ঢাকা ১১:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জন্মনিবন্ধনের বাইরে তিন কোটি নাগরিক -বিবিএসের জরিপ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে ১৭ শতাংশেরও বেশি মানুষের জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। সেই হিসাবে ২ কোটি ৯২ লাখ মানুষ জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আর্থসামাজিক জনমিতিক জরিপের প্রতিবেদন বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে। অর্থাৎ, বাকি ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন নেই।

গতকাল বুধবার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ১ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিবিএসের সব ধরনের জরিপের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ।

জন্মনিবন্ধন হলো একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। জন্মের পরই সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্মসনদ। নবজাতকের জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি আইনগত প্রথম ধাপ। তবে জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে ভোগান্তির কারণেই মূলত এত মানুষ নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুসারে, জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন নারীরা। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ পুরুষের জন্মনিবন্ধন আছে। আর জন্মনিবন্ধন থাকা নারীর সংখ্যা ৮২ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের জন্মনিবন্ধনের হার কম। গ্রামে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ মানুষের জন্মসনদ নেই। শহরে এ হার ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মসনদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলো থাকা জরুরি। নাগরিক সেবা পেতে এসব নথির প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক সময়সীমাটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় জন্মসনদের ব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে অনেকেরই এই সনদটি নেই। তাদের প্রয়োজনও হয় না। জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের এটা থাকা আবশ্যক। যাদের নেই, তারা হয়তো দেশের বাইরে রয়েছেন। আর পাসপোর্টের ব্যবহার এখনও ব্যাপক হারে প্রয়োজন হচ্ছে না। সে কারণে টাকা ব্যয় করে অনেকে পাসপোর্ট করছেন না। আর এসব সেবা পেতে ভোগান্তির একটা বড় বিষয় তো রয়েছেই।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ আর এগিয়ে চট্টগ্রাম। বরিশাল বিভাগের মোট জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে। অর্থাৎ ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন নেই। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে জন্মনিবন্ধন রয়েছে ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ মানুষের।

১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। ১৮ বছর বয়স হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক নথি। তবে এখনও প্রায় ৫২ লাখ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। অর্থাৎ ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।

বিবিএসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ১৬ কোটি ২৪ লাখ মানুষের কোনো ধরনের পাসপোর্ট নেই। বাকি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের হাতে পাসপোর্ট রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, শুধু দেশে অবস্থানরত নাগরিকদের পাসপোর্টের তথ্য রয়েছে এ জরিপে। বিদেশে প্রায় এক কোটি বা তারও বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। তাদের পাসপোর্টের তথ্য খুব সম্ভবত এ জরিপে আসেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

জন্মনিবন্ধনের বাইরে তিন কোটি নাগরিক -বিবিএসের জরিপ

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে ১৭ শতাংশেরও বেশি মানুষের জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। সেই হিসাবে ২ কোটি ৯২ লাখ মানুষ জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আর্থসামাজিক জনমিতিক জরিপের প্রতিবেদন বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে। অর্থাৎ, বাকি ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন নেই।

গতকাল বুধবার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ১ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিবিএসের সব ধরনের জরিপের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ।

জন্মনিবন্ধন হলো একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। জন্মের পরই সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্মসনদ। নবজাতকের জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি আইনগত প্রথম ধাপ। তবে জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে ভোগান্তির কারণেই মূলত এত মানুষ নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুসারে, জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন নারীরা। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ পুরুষের জন্মনিবন্ধন আছে। আর জন্মনিবন্ধন থাকা নারীর সংখ্যা ৮২ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের জন্মনিবন্ধনের হার কম। গ্রামে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ মানুষের জন্মসনদ নেই। শহরে এ হার ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মসনদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলো থাকা জরুরি। নাগরিক সেবা পেতে এসব নথির প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক সময়সীমাটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় জন্মসনদের ব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে অনেকেরই এই সনদটি নেই। তাদের প্রয়োজনও হয় না। জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের এটা থাকা আবশ্যক। যাদের নেই, তারা হয়তো দেশের বাইরে রয়েছেন। আর পাসপোর্টের ব্যবহার এখনও ব্যাপক হারে প্রয়োজন হচ্ছে না। সে কারণে টাকা ব্যয় করে অনেকে পাসপোর্ট করছেন না। আর এসব সেবা পেতে ভোগান্তির একটা বড় বিষয় তো রয়েছেই।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ আর এগিয়ে চট্টগ্রাম। বরিশাল বিভাগের মোট জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে। অর্থাৎ ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন নেই। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে জন্মনিবন্ধন রয়েছে ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ মানুষের।

১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। ১৮ বছর বয়স হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক নথি। তবে এখনও প্রায় ৫২ লাখ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। অর্থাৎ ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।

বিবিএসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ১৬ কোটি ২৪ লাখ মানুষের কোনো ধরনের পাসপোর্ট নেই। বাকি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের হাতে পাসপোর্ট রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, শুধু দেশে অবস্থানরত নাগরিকদের পাসপোর্টের তথ্য রয়েছে এ জরিপে। বিদেশে প্রায় এক কোটি বা তারও বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। তাদের পাসপোর্টের তথ্য খুব সম্ভবত এ জরিপে আসেনি।