ঢাকা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

 

পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় নতুন বাংলাদেশের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / 58
ডেইলি আর্থ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের খাতাটা ছিল পুরোই ফাঁকা। ১৩ টেস্টে মুখোমুখি হয়ে মাত্র ১টি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর বাকি ১২টিতেই হারের তিতো স্বাদ পেতে হয়েছিল টাইগারদের।

অবশেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের আক্ষেপ ঘুচেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এবার রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের গর্জন!

চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ড্রাইভিং সিটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে মুলতানের সেই স্মৃতি তাড়া করেছে অনেকটা সময় ধরে। অন্তত মোহাম্মদ রিজওয়ান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত খানিকটা প্রতিরোধ গড়লেও মুলতানের ইনজামাম হতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ফলে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

শনিবার বিকেলের ১ উইকেটের সাথে রোববার সকালের সেশনে ৫ উইকেট। ৬ উইকেট তুলে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই জয়ের সুবাস আনতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বিরতি পরও চলেছে টাইগার বোলাদের দাপট। খুব বেশি সময় নেননি সাকিব-মিরাজ। ১০ উইকেটের জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করেছে নাজমুল হাসান শান্তর দল। জয়ের ভিত গড়তে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস থেকে মিরাজ ৪টি, সাকিব তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে দাপট, রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দুর্দান্ত এই জয় পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটেই লাল-সবুজদের প্রথম জয়। হারের বৃত্ত ভেঙে ঐতিহাসিক জয়ের রোমাঞ্চ এলো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে।

লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনীতে আসেন সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। দুজনে ৩৯ বলেই জয়ে নোঙর করে ফেলেন বাংলাদেশকে। সাদমান ৯ ও জাকির ১৫ রানে অপরাজিত থেকে জয় তুলে আনেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: প্রথম ইনিংস- ৪৪৮/৬(ডিক্লে.) ও দ্বিতীয় ইনিংস-১৪৬
বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংস-৫৬৫ ও দ্বিতীয় ইনিংস-৩০/০ (৬.৩ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।

টেস্টের প্রথমদিনে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মতো ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। পরে খেলা গড়ালে আগে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে তারা ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দ্বিতীয় দিনে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে নেমে ১৬৭.৩ ওভার খেলে ৬৬৫ রান তুলে অলআউট হয়। মুশফিক সর্বোচ্চ ১৯১ রান করেন। ওপেনার সাদমান ৯৩, লোয়ার-মিডলে মিরাজ ৭৭ ও টপঅর্ডারে মুমিনুল করেন ৫০ রান।

প্রথম ইনিংস থেকে বাংলাদেশ লিড নেয় ১১৭ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে পাকিস্তান ১৪৬ রান তুলে অলআউট হয়। টাইগার বোলারদের অব্যাহত দাপটের মুখে কেবল ২৯ রানের লিড নিয়ে ৩০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে স্বাগতিক দল। লাল-সবুজের দল যা টপকে যায় ১০ উইকেট হাতে রেখেই।

রোববার ম্যাচের শেষদিনে পাকিস্তান নেমেছিল ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে। যোগ করতে পেরেছে আর ১২৩ রান। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসান ৩ উইকেট, আগের ইনিংসে ১ উইকেট নেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ২টি করে উইকেট নেয়া শরিফুল ও হাসান যথাক্রমে ১টি করে উইকেট, আর আগের ইনিংসে কোনো উইকেট না পাওয়া নাহিদ রানা ১ উইকেট নিয়েছেন।

টাইগাররা পঞ্চম দিনে সকালের সেশনে ৫ উইকেট তুলে নিলে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান, আগেরদিন বিকেলে তারা হারিয়েছিল ১ উইকেট। ১১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করা দলটি লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে ১০৮ রান।

বিরতি থেকে ফিরেই শাহিন আফ্রিদিকে ফেরান মিরাজ। সাকিব সাজঘরে পাঠান নাসিম শাহকে। লড়তে থাকা রিজওয়ানকে ৫১ রানে থাকার সময় ফেরান মিরাজ। অফস্পিন তারকাই আলীকে ফিরিয়ে স্বাগতিক লাইনআপ গুটিয়ে দেন।

সকালের সেশনে মোড় ঘুরে যায় টাইগারদের ঘূর্ণিতে। ড্রয়ের দিকে আগাতে থাকা ম্যাচ ফলের পথে ঘুরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ লাগাম ধরে রাখে শক্তভাবে। থিতু হয়ে যাওয়া আবদুল্লাহ শফিককে ৩৭ রানে ফেরান সাকিব, সাদমানের ক্যাচে। পরের ওভারে মিরাজের প্রথম বলে শূন্য রানে ফেনের আগা সালমান।

নাহিদ রানার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাবর আজম। শূন্যতে জীবন পাওয়া তারকা করে যান ২২ রান। স্বাগতিকরা ৬৬ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পরে।

সাকিব আঘাত হানেন ১ রানে থাকা সৌদ শাকিলকে ফিরিয়ে, ৬৭ রানের সময়। পরে বাঁহাতি স্পিনার আরও উইকেট তুলতে থাকেন মুখে চওড়া হাসি ছড়িয়ে।

তার আগে দিনের খেলা শুরু হতেই সাফল্য আনে বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের হাত ধরে দিনের দ্বিতীয় ওভারে আসে উইকেট। রিভিউ নিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক শান মাসুদকে ফেরান ডানহাতি পেসার। উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসে ক্যাচ দেয়ার আগে করে যান ১৪ রান।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

 

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

 

ট্যাগস :

 

 

পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় নতুন বাংলাদেশের

আপডেট সময় : ১০:০৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

 

পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের খাতাটা ছিল পুরোই ফাঁকা। ১৩ টেস্টে মুখোমুখি হয়ে মাত্র ১টি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর বাকি ১২টিতেই হারের তিতো স্বাদ পেতে হয়েছিল টাইগারদের।

অবশেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের আক্ষেপ ঘুচেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এবার রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের গর্জন!

চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ড্রাইভিং সিটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে মুলতানের সেই স্মৃতি তাড়া করেছে অনেকটা সময় ধরে। অন্তত মোহাম্মদ রিজওয়ান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত খানিকটা প্রতিরোধ গড়লেও মুলতানের ইনজামাম হতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ফলে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

শনিবার বিকেলের ১ উইকেটের সাথে রোববার সকালের সেশনে ৫ উইকেট। ৬ উইকেট তুলে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই জয়ের সুবাস আনতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বিরতি পরও চলেছে টাইগার বোলাদের দাপট। খুব বেশি সময় নেননি সাকিব-মিরাজ। ১০ উইকেটের জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করেছে নাজমুল হাসান শান্তর দল। জয়ের ভিত গড়তে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস থেকে মিরাজ ৪টি, সাকিব তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে দাপট, রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দুর্দান্ত এই জয় পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটেই লাল-সবুজদের প্রথম জয়। হারের বৃত্ত ভেঙে ঐতিহাসিক জয়ের রোমাঞ্চ এলো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে।

লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনীতে আসেন সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। দুজনে ৩৯ বলেই জয়ে নোঙর করে ফেলেন বাংলাদেশকে। সাদমান ৯ ও জাকির ১৫ রানে অপরাজিত থেকে জয় তুলে আনেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: প্রথম ইনিংস- ৪৪৮/৬(ডিক্লে.) ও দ্বিতীয় ইনিংস-১৪৬
বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংস-৫৬৫ ও দ্বিতীয় ইনিংস-৩০/০ (৬.৩ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।

টেস্টের প্রথমদিনে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মতো ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। পরে খেলা গড়ালে আগে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে তারা ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দ্বিতীয় দিনে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে নেমে ১৬৭.৩ ওভার খেলে ৬৬৫ রান তুলে অলআউট হয়। মুশফিক সর্বোচ্চ ১৯১ রান করেন। ওপেনার সাদমান ৯৩, লোয়ার-মিডলে মিরাজ ৭৭ ও টপঅর্ডারে মুমিনুল করেন ৫০ রান।

প্রথম ইনিংস থেকে বাংলাদেশ লিড নেয় ১১৭ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে পাকিস্তান ১৪৬ রান তুলে অলআউট হয়। টাইগার বোলারদের অব্যাহত দাপটের মুখে কেবল ২৯ রানের লিড নিয়ে ৩০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে স্বাগতিক দল। লাল-সবুজের দল যা টপকে যায় ১০ উইকেট হাতে রেখেই।

রোববার ম্যাচের শেষদিনে পাকিস্তান নেমেছিল ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে। যোগ করতে পেরেছে আর ১২৩ রান। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসান ৩ উইকেট, আগের ইনিংসে ১ উইকেট নেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ২টি করে উইকেট নেয়া শরিফুল ও হাসান যথাক্রমে ১টি করে উইকেট, আর আগের ইনিংসে কোনো উইকেট না পাওয়া নাহিদ রানা ১ উইকেট নিয়েছেন।

টাইগাররা পঞ্চম দিনে সকালের সেশনে ৫ উইকেট তুলে নিলে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান, আগেরদিন বিকেলে তারা হারিয়েছিল ১ উইকেট। ১১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করা দলটি লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে ১০৮ রান।

বিরতি থেকে ফিরেই শাহিন আফ্রিদিকে ফেরান মিরাজ। সাকিব সাজঘরে পাঠান নাসিম শাহকে। লড়তে থাকা রিজওয়ানকে ৫১ রানে থাকার সময় ফেরান মিরাজ। অফস্পিন তারকাই আলীকে ফিরিয়ে স্বাগতিক লাইনআপ গুটিয়ে দেন।

সকালের সেশনে মোড় ঘুরে যায় টাইগারদের ঘূর্ণিতে। ড্রয়ের দিকে আগাতে থাকা ম্যাচ ফলের পথে ঘুরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ লাগাম ধরে রাখে শক্তভাবে। থিতু হয়ে যাওয়া আবদুল্লাহ শফিককে ৩৭ রানে ফেরান সাকিব, সাদমানের ক্যাচে। পরের ওভারে মিরাজের প্রথম বলে শূন্য রানে ফেনের আগা সালমান।

নাহিদ রানার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাবর আজম। শূন্যতে জীবন পাওয়া তারকা করে যান ২২ রান। স্বাগতিকরা ৬৬ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পরে।

সাকিব আঘাত হানেন ১ রানে থাকা সৌদ শাকিলকে ফিরিয়ে, ৬৭ রানের সময়। পরে বাঁহাতি স্পিনার আরও উইকেট তুলতে থাকেন মুখে চওড়া হাসি ছড়িয়ে।

তার আগে দিনের খেলা শুরু হতেই সাফল্য আনে বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের হাত ধরে দিনের দ্বিতীয় ওভারে আসে উইকেট। রিভিউ নিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক শান মাসুদকে ফেরান ডানহাতি পেসার। উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসে ক্যাচ দেয়ার আগে করে যান ১৪ রান।