ঢাকা ১২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

লিভারপুলে জেন–জিদের ভিড়েও ‘কিং’ সেই সালাহই

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:০১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
  • / 17

সালাহর আরেকটি ট্রেডমার্ক উদ্‌যাপন : এক্স

ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

আকাশ ভেদ করে চলে যাচ্ছে একটি তির। একটু আগে লিভারপুল রোডের অ্যানফিল্ড স্টেডিয়াম থেকে যা ছুড়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। সেই তির ছোড়ার দৃশ্যে বজ্রধ্বনিতে ফেটে পড়ল পুরো গ্যালারি। পুরো দৃশ্যটিতে তির ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গি এবং দর্শকদের উল্লাসটাই শুধু বাস্তব। বাকিটা কল্পনা।

প্রায় ৮ মৌসুম ধরে সালাহ যা করে চলেছেন, তা তো অনেক আগেই মিটিয়ে দিয়েছে কল্পনা ও বাস্তবতার পার্থক্য। চলতি মৌসুমে আলোচনায় থাকা ‘বো অ্যান্ড অ্যারো’ উদ্‌যাপনও সালাহর নিজস্ব জগতে তেমনই একটি সংযোজন।

অথচ লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপ যখন এএস রোমা থেকে সালাহকে নিয়ে এলেন, তখন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছিলেন অনেকে। ভাবটা এমন ছিল যে আরে এটা তো বাতিল গাড়ি, যাকে জোসে মরিনিওই চেলসিতে চালাতে পারেননি।

ক্লপ একে নিয়ে কীভাবে শিরোপা জিতবেন! এমনকি প্রথম মৌসুমে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে গোটা ইংল্যান্ডকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার পরও অনেকে বলছিলেন, ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার।’

সেবার বিরোধী শিবির থেকে ছড়িয়ে পড়া এ কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এমন কথার বিপরীতে সালাহ মুখে লেগে থাকা হাসিটাতে করুণার দৃষ্টি মিশিয়ে ছুড়ে দিয়েছিলেন পাল্টা তির। কে জানত, সেবারের এক মৌসুমের বিস্ময় পরবর্তীকালে হয়ে উঠবেন প্রতি মৌসুমের বিস্ময়।

২০১৭ সালে লিভারপুলে আসার পর থেকে মৌসুমের পর মৌসুমে সালাহর উদ্‌যাপনের রূপটুকুই শুধু বদলেছে। মাঠের সালাহ যেমন ছিলেন, তেমনই রয়ে গেলেন। মিসরের অখ্যাত এক তরুণ থেকেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন ‘মিসরের রাজা’। লিভারপুল শহরের ‘ডার্লিং বয়’।

প্রথম মৌসুমের পর দ্বিতীয় মৌসুমেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর থেমে গিয়েছিল ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’ রব। কিন্তু সালাহকে নিয়ে কাটাছেঁড়া থামেনি কখনো। এর পেছনে আফ্রিকান মুসলিম হওয়াটাও অবশ্য একটা বড় কারণ ছিল।

কিন্তু সেই সব সমালোচনাকে কখনো বুদ্ধের ভঙ্গিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে ‘ট্রি পোজ’ উদ্‌যাপনে আবার কখনো কাল্পনিক তির ছুড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন সালাহ। যদিও এসব মোকাবিলায় সালাহর ব্রহ্মাস্ত্র ছিল তাঁর পারফরম্যান্স। ম্যাচের পর ম্যাচে মৌসুমের পর মৌসুমে তাঁকে প্রাসঙ্গিক রেখেছে মাঠের নৈপুণ্য।

চলতি মৌসুমের কথাই ধরা যাক। ক্লপের বিদায়ের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, সালাহও হয়তো ক্লাব ছেড়ে যাবেন। বিশেষ করে মৌসুমের শেষ দিকে ক্লপের সঙ্গে সাইডলাইন-বিতর্কে জড়িয়ে সামলোচিত হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়েছিল এ গুঞ্জন।

নতুন কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়েও ছিল আলোচনা। কিন্তু সবাইকে চুপ করিয়ে সালাহ যেন আরও ধারালো ও তীব্র। এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি গোলে অবদানেও সবার ওপরে আছে তাঁর নাম।

যেখানে ৮ গোলের পাশাপাশি গোলে সহায়তা আছে ৬টিতেও (১৪ গোল)। এ তালিকায় ১২ গোলে অবদান নিয়ে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন কোল পালমার ও আর্লিং হলান্ড। হলান্ডের অবশ্য সব কটিই গোল, কোনো সহায়তা নেই।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়েও এরই মধ্যে গোল অবদান রাখায়ও দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছেন এই ফরোয়ার্ড, যেখানে ১০ গোলের সঙ্গে আছে ১০টি সহায়তাও।

ক্লপের বিদায়ের পর নতুন কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে সালাহ কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়েও ছিল আলোচনা। কিন্তু সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন ‘মিসরের রাজা’ খ্যাত এই ফরোয়ার্ড।

প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ৪ ম্যাচে ৪ গোল করার পাশাপাশি ২টি সহায়তাও আছে তাঁর। সর্বশেষ গতকাল রাতে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে জয়ের পথে প্রথম গোল দারউইন নুনিয়েজকে সহায়তা করেছেন এবং দ্বিতীয় গোলটি নিজে করেছেন ট্রেডমার্ক শটে।

চলতি মৌসুমে লিভারপুলের এমন চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সের নৈপথ্যে নায়কও তাই সালাহ। এখনো তিনি ক্লাবটির আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা।

গত আট বছরে লিভারপুলের যুগবদল হয়ে গেছে। ক্লপ তো বিদায় নিয়েছেনই, তার আগে ক্লাব ছেড়েছিলেন সাদিও মানে ও রবার্তোা ফিরমিনোও। এই দুজনের বিদায়ে ভেঙে গেছে আক্রমণভাগের ত্রিফলাও।

এর মধ্যে দিয়েগো জোতা, লুইস দিয়াজ, কোডি গাকপো, নুনিয়েজরা অ্যানফিল্ডের ড্রেসিংরুমে এসেছেন। বয়সের বিচারে যাঁরা প্রায় সবাই জেন-জি। কিন্তু সবার ভিড়েও লিভারপুলের কিং এখনো সেই সালাহই, যিনি এখন লিভারপুলের সমার্থকই হয়ে উঠেছেন বলা যায়।

শুধু এটুকুই নয়, এরই মধ্যে লিভারপুলের সর্বকালের সেরা কি না, সেই বিতর্কও উসকে দিয়েছেন এই গোলমেশিন। পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগে সর্বকালের সেরার তালিকায় থাকার মতো অর্জনও যুক্ত হয়েছে তাঁর নামের পাশে।

চলতি মৌসুমেও লিভারপুলের সাফল্য ও ব্যর্থতার অনেকটা নির্ভর করছে সালাহর ধারাবাহিকতার ওপর। যেভাবে শুরু করেছেন, সেটি যদি ধরে রাখতে পারেন, তবে একাধিক শিরোপায় হাত রেখে মৌসুম শেষ করা তাঁর পক্ষে একেবারেই কঠিন নয়।

এ তো গেল মাঠের কথা, মাঠের বাইরেও সালাহ এক বিপ্লবের নাম। মিসরের প্রাচীন শহর নাগরিক থেকে ১৫ ঘণ্টায় ৫-৬টি মাইক্রোবাস বদলে ৯০ মাইল পাড়ি দিয়ে অনুশীলন করতে যাওয়া ছেলেটিই বদলে দিয়েছেন ইংরেজদের চিন্তার জগৎ।

২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, সালাহর কারণে লিভারপুল অঞ্চলে ‘ইসলামোফোবিয়া’ (ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে; যেখানে ‘হেট ক্রাইম’ (ঘৃণাজনিত অপরাধ) ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ কমার কথা বলা হয়। সালাহর পারফরম্যান্সের পাশাপাশি মাঠের বাইরে তাঁর আচরণও এতে নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রেখেছে।

এরই মধ্যে ৩২ পেরিয়েছেন সালাহ, গোধূলিবেলাও পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। কিন্তু থামাথামি সালাহর জন্য এখনো দূরের বাতিঘর। গতি ও আগ্রাসনে তরুণ ‘জেন-জি’ ফুটবলাররাও অনেক সময় পাল্লা দিতে পারেন না সালাহর সঙ্গে।

বরং বয়স যেন আরও ক্ষুরধার করছে তাঁকে, মাঠে নামলেই সুবাস ছড়াচ্ছেন পুরোনো ওয়াইনের মতো। এই সুবাস সালাহ আরও কত দিন ধরে রাখতে পারেন, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

লিভারপুলে জেন–জিদের ভিড়েও ‘কিং’ সেই সালাহই

আপডেট সময় : ০১:০১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

 

আকাশ ভেদ করে চলে যাচ্ছে একটি তির। একটু আগে লিভারপুল রোডের অ্যানফিল্ড স্টেডিয়াম থেকে যা ছুড়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। সেই তির ছোড়ার দৃশ্যে বজ্রধ্বনিতে ফেটে পড়ল পুরো গ্যালারি। পুরো দৃশ্যটিতে তির ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গি এবং দর্শকদের উল্লাসটাই শুধু বাস্তব। বাকিটা কল্পনা।

প্রায় ৮ মৌসুম ধরে সালাহ যা করে চলেছেন, তা তো অনেক আগেই মিটিয়ে দিয়েছে কল্পনা ও বাস্তবতার পার্থক্য। চলতি মৌসুমে আলোচনায় থাকা ‘বো অ্যান্ড অ্যারো’ উদ্‌যাপনও সালাহর নিজস্ব জগতে তেমনই একটি সংযোজন।

অথচ লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপ যখন এএস রোমা থেকে সালাহকে নিয়ে এলেন, তখন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছিলেন অনেকে। ভাবটা এমন ছিল যে আরে এটা তো বাতিল গাড়ি, যাকে জোসে মরিনিওই চেলসিতে চালাতে পারেননি।

ক্লপ একে নিয়ে কীভাবে শিরোপা জিতবেন! এমনকি প্রথম মৌসুমে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে গোটা ইংল্যান্ডকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার পরও অনেকে বলছিলেন, ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার।’

সেবার বিরোধী শিবির থেকে ছড়িয়ে পড়া এ কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এমন কথার বিপরীতে সালাহ মুখে লেগে থাকা হাসিটাতে করুণার দৃষ্টি মিশিয়ে ছুড়ে দিয়েছিলেন পাল্টা তির। কে জানত, সেবারের এক মৌসুমের বিস্ময় পরবর্তীকালে হয়ে উঠবেন প্রতি মৌসুমের বিস্ময়।

২০১৭ সালে লিভারপুলে আসার পর থেকে মৌসুমের পর মৌসুমে সালাহর উদ্‌যাপনের রূপটুকুই শুধু বদলেছে। মাঠের সালাহ যেমন ছিলেন, তেমনই রয়ে গেলেন। মিসরের অখ্যাত এক তরুণ থেকেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন ‘মিসরের রাজা’। লিভারপুল শহরের ‘ডার্লিং বয়’।

প্রথম মৌসুমের পর দ্বিতীয় মৌসুমেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর থেমে গিয়েছিল ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’ রব। কিন্তু সালাহকে নিয়ে কাটাছেঁড়া থামেনি কখনো। এর পেছনে আফ্রিকান মুসলিম হওয়াটাও অবশ্য একটা বড় কারণ ছিল।

কিন্তু সেই সব সমালোচনাকে কখনো বুদ্ধের ভঙ্গিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে ‘ট্রি পোজ’ উদ্‌যাপনে আবার কখনো কাল্পনিক তির ছুড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন সালাহ। যদিও এসব মোকাবিলায় সালাহর ব্রহ্মাস্ত্র ছিল তাঁর পারফরম্যান্স। ম্যাচের পর ম্যাচে মৌসুমের পর মৌসুমে তাঁকে প্রাসঙ্গিক রেখেছে মাঠের নৈপুণ্য।

চলতি মৌসুমের কথাই ধরা যাক। ক্লপের বিদায়ের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, সালাহও হয়তো ক্লাব ছেড়ে যাবেন। বিশেষ করে মৌসুমের শেষ দিকে ক্লপের সঙ্গে সাইডলাইন-বিতর্কে জড়িয়ে সামলোচিত হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়েছিল এ গুঞ্জন।

নতুন কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়েও ছিল আলোচনা। কিন্তু সবাইকে চুপ করিয়ে সালাহ যেন আরও ধারালো ও তীব্র। এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি গোলে অবদানেও সবার ওপরে আছে তাঁর নাম।

যেখানে ৮ গোলের পাশাপাশি গোলে সহায়তা আছে ৬টিতেও (১৪ গোল)। এ তালিকায় ১২ গোলে অবদান নিয়ে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন কোল পালমার ও আর্লিং হলান্ড। হলান্ডের অবশ্য সব কটিই গোল, কোনো সহায়তা নেই।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়েও এরই মধ্যে গোল অবদান রাখায়ও দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছেন এই ফরোয়ার্ড, যেখানে ১০ গোলের সঙ্গে আছে ১০টি সহায়তাও।

ক্লপের বিদায়ের পর নতুন কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে সালাহ কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়েও ছিল আলোচনা। কিন্তু সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন ‘মিসরের রাজা’ খ্যাত এই ফরোয়ার্ড।

প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ৪ ম্যাচে ৪ গোল করার পাশাপাশি ২টি সহায়তাও আছে তাঁর। সর্বশেষ গতকাল রাতে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে জয়ের পথে প্রথম গোল দারউইন নুনিয়েজকে সহায়তা করেছেন এবং দ্বিতীয় গোলটি নিজে করেছেন ট্রেডমার্ক শটে।

চলতি মৌসুমে লিভারপুলের এমন চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সের নৈপথ্যে নায়কও তাই সালাহ। এখনো তিনি ক্লাবটির আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা।

গত আট বছরে লিভারপুলের যুগবদল হয়ে গেছে। ক্লপ তো বিদায় নিয়েছেনই, তার আগে ক্লাব ছেড়েছিলেন সাদিও মানে ও রবার্তোা ফিরমিনোও। এই দুজনের বিদায়ে ভেঙে গেছে আক্রমণভাগের ত্রিফলাও।

এর মধ্যে দিয়েগো জোতা, লুইস দিয়াজ, কোডি গাকপো, নুনিয়েজরা অ্যানফিল্ডের ড্রেসিংরুমে এসেছেন। বয়সের বিচারে যাঁরা প্রায় সবাই জেন-জি। কিন্তু সবার ভিড়েও লিভারপুলের কিং এখনো সেই সালাহই, যিনি এখন লিভারপুলের সমার্থকই হয়ে উঠেছেন বলা যায়।

শুধু এটুকুই নয়, এরই মধ্যে লিভারপুলের সর্বকালের সেরা কি না, সেই বিতর্কও উসকে দিয়েছেন এই গোলমেশিন। পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগে সর্বকালের সেরার তালিকায় থাকার মতো অর্জনও যুক্ত হয়েছে তাঁর নামের পাশে।

চলতি মৌসুমেও লিভারপুলের সাফল্য ও ব্যর্থতার অনেকটা নির্ভর করছে সালাহর ধারাবাহিকতার ওপর। যেভাবে শুরু করেছেন, সেটি যদি ধরে রাখতে পারেন, তবে একাধিক শিরোপায় হাত রেখে মৌসুম শেষ করা তাঁর পক্ষে একেবারেই কঠিন নয়।

এ তো গেল মাঠের কথা, মাঠের বাইরেও সালাহ এক বিপ্লবের নাম। মিসরের প্রাচীন শহর নাগরিক থেকে ১৫ ঘণ্টায় ৫-৬টি মাইক্রোবাস বদলে ৯০ মাইল পাড়ি দিয়ে অনুশীলন করতে যাওয়া ছেলেটিই বদলে দিয়েছেন ইংরেজদের চিন্তার জগৎ।

২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, সালাহর কারণে লিভারপুল অঞ্চলে ‘ইসলামোফোবিয়া’ (ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে; যেখানে ‘হেট ক্রাইম’ (ঘৃণাজনিত অপরাধ) ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ কমার কথা বলা হয়। সালাহর পারফরম্যান্সের পাশাপাশি মাঠের বাইরে তাঁর আচরণও এতে নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রেখেছে।

এরই মধ্যে ৩২ পেরিয়েছেন সালাহ, গোধূলিবেলাও পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। কিন্তু থামাথামি সালাহর জন্য এখনো দূরের বাতিঘর। গতি ও আগ্রাসনে তরুণ ‘জেন-জি’ ফুটবলাররাও অনেক সময় পাল্লা দিতে পারেন না সালাহর সঙ্গে।

বরং বয়স যেন আরও ক্ষুরধার করছে তাঁকে, মাঠে নামলেই সুবাস ছড়াচ্ছেন পুরোনো ওয়াইনের মতো। এই সুবাস সালাহ আরও কত দিন ধরে রাখতে পারেন, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।