ঢাকা ০৭:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

পদ্মাপাড়ে বেড়িবাঁধের জন্য হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • / 55
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

এক যুগ আগেও পদ্মাপাড়ের মোতালেব মাদবরের ছিল ১২ বিঘা ফসলি জমি। সেই জমিতে প্রতি বছর ফলতো ৮০ মণ ধান আর ৩০ মণ পাট। এক কথায় বড় মাপের গৃহস্থ ছিলেন তিনি। তার জমিতে ফলানো ফসল বিক্রির টাকায় নিশ্চিন্তে চলে যেতো ৬ সদস্যের পরিবার।

তবে সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার। সর্বনাশা পদ্মার করাল গ্রাসে সবটুকু হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব। এখন শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে হাসেম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির ৪০ শতাংশ জমিতে প্রতিবছর ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

তবে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় নতুন করে সেই এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন তিনি।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল পাথালিয়াকান্দি এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। বছরের পর বছর পদ্মার তাণ্ডবে বিলীন হচ্ছে হাজারো বাড়িঘর। শুধু গত ২ বছরের মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে গ্রামটির ১ কিলোমিটার অংশ। গত ১ সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে ওই এলাকায় আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীগর্ভে চলে গেছে বেশ কিছু ফসলি জমি ও বাড়িঘর।

এছাড়াও নতুন করে ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে পাথালিয়াকান্দি এলাকার আরও শতাধিক পরিবার। তবে ভাঙন ঠেকাতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন কবলিত ১ কিলোমিটার অংশ জুড়ে ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পদ্মা নদীর দীর্ঘস্থায়ী ভাঙন রোধে জাজিরা উপজেলায় ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটারের একটি নদীরক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গত বছরের অক্টোবর মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেকে) প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে চলতি বছরের ১৭ মে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালের জুন মাসে।

বর্তমানে বাঁধের আওতায় জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা, পালের চর, বড় কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে সিসি ব্লক স্থাপনসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে পাথালিয়াকান্দি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এতে নদী পাড়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে পাথালিয়া এলাকার বেশ কিছু ফসলি জমি ও বসতবাড়ির জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে নদীর পাড়ের ভাঙন কবলিত কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

পদ্মার ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ চান পাথালিয়াকান্দির মোতালেব মাদবর। তিনি বলেন, ‘আমার এই এলাকায় একসময় অনেক জমিজমা আছিল। ভাঙতে ভাঙতে আমি এখন নিঃস্ব। এর আগে সব হারিয়ে সিডারচর চলে যাই। এখন পাথালিয়া কান্দি এলাকায় পরের জায়গায় থাকতাছি। বছর বছর আমাকে জমি ভাড়া দিতে হয়। এখন আবার নদী ভাঙা শুরু হইছে। এইবার যদি আবার ভাঙে নতুন করে ঘর ওঠানোর টাকাও নাই। আমি চাই দ্রুত এই এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ করা হোক।’

একই দাবি জানিয়েছেন মর্জিনা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর ভাঙন শুরু হইলে বস্তা ফালায়, আবার সেই বস্তা পানিতে ভাইসা যায়। আমাগো কষ্টের কোনো সীমা থাকে না। আমাগো এলাকায় দ্রুত বেড়িবাঁন চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘১৫ দিন আগেও আমাগো বাড়ি থেকে দুই নল দূরে নদী আছিল। কয়েক দিন ধরে ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির উঠানের কাছে চলে আইছে। আমার বাড়ির উঠান দিয়া ৬০০ লোকের যাতায়াত। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ না করলে আগামী বছর আমার বাড়িটাও পদ্মায় চইলা যাইবো।

জানতে চাইলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিক বলেন, গত এক সপ্তাহে পাথালিয়াকান্দি এলাকায় বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ভাঙন ঠেকাতে এক কিলোমিটার অংশ জুড়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি। এরইমধ্যে সেখানে ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

এদিকে ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম আহসান হাবীব বলেন, জাজিরা উপজেলায় ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮.৬৭ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা সেসব স্থানে প্লেসিং করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি, যা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে প্রকল্পের আওতায় নদীর ডান তীরের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চের মানুষ নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি জায়গাটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

পদ্মাপাড়ে বেড়িবাঁধের জন্য হাহাকার

আপডেট সময় : ১২:৩০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

 

এক যুগ আগেও পদ্মাপাড়ের মোতালেব মাদবরের ছিল ১২ বিঘা ফসলি জমি। সেই জমিতে প্রতি বছর ফলতো ৮০ মণ ধান আর ৩০ মণ পাট। এক কথায় বড় মাপের গৃহস্থ ছিলেন তিনি। তার জমিতে ফলানো ফসল বিক্রির টাকায় নিশ্চিন্তে চলে যেতো ৬ সদস্যের পরিবার।

তবে সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার। সর্বনাশা পদ্মার করাল গ্রাসে সবটুকু হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব। এখন শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে হাসেম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির ৪০ শতাংশ জমিতে প্রতিবছর ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

তবে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় নতুন করে সেই এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন তিনি।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল পাথালিয়াকান্দি এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। বছরের পর বছর পদ্মার তাণ্ডবে বিলীন হচ্ছে হাজারো বাড়িঘর। শুধু গত ২ বছরের মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে গ্রামটির ১ কিলোমিটার অংশ। গত ১ সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে ওই এলাকায় আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীগর্ভে চলে গেছে বেশ কিছু ফসলি জমি ও বাড়িঘর।

এছাড়াও নতুন করে ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে পাথালিয়াকান্দি এলাকার আরও শতাধিক পরিবার। তবে ভাঙন ঠেকাতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন কবলিত ১ কিলোমিটার অংশ জুড়ে ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পদ্মা নদীর দীর্ঘস্থায়ী ভাঙন রোধে জাজিরা উপজেলায় ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটারের একটি নদীরক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গত বছরের অক্টোবর মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেকে) প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে চলতি বছরের ১৭ মে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালের জুন মাসে।

বর্তমানে বাঁধের আওতায় জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা, পালের চর, বড় কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে সিসি ব্লক স্থাপনসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে পাথালিয়াকান্দি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এতে নদী পাড়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে পাথালিয়া এলাকার বেশ কিছু ফসলি জমি ও বসতবাড়ির জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে নদীর পাড়ের ভাঙন কবলিত কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

পদ্মার ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ চান পাথালিয়াকান্দির মোতালেব মাদবর। তিনি বলেন, ‘আমার এই এলাকায় একসময় অনেক জমিজমা আছিল। ভাঙতে ভাঙতে আমি এখন নিঃস্ব। এর আগে সব হারিয়ে সিডারচর চলে যাই। এখন পাথালিয়া কান্দি এলাকায় পরের জায়গায় থাকতাছি। বছর বছর আমাকে জমি ভাড়া দিতে হয়। এখন আবার নদী ভাঙা শুরু হইছে। এইবার যদি আবার ভাঙে নতুন করে ঘর ওঠানোর টাকাও নাই। আমি চাই দ্রুত এই এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ করা হোক।’

একই দাবি জানিয়েছেন মর্জিনা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর ভাঙন শুরু হইলে বস্তা ফালায়, আবার সেই বস্তা পানিতে ভাইসা যায়। আমাগো কষ্টের কোনো সীমা থাকে না। আমাগো এলাকায় দ্রুত বেড়িবাঁন চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘১৫ দিন আগেও আমাগো বাড়ি থেকে দুই নল দূরে নদী আছিল। কয়েক দিন ধরে ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির উঠানের কাছে চলে আইছে। আমার বাড়ির উঠান দিয়া ৬০০ লোকের যাতায়াত। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ না করলে আগামী বছর আমার বাড়িটাও পদ্মায় চইলা যাইবো।

জানতে চাইলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিক বলেন, গত এক সপ্তাহে পাথালিয়াকান্দি এলাকায় বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ভাঙন ঠেকাতে এক কিলোমিটার অংশ জুড়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি। এরইমধ্যে সেখানে ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

এদিকে ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম আহসান হাবীব বলেন, জাজিরা উপজেলায় ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮.৬৭ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা সেসব স্থানে প্লেসিং করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি, যা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে প্রকল্পের আওতায় নদীর ডান তীরের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চের মানুষ নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি জায়গাটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।