ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ইসলামের জন্য ছেড়েছিলেন অভিনয় ॥ দেড় বছরের মাথায় ফের অন্তঃসত্ত্বা সানা খান Logo কলার খোসা রোজ লাগান, যৌবন উপচে পড়বে Logo শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরীমনি এবং দ্রুত প্রস্থান Logo যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক দল জানালেন, কেমন পুরুষকে বিয়ে করলে আপনি সুখী হতে পারবেন Logo বিবাহিত অথচ স্বামী-স্ত্রী আলাদা ঘুমান যে দেশে Logo সাভারে কাপড়ের গোডাউনে আগুন, দেড় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে Logo শাকিবের সাক্ষাতে মুগ্ধতা যেন কাটতে চাইছে না সৌমিতৃষার Logo ৫৩ ঘণ্টা পর শ্রমিক অবরোধ প্রত্যাহার, যান চলাচল স্বাভাবিক Logo পাচার অর্থ উদ্ধারে নিয়োগ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ল ফার্ম Logo তিন দিনের সফরে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

 

ফল মেলায় কৃষক নেই, দোকানির আধিক্য

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • / 71
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

‘ফলে পুষ্টি অর্থ বেশ, স্মার্ট কৃষির বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ফল মেলা শেষ হবে আজ শনিবার। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলায় কৃষি উদ্যোক্তা, ফল চাষি, রপ্তানিকারক ও বাজারজাতে জড়িত প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার কথা। চাষি-উদ্যােক্তাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের সংযোগ স্থাপনই ছিল বড় উদ্দেশ্য।

কিন্তু ফল মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, চাষি কিংবা উদ্যোক্তারা নেই। মেলায় যারা স্টল দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই রাজধানীর ফল দোকানি। কৃষির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৬৩টি স্টলের মধ্যে হাতেগোনা চার-পাঁচজন আছেন উদ্যোক্তা। তাও বড় রকমের ফল চাষের সঙ্গে তারা জড়িত নন।

সরেজমিন দেখা গেছে, মেলার প্রবেশমুখের বড় স্টলগুলোর সবই সরকারি প্রতিষ্ঠানের। ভেতরে ছোট স্টলগুলো ঢাকার ফল দোকানিদের। দুটি স্টলে ফলের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে লাড্ডু, কেক, চানাচুরসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার।

মেলায় অংশ নিয়েছে রাজধানীর ফার্মগেটের মণিপুরিপাড়ার ভাই ভাই ফল বিতান। ওই দোকানের মালিক মো. রিপন বলেন, বিনামূল্যে মেলায় স্টল পেয়ে নানা রকমের ফল নিয়ে এসেছেন। বেচাবিক্রি বেশ ভালো। দোকানের চেয়ে প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

ফার্মগেটের ইন্দ্রিরা রোডের মায়ের দোয়া ফল ভান্ডারের মো. সুমন বলেন, ‘আমার ছোট্ট একটি ফল দোকান আছে। কৃষি কর্মকর্তারা বিনামূল্যে মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখানে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

ফল মেলা ঘুরে কোনো স্টলেই উৎপাদক, উদ্যোক্তা কিংবা রপ্তানিকারককে পাওয়া যায়নি। মেলায় ঘুরতে আসা সাবেক এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে এমন মেলা করে কৃষকের কোনো লাভই হয়নি। যে কোনো মেলার উদ্দেশ্য থাকে ক্ষুদ্র চাষি, বড় উদ্যোক্তা, বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানিকারকদের অংশগ্রহণ। কিন্তু ফল মেলায় ঢাকার ফল দোকানদারের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।

ধানমন্ডির বাসিন্দা আসমা আক্তার বাসার ছাদে নানা রকমের ফল চাষ করেছেন। ফল মেলায় এসেছেন অভিজ্ঞতা নিতে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, এখানে কোনো চাষির দেখা পেলাম না। আশা ছিল, ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারব ও রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল কিনতে পারব। কিন্তু ঢাকার ফল দোকানদারদের দখলেই পুরো মেলা। বাইরের দোকানে যে আমের দাম ১২০ টাকা, মেলায় একই আম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

নাটোরের সফল কৃষি উদ্যোক্তা সেলিম রেজা ২০০ বিঘা জমিতে ‘দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারি’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি প্রায় দেড়শ প্রজাতির ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) পদক ও বঙ্গবন্ধু পদক ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১১টি পুরস্কারসহ তাঁর কৃতিত্বের ঝুলিতে ৭৪টি সনদ ও ক্রেস্ট জমা হয়েছে। অথচ এ বড় উদ্যোক্তা ফল মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য দাওয়াতই পাননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সেলিম রেজা বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সরকার যে মেলা করেছে তাতে কৃষক-উদ্যোক্তাদের কোনো লাভ হয়নি। উচিত ছিল ক্ষুদ্র কৃষক, বড় উদ্যোক্তা, বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, রপ্তানিকারক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তত ১০০ বড় কৃষি উদ্যোক্তার যোগাযোগ আছে। আমাদের একটি ফেসবুক গ্রুপও আছে। ফল মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়নি। উল্টো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ফল নিয়ে সরকারি স্টল সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ফল উৎপাদক ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িতদের উৎসাহিত করতেই ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের উৎপাদনকারীদের দাওয়াত দিয়েছি। তাদের অবহেলা করিনি। উৎপাদনকারী অনেকেই হয়তো এখন তাদের বাগান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

ফল মেলায় কৃষক নেই, দোকানির আধিক্য

আপডেট সময় : ১২:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

 

‘ফলে পুষ্টি অর্থ বেশ, স্মার্ট কৃষির বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ফল মেলা শেষ হবে আজ শনিবার। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলায় কৃষি উদ্যোক্তা, ফল চাষি, রপ্তানিকারক ও বাজারজাতে জড়িত প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার কথা। চাষি-উদ্যােক্তাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের সংযোগ স্থাপনই ছিল বড় উদ্দেশ্য।

কিন্তু ফল মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, চাষি কিংবা উদ্যোক্তারা নেই। মেলায় যারা স্টল দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই রাজধানীর ফল দোকানি। কৃষির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৬৩টি স্টলের মধ্যে হাতেগোনা চার-পাঁচজন আছেন উদ্যোক্তা। তাও বড় রকমের ফল চাষের সঙ্গে তারা জড়িত নন।

সরেজমিন দেখা গেছে, মেলার প্রবেশমুখের বড় স্টলগুলোর সবই সরকারি প্রতিষ্ঠানের। ভেতরে ছোট স্টলগুলো ঢাকার ফল দোকানিদের। দুটি স্টলে ফলের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে লাড্ডু, কেক, চানাচুরসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার।

মেলায় অংশ নিয়েছে রাজধানীর ফার্মগেটের মণিপুরিপাড়ার ভাই ভাই ফল বিতান। ওই দোকানের মালিক মো. রিপন বলেন, বিনামূল্যে মেলায় স্টল পেয়ে নানা রকমের ফল নিয়ে এসেছেন। বেচাবিক্রি বেশ ভালো। দোকানের চেয়ে প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

ফার্মগেটের ইন্দ্রিরা রোডের মায়ের দোয়া ফল ভান্ডারের মো. সুমন বলেন, ‘আমার ছোট্ট একটি ফল দোকান আছে। কৃষি কর্মকর্তারা বিনামূল্যে মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখানে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

ফল মেলা ঘুরে কোনো স্টলেই উৎপাদক, উদ্যোক্তা কিংবা রপ্তানিকারককে পাওয়া যায়নি। মেলায় ঘুরতে আসা সাবেক এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে এমন মেলা করে কৃষকের কোনো লাভই হয়নি। যে কোনো মেলার উদ্দেশ্য থাকে ক্ষুদ্র চাষি, বড় উদ্যোক্তা, বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানিকারকদের অংশগ্রহণ। কিন্তু ফল মেলায় ঢাকার ফল দোকানদারের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।

ধানমন্ডির বাসিন্দা আসমা আক্তার বাসার ছাদে নানা রকমের ফল চাষ করেছেন। ফল মেলায় এসেছেন অভিজ্ঞতা নিতে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, এখানে কোনো চাষির দেখা পেলাম না। আশা ছিল, ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারব ও রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল কিনতে পারব। কিন্তু ঢাকার ফল দোকানদারদের দখলেই পুরো মেলা। বাইরের দোকানে যে আমের দাম ১২০ টাকা, মেলায় একই আম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

নাটোরের সফল কৃষি উদ্যোক্তা সেলিম রেজা ২০০ বিঘা জমিতে ‘দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারি’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি প্রায় দেড়শ প্রজাতির ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) পদক ও বঙ্গবন্ধু পদক ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১১টি পুরস্কারসহ তাঁর কৃতিত্বের ঝুলিতে ৭৪টি সনদ ও ক্রেস্ট জমা হয়েছে। অথচ এ বড় উদ্যোক্তা ফল মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য দাওয়াতই পাননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সেলিম রেজা বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সরকার যে মেলা করেছে তাতে কৃষক-উদ্যোক্তাদের কোনো লাভ হয়নি। উচিত ছিল ক্ষুদ্র কৃষক, বড় উদ্যোক্তা, বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, রপ্তানিকারক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তত ১০০ বড় কৃষি উদ্যোক্তার যোগাযোগ আছে। আমাদের একটি ফেসবুক গ্রুপও আছে। ফল মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়নি। উল্টো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ফল নিয়ে সরকারি স্টল সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ফল উৎপাদক ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িতদের উৎসাহিত করতেই ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের উৎপাদনকারীদের দাওয়াত দিয়েছি। তাদের অবহেলা করিনি। উৎপাদনকারী অনেকেই হয়তো এখন তাদের বাগান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি।