপাদনশীল খাতে। এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১২৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৪১.৮০ শতাংশ। বিনিয়োগের খাতে এর পরের অবস্থান বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ কোটি ১২ লাখ ডলার বা ১৯.৩০ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ১৮.৪০ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবহন, গুদামজাত পণ্য ও যোগাযোগ খাতে ৯.৭০ শতাংশ, সেবা খাতে ৬.৯০ শতাংশ, কৃষি ও মৎস্য খাতে ১.৯০ শতাংশ, নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে ১.৯০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে বিদেশিরা।
নিউজটি শেয়ার করুন