১৫ বছর পর মোহামেডান রানার্সআপ
ডিপিএলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী
- আপডেট সময় : ০৯:০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
- / 79
শিরোপা আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিককতা। এনামুল হক বিজয়ের সেঞ্চুরিতে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সেটাও পূরণ করল জায়ান্ট আবাহনী লিমিটেড। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের মর্যাদা পাওয়ার পর এই প্রথম অপরাজিত (১৬ ম্যাচে ১৬ জয়, ৩২ পয়েন্ট) চ্যাম্পিয়ন হলো কোনো দল। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৮ উইকেটে ২৩৪ রান করে শাইনপুকুর।
শের-ই-বাংলার আকাশে তখন ঘন কালো মেঘ। খেলা কি তবে বৃষ্টি আইনে যাবে? না তা হয়নি। বৃষ্টি যখন আসি আসি করছে, ঠিক তখনই আনামুল হককে ডিপ মিড উইকেটে উড়িয়ে বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেললেন এনামুল হক বিজয়। এক প্রান্ত আগলে রেখে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে আবাহনী লিমিটেডকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করে মাঠ ছাড়লেন এই ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
জয় নিশ্চিতের পরও বিজয়দের বিজয়োল্লাস ছিল না বললেই চলে। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্টে আকাশী-নীল জার্সিদের এটি ২৩তম শিরোপা। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির একদল ভক্ত সকাল থেকেই মুখরিত রাখে শের-ই-বাংলা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমাগমও বাড়ে। বৃষ্টির ভয় উপেক্ষা করে দর্শকরাই উল্লাসে মেতেছিলেন।
সোমবার (৬ মে) হোম অব ক্রিকেটে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৩৪ রান করে শাইনপুকুর। তাড়া করতে নেমে ৪৬.১ ওভারে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে আবাহনী। বিজয় ১১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ১২০ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায়। সেঞ্চুরির দেখা পান ১১৪ বলে। তার সঙ্গে জারিফ রহমান অপরাজিত ছিলেন ১১ রানে।
শুরুতে পরপর দুই বলে আবাহনী দুই ওপেনারকে হারায়। সপ্তম ওভারের শেষ বলে ৭ রানে থাকা নাঈম শেখকে ফেরান মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ ইলিয়াসের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির হোসেন (১৪)।
দুই ওপেনার ফিরলে তিনে নামা এনামুল হক বিজয় প্রতিরোধ গড়েন মাজহারুল ইসলাম সাগরকে নিয়ে। ২৩ রানে সাগরের আউটে ভাঙে ৬৫ রানের জুটি। এক প্রান্তে আগলে বিজয়ের সঙ্গী হন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। দুজনে এগোচ্ছিলেন ভালোভাবে। ২৯ রানে মোসাদ্দেকের বিদায়ে ভাঙে ফিফটির জুটি।
বিজয়ের সঙ্গী এবার নাহিদুল ইসলাম। ২১ রানে নাহিদুলের আউটে এই জুটিও লম্বা হয়নি। এরপর ক্রিজে এসে ফেরেন রাকিবুল হাসান (১)। শেষে জারিফ রহমান দারুণ সঙ্গ দেন বিজয়কে। আবাহনীকে আর উইকেট হারাতে হয়নি। জারিফকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন সেঞ্চুরিয়ান বিজয়।
এর আগে অমিত হাসান-খালিদ হাসানের ফিফটিতে ভর করে ২৩৫ রানের লক্ষ্য দিতে পারে শাইনপুকুর। অধিনায়ক অমিত সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন। ১১৬ বলে ৫টি চারের মারে ইনিংসটি সাজিয়েছেন অমিত। ৫৮ বলে ৫৮ রান করেন খালিদ। তার ইনিংসে চারের মার ছিল ৮টি আর ছয়ের মার ১টি।
এ ছাড়া ইরফান শুক্কুর ৩৩ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন। ৪৯ বলে তিনি এই রান করেন। আর কোনো ব্যাটার বিশের বেশি রান করতে পারেননি। শেষ দিকে ১৪ রান করেন আনামুল হক।
আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রাকিবুল হাসান। ২টি করে উইকেট নেন আব্দুল রওশান-মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ১টি করে উইকেট জমা হয় নাহিদুল ইসলামের ঝুলিতে।
১৫ বছর পর মোহামেডান রানার্সআপ
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে লম্ব সময় ধরে শিরোপার দেখা পায় না ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান। সর্বশেষ শিরোপাই জিতেছে ২০০৭-০৮ মৌসুমে! পরের বছর ২০০৮-০৯ মৌসুমে হয় রানার্সআপ! তার পর ১৫ বছর কেটে গেলেও শিরোপার দেখা পায়নি দলটি। তবে দীর্ঘ বিরতির পর এবার রানার্সআপ হওয়ার আক্ষেপ ঘুচিয়েছে তারা। সোমবার বিকেএসপিতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ধসিয়ে ৫৩ রানের দারুণ জয়ে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেছে রানার্সআপ হয়ে।
বিকেএসপিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান জমা করে। জবাবে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১২৩ রানের বেশি করতে পারেনি। মোহামেডানের জয়ের নায়ক অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটিংয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭২ বলে ৪৪ রানের পর বোলিংয়ে ২৪ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন।
সব মিলিয়ে মোহামেডান রাউন্ড রবিন লিগে ১১ ম্যাচে ৮ জয়ের পর সুপার লিগে ৫ ম্যাচে ৪ জয় পেয়েছে। লিগে আবাহনীর পয়েন্ট ৩২। মোহামেডানের ২৪।
লিগের শেষ ম্যাচে মোহামেডানের ব্যাটিং তেমন ভালো হয়নি। রনি তালুকদার ৩৯ রানে থেমে যান। ভালো করেননি ইমরুল। ১১ বলে ৯ রান করেন মোহামেডানের অধিনায়ক। এছাড়া পুরো আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন করেন ৬ রান। সব মিলিয়ে শীর্ষে থাকা মাহিদুলের রান ৬৪৭। ১৬ ইনিংসে ৪৬.২১ গড়ে রান করেছেণ ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মিরাজ দলের হাল ধরলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ওয়াসি সিদ্দিকীর বলে আউট হন ৪৪ রানে। শেষ দিকে নাঈম হাসানের ২২ রানে মোহামেডান বলার মতো পুঁজি পায়।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকী ৪২ রানে ৪ উইকেট নেন। ৩ উইকেট পেয়েছেন হাবিব মেহেদী।
লক্ষ্য তাড়ায় গাজী গ্রুপের ব্যাটিং ছিল একেবারেই হতশ্রী। আসা-যাওয়ার মিছিলে লেগে ছিল তাদের ব্যাটসম্যানরা। সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন আটে নামা মাসুম খান টুটুল। এছাড়া বিশের ঘর পেরিয়েছেন মেহেদী মারুফ (২৩) ও প্রীতম কুমার (২৩)।
মোহামেডানের হয়ে নাঈম হাসান ২৭ রানে ৩ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন নাসুম আহমেদ, মিরাজ ও মুশফিক হাসান।
নিউজটি শেয়ার করুন