আইপিএলে ৫৪৯ রানের রেকর্ডময় ম্যাচে বেঙ্গালুরুকে হারাল হায়দরাবাদ
- আপডেট সময় : ১২:৩৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
- / 79
৫৪৯ রানের রানবন্যার ম্যাচের দেখা মিলল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। গতকাল হায়দরাবাদ এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর মধ্যকার ম্যাচটিতে ব্যাটসম্যানদের দাপটের কাছে অসহায় ছিল দুইদলের বোলাররা। রানবন্যার এই ম্যাচটিতে হয়েছে বেশকিছু রেকর্ড।
আইপিএলের ম্যাচে ফের ঘরের মাঠে হারের মুখ দেখতে হল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে। চিন্নাস্বামীর হাই-স্কোরিং ম্যাচে এবার আরসিবি পরাজিত হয় সানরাইজার্স হায়দরবাদের কাছে। আরসিবি রান তাড়া করতে নেমে আড়ইশো রানের গণ্ডি টপকেও হারের মুখ দেখে। আসলে সানরাইজার্স শুরুতে ব্যাট করে আরসিবির সামনে এত বড় রানের লক্ষ্যমাত্রা ঝুলিয়ে দেয়, যা টপকানো সম্ভব হয়নি বেঙ্গালুরুর পক্ষে।
ট্রাভিস হেড বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে আইপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি করেন, যা আইপিএল ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম। সঙ্গে বাকিদের অবদানে ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় হাল না ছেড়ে লড়াই করল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তাতে রান উৎসবের ম্যাচটি জায়গা করে নিল রেকর্ডের বিভিন্ন পাতায়।
গতকাল সোমবার চিন্নাস্বামী জমজমাট লড়াইয়ে বেঙ্গালুরুকে ২৫ রানে হারায় হায়দরাবাদ। ২৮৭ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকদের তারা থামিয়ে দেয় ২৬২ রানে। হায়দরাবাদের এই রান আইপিএলে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। চলতি আসরেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ২৭৭ রান করে বেঙ্গালুরুর ১০ বছর পুরোনো ২৬৩ রানের রেকর্ড ভাঙে তারা। এবার নিজেদের রেকর্ডই ভাঙল দলটি।ৎ
বেঙ্গালুরু সম্ভাবনা জাগিয়েছিল রান তাড়ায় অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা না হলেও তাদের আড়াইশ ছাড়ানো রানে রেকর্ডের পাঠায় উঠে গেছে এই ম্যাচ। ম্যাচটিতে রান হয়েছে ৫৪৯। আইপিএল তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতেও এটাই এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান। আগের রেকর্ড ছিল ৫২৩ রানের; চলতি আসরেই হায়দরাবাদ ও মুম্বাইয়ের ম্যাচে হয়েছিল সেটি। এই দুইবারই আইপিএল ম্যাচে দেখা গেল পাঁচশ ছাড়ানো রান।
আইপিএলে এই প্রথম এক ম্যাচে দুই দলই করল আড়াইশ ছাড়ানো রান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এমন ঘটনা দেখে গেছে আর কেবল দুইবার। দুই দলের ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবে এই ম্যাচে হয়েছে ছক্কা বৃষ্টি। হায়দরাবাদ তাদের ইনিংসে মেরেছে ২২টি ছক্কা, আইপিএলে যা সর্বোচ্চ। পরে বেঙ্গালুরু মেরেছে ১৬টি। তাতে স্বীকৃতি টি-টোয়েন্টি ফের দেখা গেল ৩৮ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড। মুম্বাই ও হায়দরাবাদ ম্যাচেও হয়েছিল ৩৮ ছক্কা।
দুই দল মিলিয়ে এই ম্যাচে চার হয়েছে মোট ৪৩টি। এতে ম্যাচে মোট বাউন্ডারি সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১টি। টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে বেশি বাউন্ডারি হয়নি আর কোনো ম্যাচে। ঠিক ৮১টি বাউন্ডারি এসেছিল গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে। এদিন বাউন্ডারি থেকে রান এসেছে ৪০০। আইপিএল তো বটেই, টি-টোয়েন্টিতে চার-ছক্কায় এই প্রথম চারশ রান দেখল কোনো ম্যাচ। আগের রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৩৯৪ রান।
হেডের শতকের পাশাপাশি মারকাটারি অর্ধশতরান করেন হেনরিখ ক্লাসেন। হেড ৩টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ২০ বলে ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিনি শতরানের গণ্ডি টপকান ৯টি চার ও ৮টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ৩৯ বলে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে এটি আইপিএলের ইতিহাসের দ্রুততম শতরান। সার্বিকভাবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়র লিগের ইতিহাসে এটি চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি। হেড শেষমেশ ৪১ বলে ১০২ রান করে আউট হন।
ক্লাসেন ২টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ২৩ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিনি ২টি চার ও ৭টি ছক্কার সাহায্যে ৩১ বলে ৬৭ রান করে মাঠ ছাড়েন। এছাড়া ২২ বলে ৩৪ রান করেন অভিষেক শর্মা। মারেন ২টি চার ও ২টি ছক্কা। ১৭ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন এডেন মার্করাম। তিনিও ২টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ১০ বলে ৩৭ রান করে নট-আউট থাকেন আবদুল সামাদ।
আরসিবির হয়ে ৪ ওভারে ৫২ রান খরচ করে ২টি উইকেট সংগ্রহ করেন লকি ফার্গুসন। ৪ ওভারে ৬৮ রান খরচ করে ১টি উইকেট নেন রিস টপলি। ৪ ওভারে ৫১ রান খরচ করেন যশ দয়াল। কোনও উইকেট পাননি তিনি। বিজয়কুমার বৈশাক ৪ ওভারে ৬৪ রান খরচ করেও উইকেটহীন থাকেন।
জবাব দিতে নেমে ধ্বংসাত্মক মেজাজে ইনিংস শুরু করে আরসিবি। তারা পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৭৯ রান সংগ্রহ করে নেয়। শেষে কোহলি ২০ বলে ৪২ রান করে আউট হন। তিনি ৬টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। ২৮ বলে ৬২ রান করে সাজঘরে ফেরেন ফ্যাফ ডু’প্লেসি। তিনি ৭টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন।
উইল জ্যাকস ৭, রজত পতিদার ৯ ও সৌরভ চৌহান ০ রানে আউট হন। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দীনেশ কার্তিক ৪টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ২৩ বলে ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিনি শেষমেশ ৩৫ বলে ৮৩ রানের ধ্বংসাত্মক ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন। মারেন ৫টি চার ও ৭টি ছক্কা।
এছাড়া মহীপাল লোমরোর ২টি ছক্কার সাহায্যে ১১ বলে ১৯ রান করেন। ৫টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১৪ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন অনূজ রাওয়াত। আরিসিবি নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৬২ রান সংগ্রহ করে। ২৫ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জেতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সুতরাং, চিন্নাস্বামীতে এদিন ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে সাকুল্যে ৫৪৯ রান ওঠে, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশ্বরেকর্ড।
সানরাইজার্স দলনায়ক প্যাট কামিন্স ৪ ওভারে ৪৩ রান খরচ করে ৩টি উইকেট দখল করেন। ৪ ওভারে ৪৬ রান খরচ করে ২টি উইকেট নেন মায়াঙ্ক মার্কান্ডে। ম্যাচের সেরা হন ট্রাভিস হেড।
নিউজটি শেয়ার করুন