বাজেটের বিরুদ্ধে শনিবার বামজোটের বিক্ষোভ
- আপডেট সময় : ০২:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে ‘ধনিক শ্রেণির দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় মেহনতি ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপাবে’ বলে মনে করে বাম দলগুলো। তাই এ বাজেট প্রত্যাখ্যান করে ‘গণমুখী’ বাজেটের দাবিতে শনিবার (৮ জুন) দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বামজোটের নেতারা বলেছেন, ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেটে দেশি বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। এমনিতেই সরকার ঋণের ভারে জর্জরিত। ফলে ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যই বাজেটে বিরাট অংকের ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ৭ ভাগের একভাগ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তারা মনে করেন, ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ করায় এবং খেলাপী ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগে দেউলিয়া হওয়ার পথে। আর্থিক খাতের সংকট নিরসনে বাজেটে কোনও দিকনির্দেশনা নাই। বেকার সমস্যার সমাধান ও কর্মসংস্থানেরও কোনও দিকনির্দেশনা বাজেটে নাই। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি যেখানে প্রায় ১০ শতাংশ সেখানে বর্তমান প্রবৃদ্ধি যে ঋণাত্মক তা আড়াল করে আগামীতে প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ অর্থাৎ বাস্তবে প্রবৃদ্ধি ০.২৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তাও কীভাবে অর্জিত হবে তার কোনও দিক নির্দেশনা নাই।
বাজেটে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য রেশনিং এর জন্য কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্নীতি রোধে কোনও কার্যকর দিক নির্দেশনা নাই বলেও উল্লেখ করেন তারা।
জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ পেশ করার পর এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, এবারের ঘোষিত বাজেট ধনিক শ্রেণির দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় মেহনতি ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপাবে। ফলে গরিব মেরে ধনী পোষার অতীতের ধারা এবারেও বাজেটে অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে এই সংকোচনমূলক বাজেট প্রবৃদ্ধি কমাবে, কিন্তু বেকারত্ব বাড়াবে।
সিপিবির দুই শীর্ষনেতা বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য এখন সময়টা ভালো নয়। অধিকাংশ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে, কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয় বেড়েই চলেছে। সবার কাজের নিশ্চিয়তা নেই। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেবে না। বাজেট বক্তৃতায় মিষ্টি কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে নানা ভাবে কর ও মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটার পথ আরো প্রশস্ত করা হয়েছে।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সংকটের চক্রে ঘূর্ণায়মান দিশাহীন বাজেট। বিগত বছরের অর্থনৈতিক সংকটের কারণ চিহ্নিত করে দূর না করার দিক নির্দেশনা বাজেটে না থাকায় অর্থনীতি সংকটের চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকবে।’
তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অপচয় ও লুণ্ঠনমূলক নীতির দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে কর ও ভ্যাট বৃদ্ধির বাজেট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বহুগুণ বাড়াবে।
‘আইএমএফ-এর পরামর্শ মেনে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বাজেট। বাজেট ছোট হলেও সরকারি ব্যয় কমবে না বরং জনগণের ওপর কর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে আয় বাড়ানোর নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে’ বলেন বজলুর রশীদ।