বৈদ্যুতিক গাড়ির আগুন আতঙ্ক
- আপডেট সময় : ০২:১১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪
- / 72
জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলেও বৈদ্যুতিক গাড়ির আগুন নেভাতে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কারণ, বৈদ্যুতিক গাড়িতে থাকা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির আগুন মোকাবিলায় এখনো তেমন কার্যকর প্রযুক্তি বাজারে আসেনি। আর তাই বৈদ্যুতিক গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা বেশ বিরল হলেও তৈরি থাকতে চান অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।
অন্যান্য যানবাহনের মতো দুর্ঘটনার কবলে পড়লে বৈদ্যুতিক গাড়িও দুমড়েমুচড়ে যেতে পারে। তবে জ্বালানিচালিত গাড়িতে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো বিশাল ব্যাটারি না থাকায় আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে কম। বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তির ব্যাটারি। এ ধরনের ব্যাটারি আঘাত পেয়ে ফুটো হয়ে গেলে দ্রুত আগুন ধরে যায়, আবার তা পানি বা বালু দিয়ে নেভানোও সম্ভব নয়।
বিশেষায়িত ফোম বা গ্যাস ব্যবহার করে তবেই সেটা নেভানো সম্ভব। ইঞ্জিনচালিত গাড়ির পেট্রল ট্যাংকে আগুন ধরে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়, তবে সেটা নেভানো লিথিয়ামের আগুনের মতো কঠিনও নয় আবার পেট্রলের আগুনের তাপ অনেক কম, লিথিয়াম ব্যাটারির আগুনে গাড়ির ফ্রেম গলে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। গাড়ি নির্মাতারা অবশ্য ব্যাটারিগুলো যাতে নিরাপদে থাকে সে জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েই গাড়ি ডিজাইন করে থাকেন, এর পরও কিছুটা বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়।
বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, চার্জিং সিস্টেম ও মোটর বেশ উচ্চ ভোল্টেজে চলে।
জ্বালানিতে চলা গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির আগুনের ধরন বেশ আলাদা। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের এসেক্স ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস স্টেশনের ব্যবস্থাপক টেরি মাহের বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির আগুনের উৎস যদি ব্যাটারি হয়, তাহলে সেখানে পৌঁছানো বেশ কঠিন। বৈদ্যুতিক গাড়ির আগুন বাষ্পীভূত বিস্ফোরণও ঘটাতে পারে। এ ধরনের আগুন বাতাস ও পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক তৈরি করে। এসব কারণে বৈদ্যুতিক গাড়িতে আগুন লাগলে তা পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।
বেশির ভাগ গাড়িতেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে ৪০০ ভোল্টের সিস্টেম। সময়ের সঙ্গে গাড়ির নানা সিস্টেম ক্ষয়ে গেলে বা দুর্ঘটনার কারণে তার বেরিয়ে গেলে, হাই ভোল্টেজ শক খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উদ্ধারকারীদের জন্য এটি বাড়তি চ্যালেঞ্জ, যা জ্বালানিচালিত গাড়িতে নেই। চার্জিং প্লাগ থেকেও শক খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যদি সেটার প্লাগ কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস সব সময় পুরোপুরি ঠিক থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের এক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ম্যানেজার টেরি ম্যাহের বলেছেন, এখন পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত গাড়ির দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁদের খুব বেশি কাজ করতে হয়নি। কিন্তু যে কটি ক্ষেত্রে তাঁরা কাজ করেছেন, প্রতিবারই তাঁদের যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। লিথিয়াম ব্যাটারির আগুন নেভানো শুধু কঠিনই নয়, নিভে গেলেও দু-তিন সপ্তাহ পরে আবারও জ্বলে ওঠার ঘটনাও ঘটেছে। এর সঙ্গে আছে অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া, যা তাঁদের কাছে থাকা মাস্কের মাধ্যমে ঠেকানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা নিরাপদে থাকলে আমরা আর আগুন নেভানোর ঝুঁকি নিই না, গাড়ি পুড়ে শেষ হওয়ার অপেক্ষা করি।’
ব্যাটারিচালিত গাড়ির ধ্বংসাবশেষ রাস্তা থেকে সরানোও বাড়তি ঝামেলার কাজ। বিশেষায়িত ট্রাক ছাড়া সেসব সরানো সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে এমন সেবা অপ্রতুল, জানিয়েছেন টেরি ম্যাহের। যেখানে দুর্ঘটনার ৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁরা রাস্তা থেকে গাড়িগুলো সরিয়ে থাকেন, সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ি সরাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক দিনও লেগে যাচ্ছে।
গাড়ির পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত স্কুটার ও বাইকেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দুর্ঘটনায় বাইকের ব্যাটারিতে আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা গাড়ির চেয়ে অনেক বেশি। এটা নিয়েও যুক্তরাজ্যের ফায়ার সার্ভিস চিন্তিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি, বাইক ও রিকশার সংখ্যা। নতুন এসব যানবাহনের বিপদ এবং উদ্ধারের বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
নিউজটি শেয়ার করুন