যে বনের সব গাছ পাথরের!
- আপডেট সময় : ১২:৩০:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
- / 70
দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিস্তৃত ঘন জঙ্গল। শুধু পার্থক্য একটাই। রহস্যময় এ জঙ্গলের রং কালো। কালো কারণ এ জঙ্গলের গাছগুলো সব পাথর। ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট বড় অগণিত প্রস্তর-বৃক্ষ। জঙ্গলের পাথর গাছগুলো আবার ডালপালাও ছড়িয়ে রয়েছে দেখতে গাছের মতোই মাটি ভেদ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি পাথর।
চীনের ইউনান প্রদেশের পাঁচশো বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই প্রস্তর অরণ্য। আগে এই অঞ্চলের নাম ছিলো শাইলিন। শাইলিন শব্দের অর্থই হলো পাথরের জঙ্গল। চীনের কুনমিং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে শাইলিন।
চুনাপাথরের গাছগুলোর সঙ্গে এই জঙ্গলে জলপ্রপাত, দুটি বিশাল হ্রদ, প্রাকৃতিক গুহাও রয়েছে। ২৭ কোটি বছরেরও বেশি প্রাচীন বলে জানা গেছে এই পাথর বনের বয়স।
গুহার মধ্যে যেমন স্ট্যালাগমাইট গড়ে ওঠে, এই প্রস্তর অরণ্য অনেকটা তেমনই দেখতে। গাছের মতোই মাটি ভেদ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি পাথর। পুরো অরণ্যটাই চুনাপাথরের। তাই এই জঙ্গলে প্রবেশ করলে তাজা অক্সিজেনের পরিবর্তে চুনাপাথরের গন্ধ নাকে আসবে।
এই অরণ্য ৭টি অঞ্চলে বিভক্ত। জলপ্রপাত, দু’টো বিশাল হ্রদ, প্রাকৃতিক গুহা এবং এই পাথরের জঙ্গল সব মিলিয়ে পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
২০০৭ সালে এই এলাকার দু’টো অংশ নাইগু প্রস্তর অরণ্য এবং সুওগেয়ি গ্রাম ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষিত হয়। বিস্ময়কর এই ভূমিরূপ ২৭ কোটি বছরেরও বেশি প্রাচীন। চিনের কুনমিং থেকে বাসে এই স্থানে আসা যায়। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক এসে ভিড় জমান। ফলে অনেক হোটেলও গড়ে উঠেছে।
কীভাবে তৈরি হলো এই প্রস্তর অরণ্য? প্রস্তর অরণ্যের সৃষ্টি নিয়ে একাধিক মতবাদ রয়েছে। এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের কাছে এক সুন্দরীর অপূর্ণ ভালোবাসার সাক্ষী এই অরণ্য। অশিমা নামে ওই তরুণীর ভালোবাসা নাকি পরিণতি পায়নি। তাকে অভিশাপ দিয়ে পাথর করে দেওয়া হয়েছিলো। সেই দুঃখেই নাকি বাকি সব গাছ পাথর হয়ে যায়। তার সেই করুণ কাহিনীর সাক্ষী এই প্রস্তর-অরণ্য।
তবে ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এক সময় গভীর জলাশয় ছিলো এখানে। জলাশয়ের নীচে নিমজ্জিত ছিলো এই পাথরগুলো। ক্রমে পানির স্তর নামতে শুরু করলে জঙ্গলের মতো পাথরগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এ রকম আকার ধারণ করেছে সেগুলো।
প্রতি বছর ষষ্ঠ চন্দ্রমাসের ২৪ তারিখে এই এলাকার বাসিন্দারা এক বিশেষ উৎসব পালন করেন। তাদের লোকনৃত্য এবং কুস্তি পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। চীন ছাড়াও তুরস্কে পাথরের এমন বিস্ময়কর জঙ্গল দেখতে পাওয়া যায়।
তুরস্কের কাপাডোশিয়ায় ওই পাথরের ভিতরে গুহা তৈরি করে এক সময় মানুষ বসবাস করতেন। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
নিউজটি শেয়ার করুন