ঢাকা ০৯:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

উপজেলা ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাল জামায়াত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
  • / 72
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ঈদুল ফিতরের পরপরই এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দলের মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলসহ নানা কারণে দলটি এতদিন নির্বাচন থেকে দূরে ছিল। তবে রংপুরের পীরগাছায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হঠাৎ মাসখানেক আগে ভোটের মাঠে নেমেছিলেন জামায়াতের নেতারা।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়।

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে, এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচন করার ব্যাপারে দলের মাঠপর্যায়ে বার্তা ছিল। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তবে প্রথম পর্বের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের আগেই সিদ্ধান্ত বদল করে দলটি। তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। নির্বাচন না করার ব্যাপারে গত শনিবার জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে মৌখিকভাবে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাঁরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, ভোট হবে একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এতে অংশ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভালো করার সুযোগ কম। উল্টো বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সরকারকে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়েছে, যা পরে আরও বাড়তে পারে। এসব বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, ‘জামায়াত উপজেলা নির্বাচন করছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এরপরও কেউ প্রার্থী হলে, তাঁর বিষয়ে সংগঠন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের তিনটি পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল জেলা জামায়াত। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমানকে চেয়ারম্যান পদে, দামুড়হুদা থানা আমির নায়েব আলীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য রেহেনা খাতুনকে মনোনয়ন করে।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনীত করা হয় জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাদ্দিস এনামুল হককে। অবশ্য দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পর তাঁরা কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।

জামায়াত উপজেলা নির্বাচন করছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এরপরও কেউ প্রার্থী হলে, তাঁর বিষয়ে সংগঠন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমীন জানান, ‘আমরা ভোটে যাচ্ছি না। চলমান রাজনীতি, বর্তমান পরিস্থিতি, অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন—সব মিলে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।’

বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে জামায়াতও এই সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি এই উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলনও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার কারণে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

উপজেলা ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাল জামায়াত

আপডেট সময় : ১০:১৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

 

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ঈদুল ফিতরের পরপরই এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দলের মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলসহ নানা কারণে দলটি এতদিন নির্বাচন থেকে দূরে ছিল। তবে রংপুরের পীরগাছায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হঠাৎ মাসখানেক আগে ভোটের মাঠে নেমেছিলেন জামায়াতের নেতারা।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়।

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে, এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচন করার ব্যাপারে দলের মাঠপর্যায়ে বার্তা ছিল। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তবে প্রথম পর্বের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের আগেই সিদ্ধান্ত বদল করে দলটি। তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। নির্বাচন না করার ব্যাপারে গত শনিবার জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে মৌখিকভাবে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাঁরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, ভোট হবে একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এতে অংশ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভালো করার সুযোগ কম। উল্টো বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সরকারকে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়েছে, যা পরে আরও বাড়তে পারে। এসব বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, ‘জামায়াত উপজেলা নির্বাচন করছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এরপরও কেউ প্রার্থী হলে, তাঁর বিষয়ে সংগঠন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের তিনটি পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল জেলা জামায়াত। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমানকে চেয়ারম্যান পদে, দামুড়হুদা থানা আমির নায়েব আলীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য রেহেনা খাতুনকে মনোনয়ন করে।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনীত করা হয় জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাদ্দিস এনামুল হককে। অবশ্য দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পর তাঁরা কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।

জামায়াত উপজেলা নির্বাচন করছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এরপরও কেউ প্রার্থী হলে, তাঁর বিষয়ে সংগঠন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমীন জানান, ‘আমরা ভোটে যাচ্ছি না। চলমান রাজনীতি, বর্তমান পরিস্থিতি, অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন—সব মিলে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।’

বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে জামায়াতও এই সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি এই উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলনও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার কারণে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে।