বাজেট ঘোষণার পর লাগাতার দর পতন
- আপডেট সময় : ০৮:৫৫:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪
- / 72
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কঠিন সময় যাচ্ছে। দর পতন কোথায় গিয়ে ঠেকবে–ঘুরেফিরে সবার মুখে একই প্রশ্ন ঘুরছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর গত তিন কার্যদিবসে তালিকাভুক্ত ৩৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৫৮টির বা ৯০ শতাংশের দর পতন হয়েছে। এ দরপতনে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৫০৭০ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর বা সাড়ে তিন বছরের সর্বনিম্ন।
চলতি দর পতন চলছে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদরে আরোপের দেড় বছর পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে দর পতন শুরু হয়। ফ্লোর প্রাইসের নানা কারণে সার্বিক অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়, তাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আয় হারাচ্ছিল। তবে এ কারণে শেয়ারের দর সমন্বয় করার সুযোগ ছিল না। ফ্লোর প্রাইস তুলে নিতেই দর হারাতে শুরু করে। টানা তিন মাস ধরে দর পতন চলার পর তা ঠেকাতে না পেরে একদিনে কোনো শেয়ারের দর ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না এমন নিয়ম বেঁধে দিয়েছে বিএসইসি। এতে সংকট আরও বাড়ছে বলে অভিমত ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তাদের।
এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল প্রস্তাবিত বাজেটের সংবাদ সম্মেলন করে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ। ডিবিএর নেতারা জানান, দেশের শেয়ারবাজার মূলত তিন বড় সমস্যায় জর্জরিত। এর একটি হলো– ভালো কোম্পানি আসছে না। দ্বিতীয়, স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব। তৃতীয় সমস্যা হলো–এখানে কারও কোনো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই। এসব সমস্যার কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন না। উল্টো অনেকে লোকসান দিয়ে শেয়ারবাজার ছাড়ছেন। যারা এখনও বাজারে আছেন তাঁদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারবাজার সমস্যার সমাধান হবে না।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত চার মাসের ৭৭ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ২৩ দিন শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল ৮০৭ পয়েন্ট। বাকি ৫৪ দিনে ২১৮৪ পয়েন্ট হারায়। সাকল্যে ১৩৭৭ পয়েন্ট বা ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ পতন হয়েছে। সার্বিক হিসাবে এ সময়ে ৩৪১ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমপক্ষে ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এত কম সময়ে এত বড় দর পতনের নজির খুবই কম আছে।
গতকাল ৩৮৮ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৬টির দর কমেছে এবং বেড়েছে মাত্র ৪৮টির। দর পতন কমিয়ে রাখতে একদিনে কোনো শেয়ারের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না– এমন নিয়মের কারণে প্রতিদিন শতাধিক শেয়ার সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হচ্ছে। গতকালও লেনদেনের শেষে ১৩১টির ক্ষেত্রে এমন দশা দেখা গেছে। অবশ্য লেনদেনের মাঝে সংখ্যাটি ২৫০ ছুঁয়ে ছিল।
ডিবিএর সংবাদ সম্মেলন : ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার ধুঁকছে। বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে নীতিসহায়তা দরকার। তারা আশা করেছিলেন, বাজেটে কিছু নীতিসহায়তা দেওয়া হবে। তার বদলে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। এর ফলে বাজেটের পর বাজারে টানা পতন চলছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মতিঝিলে ডিএসই ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাইফউদ্দিন, সহসভাপতি ওমর হায়দার খান প্রমুখ।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, ডিবিএ মূলধনি মুনাফার বিরুদ্ধে নয়। তবে বাজারে এখন যে পরিস্থিতি, তাতে এমন করারোপের সময় নয়। এ সিদ্ধান্ত এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি কীভাবে সহজে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর কাটা হবে, তার একটি পথনকশা আশা করছেন। এখন যে হারে কর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, এত কর দিয়ে কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।
সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর উল্লেখ করে ডিএসইর এক স্বতন্ত্র পরিচালকের শেয়ার ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিবিএ সভাপতি বলেন, আগে ব্রোকাররা নিজেদের স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করতেন, এমন অভিযোগ তুলে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা ও পর্ষদ পৃথক করা হয়েছে। এখন স্বতন্ত্র পরিচালকরা পরিচালনা পর্ষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অনৈতিক। ডিএসইতেই যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শুধু ডিএসইর পরিচালক নন, বিএসইসির কেউ কেউ শেয়ার ব্যবসায় জড়িত–এমন তথ্য সাংবাদিকরা পাচ্ছেন জানালে ডিবিএ নেতারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কারও শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া সবার জন্য অস্বস্তিকর বিষয়। এ ধরনের ঘটনা বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায়।
নিউজটি শেয়ার করুন