ঢাকা ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

অকাল মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে লবণের বিকল্প ব্যবহার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪২:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
  • / 84
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

এক চিমটি লবণ কম বা বেশিতে খাবারের স্বাদের ব্যাপক তারতম্য হয়। খাবার সুস্বাদু করতে তাই লবণের পরিমাণের দিকে নজর দিতে হয়। খাবারে বেশি লবণ আবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, সোডিয়াম ক্লোরাইড যৌগের সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

‘লবণের মতো ভালোবাসা’র গল্পটা হয়ত অনেকেই জানেন। যেখানে রাজার ছোট মেয়ে প্রমাণ করে দেয় বেশি লবণ দেওয়া খাবার যেমন খাওয়া যায় না, তেমনি লবণ ছাড়া খাবার বিস্বাদ লাগে। তাই সুস্থতার জন্য খাবারে যেমন পরিমিত লবণ খাওয়া দরকার তেমনি ভালোবাসাটাও হওয়া চাই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণে হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অপর্যাপ্ত পটাশিয়াম রক্তপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে।

আর বিজ্ঞানিরা বলছেন, খাবারে লবণের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে লবণের বিকল্প উপাদান ব্যবহার করলে হৃদসংক্রান্ত অসুখে ভোগার সম্ভাবনা কমে; ফলে আয়ু বাড়তে পারে ১০ বছর।

এই তথ্য জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ‘বন্ড ইউনিভার্সিটি’র ‘ইন্সটিটিউট ফর এভিডেন্স-বেইজড হেল্থকেয়ার’য়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. লোয়াই আলবারকুনি সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আগের গবেষণাগুলো ছিল স্বল্পমেয়াদি, দুই সপ্তাহ ধরে চলেছিল।”

‘অ্যানাল্স অফ ইন্টার্নাল মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণের জন্য ২০২৩ সালের ২৩ অগাস্টের আগে সংগঠিত হওয়া বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ৬৪ বছর আর তারা সাধারণের তুলনায় বেশি মাত্রায় হৃদসংক্রান্ত অসুস্থতার ঝুঁকিতে ছিল।

চীন ছাড়াও, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, পেরু, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে করা এসব গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল দেহে লবণের বিকল্প ব্যবহারের প্রভাব।

দেখা গেছে, এরফলে প্রস্রাবে সোডিয়ামের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে আর কমেছে রক্তচাপ; যা কিনা ওষুধ খাওয়ার মতোই কাজ করেছে।

আলবারকুনি বলেন, “হয়ত এটাই মৃত্যু ঝুঁকি কমার কারণ।”

এই গবেষণার সাথে সংযুক্ত না থেকেও ডেনভারের ‘ন্যাশনাল জুইশ হেল্থ’য়ের ‘কার্ডিওভাস্কুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’য়ের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, “এই গবেষণা খুব জোড়ালো প্রমাণ না দিলেও একটি বিষয় পরিষ্কার করেছে যে, সোডিয়াম লবণ খাদ্যাভ্যাসে কমানোর পাশাপাশি পটাসিয়াম গ্রহণ করাটা উপকারী।”

“সোডিয়াম ক্লোরাইড বা পটাসিয়াম ক্লোরাইড বা ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড- এসবই লবণ। আর পটাসিয়াম গ্রহণের ভালো উপায় হল ফল ও সবিজ খাওয়া”- বলেন এই চিকিৎসক।

লবণ কম খাওয়ার পন্থা

‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ১,৫০০ মিলিগ্রাম লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। আর প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি খাওয়া যাবে না।

আরবারকুনি এক ইমেইল বার্তায় মন্তব্য করেন, “বেশিরভাগ সময় মোড়কজাত ও রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়ার কারণে লবণ গ্রহণের পরিমাণ বেশি হয়। আর কিছু লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায় লবণ বেশি খাওয়া হচ্ছে। যেমন- দেহে ফোলাভাব, ক্লান্ত লাগা, উচ্চ রক্তচাপ, তৃষ্ণা বৃদ্ধি বা প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়া।”

তাই মোড়কজাত যে কোনো খাবার কেনার আগে লবণের পরিমাণ দেখে নিতে হবে। ঘরের রান্নায় কমাতে হবে বেশি লবণে ব্যবহার। আর চেষ্টা করতে হবে লবণের পরিবর্তে লবণের বিকল্প খেতে- পরামর্শ দেন এই গবেষক।

তার কথায়, “এমন না যে লবণ কম খাওয়া আর লবণের বিকল্প গ্রহণ করা মানে হৃদসমস্যার সমস্ত ঝুঁকি কমে যাবে। তবে এটি একটি কার্যকর পন্থা, যার মাধ্যমে হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।”

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

অকাল মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে লবণের বিকল্প ব্যবহার

আপডেট সময় : ১২:৪২:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

 

এক চিমটি লবণ কম বা বেশিতে খাবারের স্বাদের ব্যাপক তারতম্য হয়। খাবার সুস্বাদু করতে তাই লবণের পরিমাণের দিকে নজর দিতে হয়। খাবারে বেশি লবণ আবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, সোডিয়াম ক্লোরাইড যৌগের সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

‘লবণের মতো ভালোবাসা’র গল্পটা হয়ত অনেকেই জানেন। যেখানে রাজার ছোট মেয়ে প্রমাণ করে দেয় বেশি লবণ দেওয়া খাবার যেমন খাওয়া যায় না, তেমনি লবণ ছাড়া খাবার বিস্বাদ লাগে। তাই সুস্থতার জন্য খাবারে যেমন পরিমিত লবণ খাওয়া দরকার তেমনি ভালোবাসাটাও হওয়া চাই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণে হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অপর্যাপ্ত পটাশিয়াম রক্তপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে।

আর বিজ্ঞানিরা বলছেন, খাবারে লবণের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে লবণের বিকল্প উপাদান ব্যবহার করলে হৃদসংক্রান্ত অসুখে ভোগার সম্ভাবনা কমে; ফলে আয়ু বাড়তে পারে ১০ বছর।

এই তথ্য জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ‘বন্ড ইউনিভার্সিটি’র ‘ইন্সটিটিউট ফর এভিডেন্স-বেইজড হেল্থকেয়ার’য়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. লোয়াই আলবারকুনি সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আগের গবেষণাগুলো ছিল স্বল্পমেয়াদি, দুই সপ্তাহ ধরে চলেছিল।”

‘অ্যানাল্স অফ ইন্টার্নাল মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণের জন্য ২০২৩ সালের ২৩ অগাস্টের আগে সংগঠিত হওয়া বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ৬৪ বছর আর তারা সাধারণের তুলনায় বেশি মাত্রায় হৃদসংক্রান্ত অসুস্থতার ঝুঁকিতে ছিল।

চীন ছাড়াও, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, পেরু, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে করা এসব গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল দেহে লবণের বিকল্প ব্যবহারের প্রভাব।

দেখা গেছে, এরফলে প্রস্রাবে সোডিয়ামের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে আর কমেছে রক্তচাপ; যা কিনা ওষুধ খাওয়ার মতোই কাজ করেছে।

আলবারকুনি বলেন, “হয়ত এটাই মৃত্যু ঝুঁকি কমার কারণ।”

এই গবেষণার সাথে সংযুক্ত না থেকেও ডেনভারের ‘ন্যাশনাল জুইশ হেল্থ’য়ের ‘কার্ডিওভাস্কুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’য়ের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, “এই গবেষণা খুব জোড়ালো প্রমাণ না দিলেও একটি বিষয় পরিষ্কার করেছে যে, সোডিয়াম লবণ খাদ্যাভ্যাসে কমানোর পাশাপাশি পটাসিয়াম গ্রহণ করাটা উপকারী।”

“সোডিয়াম ক্লোরাইড বা পটাসিয়াম ক্লোরাইড বা ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড- এসবই লবণ। আর পটাসিয়াম গ্রহণের ভালো উপায় হল ফল ও সবিজ খাওয়া”- বলেন এই চিকিৎসক।

লবণ কম খাওয়ার পন্থা

‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ১,৫০০ মিলিগ্রাম লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। আর প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি খাওয়া যাবে না।

আরবারকুনি এক ইমেইল বার্তায় মন্তব্য করেন, “বেশিরভাগ সময় মোড়কজাত ও রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়ার কারণে লবণ গ্রহণের পরিমাণ বেশি হয়। আর কিছু লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায় লবণ বেশি খাওয়া হচ্ছে। যেমন- দেহে ফোলাভাব, ক্লান্ত লাগা, উচ্চ রক্তচাপ, তৃষ্ণা বৃদ্ধি বা প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়া।”

তাই মোড়কজাত যে কোনো খাবার কেনার আগে লবণের পরিমাণ দেখে নিতে হবে। ঘরের রান্নায় কমাতে হবে বেশি লবণে ব্যবহার। আর চেষ্টা করতে হবে লবণের পরিবর্তে লবণের বিকল্প খেতে- পরামর্শ দেন এই গবেষক।

তার কথায়, “এমন না যে লবণ কম খাওয়া আর লবণের বিকল্প গ্রহণ করা মানে হৃদসমস্যার সমস্ত ঝুঁকি কমে যাবে। তবে এটি একটি কার্যকর পন্থা, যার মাধ্যমে হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।”